করোনাকালে বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা পরিস্থিতির উন্নতি হলে যেন আবারও কাজে যোগ দিতে পারেন, সেজন্য সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। সাংসদ বেনজীর আহমেদের তারকাচিহ্নিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশি কর্মীরা যাতে মহামারী পরবর্তী সময়ে আবার নিয়োগ পেতে পারেন, সেজন্যে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই সঙ্কটের মধ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক চাপ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই চাপ প্রশমিত করার জন্য আমাদের সরকার বিভিন্নমুখী কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে। কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে আমি কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যৌথভাবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রযোজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে বলে।”
“এই অন্তবর্তী সময়ে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে আমরা দুঃস্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী কর্মীদের মাঝে প্রায় ১১ কোটি টাকার ওষুধ ও জরুরি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছি”-জানান সরকারপ্রধান।
ফিরে আসা এই কর্মীদের টেকসই পুনর্বাসনের জন্য সরকার সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে এবং যথাযথ সহায়তা দেওয়ার জন্য ডেটাবেইজ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “যারা পুনরায় বিদেশে যেতে সক্ষম, তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের বিদেশে চাকরি ধরে রাখা, নতুন নতুন পেশায় যোগদান, কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগ, উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ফান্ড হবে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ফান্ডের অনুরূপ।”
প্রবাসীদের জন্য নেওয়া নানা উদ্যোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে অনেকে অবৈধ হয়ে গেছেন। আসামি হিসেবে কারাগারে ছিলেন। তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা চলে এসেছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যদি কাজ করতে চায়, গ্রামে কিছু করতে চায়, ঋণের ব্যবস্থা আছে। ২ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। ৪ শতাংশ সুদে টাকা দেওয়া হবে।
মহামারীর মধ্যে চাকরিচ্যুত হয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে বিদেশ থেকে ফেরা কর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দের কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন।
আগের খবর : পাপুল কুয়েতের নাগরিক হলে তাঁর আসন শূন্য হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিদেশে প্রত্যাগত কর্মীদের এবং প্রবাসে করোনায় মৃত কর্মী পরিবারের উপযুক্ত সদস্যদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দিতে আমরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছি।”
এ সংক্রান্ত নীতিমালা এরই মধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নীতিমালা অনুযায়ী শুধুমাত্র বৈধ ও নিবন্ধিত অভিবাসী কর্মীরা মারা গেলে পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত নির্বিশেষে সকল প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আমরা ৩ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকার কারণে বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে যাতে হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য এই মহামারীর মধ্যেও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পাওয়া ২ লাখ ১৫ হাজার আবেদনের অধিকাংশ পাসপোর্ট মুদ্রণ করে বিদেশের বিভিন্ন মিশনে পাঠানোর কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে যাওয়া-আসার সুবিধার্থে ইতোমধ্যে কাতার এয়ারওয়েজ, তার্কিশ এয়ারলাইন্স, এয়ার এরাবিয়া ও এমিরেটসকে বাংলাদেশে নিয়মিত ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন। এছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট চালু করেছে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের আবেদনের প্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বিমান চলাচলের অনুমতির বিষয়ে বেসরকারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সাংসদ বেনজির আহমেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কারা ভুলিয়ে–ভালিয়ে সোনার হরিণের স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষকে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। তাদের এই কাজের কারণে মানুষ সবকিছু হারাচ্ছেন, মারা পড়ছেন।
আগের খবর : দেশে ফেরত প্রবাসীদের অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করার দাবি চট্টগ্রাম চেম্বারের
বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে দেশবাসীকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কর্মী প্রেরণ করেন, তাঁরা যদি যথাযথ নিয়মে পাঠান, তাহলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে না। এজেন্টদেরও যথাযথভাবে খোঁজখবর নিয়ে পাঠানো উচিত।
সরকারের ‘খাদ্য ও চিকিৎসা কূটনীতির’ আওতায় বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ পাঠানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রতিবেশী অন্যান্য দেশে যেখানে লক্ষাধিক প্রবাসী শ্রমিক ফিরে এসেছেন, সেখানে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ২২ হাজার প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন।”
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপন, সমসাময়িক বিষয়
অতিথি : আবিদা ইসলাম, মান্যবর রাষ্ট্রদূত, দক্ষিণ কোরিয়া৪ জুলাই, শনিবার – দক্ষিণ কোরিয়া : রাত ৮ টা , বাংলাদেশ : বিকেল ৫ টাসঞ্চালনায় : আহমেদ তোফায়েল, সাংবাদিক ও উপস্থাপকঅংশগ্রহনে :মকিমা বেগম, প্রথম সচিব (শ্রম), বাংলাদেশ দূতাবাস, দক্ষিণ কোরিয়াড. আজম খান, কাজী শাহ আলম, মেক্সিন চৌধুরী, ফেরদৌস নওশাদ, খাজা মামুন, ফজলুর রহমান মাসুম
Posted by AkashJatra on Saturday, July 4, 2020