প্রবাসীদের উস্কানির নেপথ্যে ভিপি নূর, অভিযোগ সরকারের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ডাকসুর সদ্য বিদায়ী ভিপি নূরুল হক নূরের সংগঠন প্রবাসী অধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে প্রবাসে বাংলাদেশিদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ করেছে সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সোমবার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, মানবপাচারী চক্রের সহযোগীতায় ভিয়েতনামে যাওয়া পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্রবিহীন এক দল বাংলাদেশি সরকারি খরচে দেশে ফেরানোর দাবি তুলেছেন। তারা গত সপ্তাহে হ্যানয়ে বাংলাদেশ মিশন ‘দখল’ করে নিয়েছিলেন। এখন তারা ভিডিওর মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে তারা আক্রমণ করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর পেছনে ভিপি নূরকে দায়ী করেছেন।

তবে সদ্য বিদায়ী ভিপি নূর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যর্থতা ঢাকতে বা নিজের দোষ এড়াতে তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) যদি বলেন, অন্যরা উস্কাচ্ছে তবে সেটা দুঃখজনক ব্যাপার। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র প্রতিনিধি, ছাত্র নেতা। আমি একটা সংগঠস করি বা সংগঠনের সঙ্গে আছি। আমার এত পাওয়ার (ক্ষমতা) যে আমার কথায় আমি উস্কানি দিলেই বাংলাদেশ নড়াচড়া শুরু করবে, বিশ্বের প্রবাসীরা নড়াচড়া শুরু করবে। তাহলে উনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছেড়ে আমাকে দায়িত্ব দিক। আমি উস্কানি ছাড়াই কারা কারা উস্কানি দিচ্ছে সেটা আমি দেখি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার এক ভিডিও বার্তায় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভিয়েতনামে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ দূতাবাসে এক দল বাংলাদেশির অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভিয়েতনামে বিদেশি কর্মীদের জন্য খুব একটা কাজের সুযোগ নেই। দালালরা ওই ২৭ জনকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ পূর্ব এশীয় সম্পদশালী দেশগুলোতে নিয়ে যাওয়ার আশা দেখিয়েছিলেন। হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ভিয়েতনাম সরকারের নিবিড় সহযোগিতায় গত ২ জুলাই হ্যানয়-ঢাকা-হ্যানয় রুটে একটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। ওই ফ্লাইটে করে ১১ জন বাংলাদেশি ভিয়েতনাম থেকে ঢাকায় ফিরেন। ওই ২৭ জনও প্রত্যাবাসনের তালিকায় ছিলেন। কিন্তু ফ্লাইটে ওঠতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সরকারকেই তাদের দেশের ফিরিয়ে আনার খরচ দিতে হবে।

Travelion – Mobile

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অবৈধ কর্মীদের ফেরাতে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ফ্লাইট ভাড়া দেওয়ার কোনো বিধান বাংলাদেশে নেই। প্রত্যাবাসন ফ্লাইটগুলোর যাত্রীরা নিজেদের ফেরার খরচ নিজেরাই বহন করেন। জনগণের করের টাকা থেকে তাদের ফেরার খরচ দেওয়া হয় না। অন্যদিকে শ্রমিকদের বহনকারী ফ্লাইটের ভাড়া তাদের নিয়োগকারী সরকার। তাই ভিয়েতনামে ‘ভিজিটর’ হিসেবে ঘুরতে যাওয়া ওই ২৭ জন দুই ক্যাটাগরির কোনোটাতেই পড়েন না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ২ জুলাই ২৭ জন বাংলাদেশি ভিয়েতনামের হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে। তারা সরকারের খরচে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানাচ্ছেন। তারাই দাবি পূরণ না দলে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে হামলা ও দখল করে নেওয়ার হুমকির দিচ্ছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘তারা (২৭ বাংলাদেশি) ভিডিও মারফত আন্দোলন শুরু করেছে যে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো আক্রমণ করবে। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে একটা নতুন প্রতিষ্ঠান। এটার নাম হচ্ছে প্রবাসী অধিকার পরিষদ। এর প্রধান সম্ভবত ঢাকা ইউনিভাসির্টির সাবেক ভিপি নূর সাহেব।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবপাচারবিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ‘টায়ার-২’তে উন্নীত হওয়ার মধ্য দিয়ে মানবপাচার মোকাবেলায় সরকারের কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি। তবে এই সাফল্যের পর কিছু মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবেই বাংলাদেশ সরকারের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে এমনটি বিশ্বাস করার মতো কারণ আছে। ভিয়েতসামে অবৈধভাবে লোক পাঠানোর সঙ্গে জড়িত মানবপাচারকারীদের ধরতে বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাজ করছে। যারা মানবপাচারীদের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে অবৈধভাবে বিদেশে যায় তারাও বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।

ডাকসুর সদ্য বিদায়ী ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন সম্মানীয় লোক, একটি দেশের অন্যতম প্রতিনিধিত্ব। বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে আমরা যে ধরনের স্টেটমেন্ট শুনেছি সেটা দেশের ও দেশের মানুষের জন্য এক ধরনের বিভ্রান্তিকর। যেমন, তিনি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। প্রবাসীদেরকে বলেছেন, নবাবজাদা। আরেক জায়গায় বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রবাসীরা দেশে আসলে চুরি-চামারি বেড়ে যেতে পারে। তিনি তার বক্তব্যের কারণেই প্রবাসীসহ দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন। তিনি মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রসঙ্গে নূর আরো বলেন, ‘উনি নিজের দায়িত্ব পালন না করে যদি অন্যের ঘাড়ে চাপা দিয়ে এ ধরনের কথা বলেন যে অমুকে উস্কানি দিচ্ছে, অমুকে গুজব ছড়াচ্ছে এগুলো একজন মন্ত্রীর জায়গা থেকে এসব কথা বলা উচিত না। খুবই দুঃখজনক।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!