বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চালুর উদ্যোগ

নির্মাণের ২১ বছর পর বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজ পরিষেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সোমবার (১৫ নভেম্বর) বগুড়ার এরুলিয়ায় বিমানবন্দরটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

যুগ্ম সচিব ইসরাত জাহান পান্না নেতৃত্বে পরিদর্শন দলটি সরেজমিনে বিমানবন্দর এলাকা ঘুরে দেখেন এবং ফ্লাইট চলাচলের সম্ভব্যবতা যাচাই করেন। এ সময় তারা এই অবকাঠামো দিয়ে বিমান চলাচল করা সম্ভব কিনা, বিমান চলাচলে আরও জায়গার প্রয়োজন হবে কিনা সেসব বিষয় খতিয়ে দেখেন।

এ সময় বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সাংসদ রেজাউল করিম প্রতিনিধিদলের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ পরিষেবা চালু করতে তিনি জাতীয় সংসদে বদাবি জানিয়েছিলেন এবং পরে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাব দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন কর্তৃপক্ষ এই কমিটি গঠন করে ।

Travelion – Mobile

কমিটি বগুড়ায় বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চালুর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে সাংসদ রেজাউল করিম দাবি করেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন বেবিচকের উপপরিচালক (এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) মো. মাসুদ রানা, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আমিনুল হাসিব, সহকারী পরিচালক (সিএনএস) প্রশান্ত কুমার সাহা ও সিনিয়র ড্রাফটস-ম্যান কবির হোসেন।

বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চালুর জন্য নব্বইয়ের দশকে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় প্রায় ১১০ একর জায়গাজুড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু লোকসানের আশঙ্কায় সে সময় এ বিমানবন্দরটি আর চালু হয়নি।

বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের পরিবর্তে বর্তমানে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ স্কুলের কার্যক্রম চলছে। শিল্পোদ্যোক্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বগুড়ায় বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন।

২০১৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজ পরিষেবা চালুর দাবি তোলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। এ জন্য আরও ১০০ একর জমি অধিগ্রহণের খসড়া প্রস্তাবসহ প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। রানওয়ে সম্প্রসারণ, তেল সংরক্ষণাগার নির্মাণ এবং যাত্রী ও মালামাল ওঠানো-নামানোসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির জন্য এ জমি চাওয়া হয়। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন না পাওয়ায় রানওয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি জেলা প্রশাসন।

একটি সূত্র জানায়, বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য ১৯৮৭ সালে সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সে সময় তা নানা জটিলতায় আটকে যায়। পরে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে এখানে বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এ জন্য ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ১০৯ দশমিক ৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। ২০০০ সালের দিকে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজ আর ওড়েনি। পরে সেখানে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করা হয়। বর্তমানে সেখানে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করছে।
সূত্র : প্রথম আলো

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!