বাংলাদেশি পাসপোর্টে বিড়ম্বনা!

মহামারি করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেক দিন হয় কোথাও যাওয়া হয় না। বাৎসরিক ছুটিগুলো বাসাতে বসে বসেই কাটাতে হয়েছে গত দুই বছর। করোনা কমেছে, ফের ছুটি পেয়েছি ১ মাসের। দেশে না-কি ছেলেমেয়ের কাছে যাব ভাবছিলাম। পরে সিদ্ধান্ত স্থির করলাম মেয়ের কাছে যাব। একটা বিশেষ কাজও আছে ফিরিঙ্গিদের দেশ বিলেতে।

প্রায় দুই মাস হয়েছে ভিসার জন্য আবেদন করেছি। কায়রোস্থ ইউকে ভিসা সেন্টার অফিস পাসপোর্ট জমা রেখে বললো ৬ সপ্তাহ সময় নেবে। তবে পাসপোর্টের জরুরি প্রয়োজন হলে যেন সেন্টারে এসে আবেদন করে পাসপোর্ট নিয়ে যাই। সেটার আর দরকার হয়নি। পাসপোর্ট ও ভিসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ছয় সপ্তাহ চলে গেলো, ভিসা সেন্টার থেকে কোনো মেইল পাচ্ছি না।

এদিকে ছুটিও শুরু হয়েছে, সাত সপ্তাহ পর আমার রাষ্ট্রদূতকে বললাম দুইদিন পর আমার ছুটিতে যাওয়ার কথা। ভিসা পাচ্ছি না এখনও। ইউকে কনসাল অফিসেও যোগাযোগ করতে পারছি না। রাষ্ট্রদূত বললেন আগামীকাল ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার দেখা হবে। ভিসা অ্যাপ্লিকেশন নম্বরটা আমাকে দাও। তার একদিন পর ই-মেইল আসলো ভিসা সেন্টার থেকে পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য। যথারীতি পাসপোর্ট নিয়ে খুলে দেখি আমার চাওয়া অনুযায়ী মাল্টিপল ভিসা দিয়েছে ইউকে ভ্রমণের।

Travelion – Mobile

এবার শুরু হলো সবুজ পাসপোর্টের বিড়ম্বনা! মিশরে আমরা যারা লোকাল এমপ্লয়ি হিসেবে কাজ করি তারা দেশটির বাইরে গেলে কায়রোস্থ ইমিগ্রেশন অফিস থেকে রি-এন্ট্রি ভিসা নিতে হয়। আমরাও মাল্টিপল রি-এন্ট্রি ভিসা চেয়ে আবেদন করলাম।

ইমিগ্রেশন থেকে জানালো বাংলাদেশি সবুজ পাসপোর্টে মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হয় না। তাই, অন টাইম এন্ট্রি ভিসা নিয়ে চলে এলাম।

এয়ারপোর্টে লাগেজ স্ক্যান করলাম। এরপর দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে বোর্ডিং কার্ডের জন্য কাউন্টারে লাগেজ ও পাসপোর্ট দিলাম। আমাদের পাসপোর্ট হাতে নিয়ে বেশ উল্টে-পাল্টে দেখে কর্মকর্তাটি কোনো একজনকে বারবার ফোন করছে আমাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে। কিছুটা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম। কোনো সমস্যা?

ওই কর্মকর্তা বললেন আপনার ভ্রমণ ভিসা, এজন্য ক্রস চেক করতে হবে। কিন্ত যিনি ভিসা চেক করেন তাকে ফোন করে পাচ্ছি না। তাই আপনাদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে স্যার না আসা পর্যন্ত। বললাম, আমি একটি দূতাবাসে কাজ করি। তাছাড়া আমার ভ্রমণের জন্য দূতাবাসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে। আপনি চাইলে দেখতে পারেন।

এই বলে আমার আইডি কার্ড বের করে দিতেই তার সুর পাল্টে গেলো। বললেন, আমি আপনাকে বলছি না। আপনাদের দেশের অনেককে নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় আমাদের। প্রায়শই এই সবুজ পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের নকল ভিসা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। এমন কি অনেক বাংলাদেশি যারা মিশরে বছরের পর বছর বসবাস করছেন তারাও এই দেশ থেকে তার দেশে যাওয়ার সময় দেখা যায় ভিসা নকল। তাই আপনার দেশের পাসপোর্টগুলো আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে চেক করি। মনে কিছু নেবেন না।

সবুজ পাসপোর্টের এই অবমূল্যায়নের জন্য সরকার, আদম ব্যাপারি, আমরা নিজেরা কমবেশি দায়ী। দেশের একপাল বেকার মানুষকে নিয়ে আদম ব্যাপারিরা বছরের পর বছর ধরে অমানবিক ব্যবসায় লিপ্ত। তা নিয়ন্ত্রণে কোনো সরকারই কঠোর পদক্ষেপ নেয় না। মুনাফালোভী কিছু আদম ব্যাপারি বিদেশি দালালদের হাত করে হাজার হাজার যুবককে বিমানে তুলে দিচ্ছেন। কোয়ালিফিকেশনের তোয়াক্কা নেই। সেখানে গিয়ে কি কাজ করবে? বেতন কত হবে? এসবের সুস্পষ্ট এগ্রিমেন্ট নেই।

গন্তব্যে পৌঁছানোর পর অনেকেই প্রতারণার শিকার হন। অনেকেই দেশে ফেরার বদলে অবৈধভাবে থাকা শুরু করেন। লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করেন। ধরা পড়লে নাম খারাপ হয় দেশের। হাজারো শিক্ষিত যুবক নিজেদের বিকশিত করার জন্য সুযোগ খুঁজছে। বিশ্ব বাজারের চাহিদার সঙ্গে তাদের সঠিকভাবে মিলিয়ে দিতে পারলে আমাদের দেশের চেহারাটাই পাল্টে যেত।

লেখক : মিশরপ্রবাসী বাংলাদেশি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!