পারভেজ মুশাররফের মরদেহ তিন দিন রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে!

পাক সরকারের দাবি বিচারক ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’

ফাঁসির আগে পারভেজ মুশাররফ মারা গেলে তার মরদেহ তিন দিন ধরে ইসলামাবাদের ডি চকে রাখতে হবে, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মুশাররফের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা মামলার রায়ে বিচারকদের বেঞ্চের এমনটি নির্দেশনা রয়েছে ।

মঙ্গলবার মুশাররফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির সন্ত্রাসবাদ রোধ আদালত। ২০০৭ সালে সংবিধান ধ্বংস এবং দেশদ্রোহিতা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে তিনি ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তার মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে বর্তমানে দুবাইয়ে চিকিৎসাধীন জেনারেলকে গ্রেফতার করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ( ১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ১৬৭ পৃষ্ঠার বিস্তারিত রায়ে বলা হয়েছে ‘আমরা আইন বলবৎকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিচ্ছি তারা যেন পলাতক অপরাধীকে পাকড়াও করবার সব ধরনের চেষ্টা করে এবং আইনানুযায়ী শাস্তি দেয়ার চেষ্টা করে এবং তাকে যদি মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, তাহলে তার মরদেহ পাকিস্তানের ইসলামাবাদের ডি চকে টেনে এনে যেন তিন দিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা হয়।’

Travelion – Mobile

পেশওয়ার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াকার আহমেদ শেঠ, সিন্ধ হাইকোর্টের বিচারপতি নাজির আকবর এবং লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদ করিমকে নিয়ে গঠিত এক বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। এর মধ্যে বিচারপতি শেঠ এবং করিম মুশাররফের অপরাধের ব্যাপারে একমত হলেও বিচারপতি আকবর ভিন্ন দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থার খবরে বলা হয়েছে, মূল দণ্ডে দুর্বলতা ও ফাঁক রয়েছে বলে সরকার ঘোষণা দেয়ার পর বৃহস্পতিবার এই অদ্ভুত রায় এসেছে। এতে বিচারবিভাগ ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিভাজনের আভাসই দিচ্ছে।

এদিকে ‘মুশাররফের মরদেহ তিন দিন রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশনা দেয়া হাইকোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চের মুখ্য বিচারপতি ওয়াকার আহমেদ শেঠকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলে দাবি করেছে দেশটির সরকার। ওই বিচারপতির অপসারণ চেয়ে এবার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে আবেদন করতে চলেছে পাক সরকার।

জেনারেল (অব.) পারভেজ মোশাররফ
জেনারেল (অব.) পারভেজ মোশাররফ

এই ধরনের রায় পাকিস্তানের আইনের বিরোধী বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী ফারোগ নাসিম । তিনি আরও বলেছেন, ‘ফেডারেল গভর্মেন্ট এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো বিচারপতি যদি এমন রায় দেন তাহলে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ এবং অযোগ্য।’

৭৬ বছর বয়সী মুশাররফ এখন দুবাইতে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে মুশাররফ বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ‘এ এক অভূতপূর্ব মামলা যেখানে অভিযুক্ত বা তার আইনজীবী, কাউকেই আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দেয়া হয়নি। মোশাররফের আইনজীবী এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে, সাবেক সেনাপ্রধান পারেভজ মুশাররফের রায়ে ব্যাপক কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এক বিবৃতিতে ডিজি আইএসপিআর মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বলেছেন, ‘একজন প্রাক্তন সেনা প্রধান, পাকিস্তানের এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, যিনি ৪০ বছর ধরে দেশের জন্য লড়াই করেছেন তিনি বিশ্বাসঘাতক হতে পারেন না। সম্ভবত প্রয়োজনীয় আইনি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি।’

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, আদালতের ঘোষণা প্রমাণ করছে, বিচারের মূল রায়ে ত্রুটি রয়েছে। আজকের রায়ে বিশেষভাবে যে সব ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা মানবতা, ধর্ম, সভ্যতা ও আমাদের মূল্যবোধের বাইরে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া। মূল রায় ইতিমধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে ব্যথিত করেছে। দেশটির ইতিহাসের অর্ধেকটাই শাসন করেছে এই সামরিক বাহিনী।

মোশাররফের দেশপ্রেমের সাফাই গাইতে গিয়ে রায়ে আইনি প্রক্রিয়া অবহেলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!