পাকিস্তানে বিমান দুর্ঘটনা : যান্ত্রিক সমস্যা বা পাইলটের ত্রুটি নিয়ে ধুম্রজাল
পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার প্রাথমিক প্রতিবেদনে পাইলটের ফ্লাইট পরিচালনা এবং ককপিটে থাকা ক্রুদের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলারদের সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করার ফলে কী ঘটেছিল তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। জিও নিউজ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্তে তাৎক্ষণিক গঠিত কমিটি জাতীয় বিমানসংস্থার পিকে -৮৩০৩ এর বিধ্বস্তের পেছনে পাইলট ত্রুটি বা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণ কিনা তা জানার চেষ্টা করছে। তবে ঘটনার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন নতুন প্রশ্ন ওঠে আসছে।
শুক্রবার দুপুরে লাহৌর থেকে উড়েছিল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ)-এর এয়ারবাস এ৩২০। করাচি বিমানবন্দরে নামার মিনিট খানেক আগে ভেঙে পড়ে ওই উড়োজাহাজটি। বিমানবন্দরের খুব কাছে ঘনবসতিপূর্ণ জিন্না গার্ডেন এলাকার একটি আবাসনের উপর ভেঙে পড়ে ওই উড়োজাহাজটি ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে উড়োজাহাজটি একটি মোবাইল টাওয়ারে ধাক্কা মারে। দূর্ঘটনার সময় বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজটি মাত্র প্রায় এক মিনিটের দূরত্বে ছিল। বিমানে ৩১ জন মহিলাসহ ৯১ জন যাত্রী এবং আট জন ক্রু ছিলেন। যাদের মধ্যে মাত্র দুইজন যাত্রী দুর্ঘটনার হাত থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন।
পিআইএ জানিয়েছে, পরশুই বিমানটি মাসকট থেকে লাহৌরে ফিরেছিল। তার ইঞ্জিন, চাকা বা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতিতে ত্রুটি ছিল না। শেষ বার বিমানটিকে পরীক্ষা করা হয়েছিল ২১ মার্চ। আপাতত সেটির ওড়ার শংসাপত্র ছিল ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। সরকার জানিয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি যথাসম্ভব দ্রুত রিপোর্ট দেবে। উদ্ধার হয়েছে ব্ল্যাক বক্স।
দূর্ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটির বের করার চেষ্টা করে A320’s ক্র্যাশের কারণ কি কি? প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, দূর্ঘটনার আগে আকাশে আবার উড়োজাহাজটি তুলে নেয়ার আগে তিনবার জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানওয়ে ছোয়ার চেষ্টা করেছিল পাইলট। বিমানবন্দরে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সঙ্গে পাইলটের যোগাযোগ থাকলেও, উর্দ্ধতন কন্ট্রোলার এই উড়োজাহাজের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ফ্লাইটটিতে তেমন কোন সমস্যা না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে ল্যান্ডিং গিয়ারে কোন সমস্যা হয়েছিল যদিও না নিশ্চিত নয়।
Exclusive CCTV Footage of today Plane Crash Near Karachi Airport#Breaking #PlaneCrash #Karachi #Pakistan #PIA pic.twitter.com/WXlOzLrGPm
— Weather Of Karachi- WOK (@KarachiWok) May 22, 2020
দূর্ঘটনার মাত্র ১২ সেকেন্ড আগে কন্ট্রোলের কর্মীরা এটিসি টাওয়ারে জানিয়ে দেন যে, উড়োজাহাজটির দুটো ইঞ্জিনই বিকল হয়ে গিয়েছে । তার একটু পরেই তা আছড়ে পড়ে আবাসিক এলাকায়।
প্রাথমিক ফলাফলে আরো উঠে এসেছে উড়োজাহাজটি নামার চেষ্টার সময়ে এর জ্বালানি পাম্প ও তেলের ট্যাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। অবতরণ প্রচেষ্টায় দেখা গেছে, উড়োজাহাজটির পেটের অংশ টারমাকে লাগেনি।
মনে করা হচ্ছে, A320’s ইঞ্জিনগুলি পাইলটের ইনপুটের সাড়া দিচ্ছিল না। তাই আংশিকভাবে মাটি ছুঁয়ে থাকলেও পাইলটের নির্দেশ অনুযায়ী তা কাজ করেনি। এটিসি থেকে বলা হয়েছিল উড়োজাহাজটি যাতে ৩ হাজার ফুট উঁচুতে থাকে। তবে তা পারেননি পাইলট, তিনি ২ হাজার ফুটের জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন।
তদন্তকারীদের অনুমান, তেলের ট্যাঙ্ক ফুটো হয়েও এমন দূর্ঘটনা হয়ে থাকতে পারে। তবে কর্মকর্তারা এও খতিয়ে দেখছেন যে মানব-ত্রুটির কারণে এই দূর্ঘটনা হয়েছি কিনা। এছাড়াও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাকেও কারণ হিসেবে বিবেচনা করছেন তদন্ত দল। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে তা খোজার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
کراچی میں PIA کا جہاز لینڈنگ سے ایک منٹ پہلے آبادی کے اوپر گر کر تباہ جہاز میں 95 مسافر سوار تھے #planecrash#Karachi pic.twitter.com/NGj4DmxGS9
— Jaffar Khan kakar (@jaffar_bazai) May 22, 2020
কেন এটিসি কন্ট্রোলার তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না এবং কেন পাইলট বিষয়টি নিজের হাতে তুলে নিলেন, তা ঘিরেও নানা প্রশ্ন রয়েছে।
দূর্ঘটনাস্থল থেকে ৯৭ টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে যেহেতু এটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে সেহেতু সব মরদেহ বিমান যাত্রীর কিনা তা স্পষ্ট নয় । তবে মৃতদের মধ্যে ওই আবাসনের বাসিন্দাদের কেউ রয়েছেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সিন্ধ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় ঠিক কত জন আহত হয়েছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিমানটি যে আবাসনের উপরে ভেঙে পড়েছিল, মনে করা হচ্ছে, সেখানকার ২৫ থেকে ৩০ জন বাসিন্দা জখম হয়েছেন। বিমান দুর্ঘটনার জেরে কিছু গাড়িও ধ্বংস হয়েছে।
এখনো উদ্ধার হওয়া মাত্র ১৯ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে । দুর্ঘটনার ফলে দগ্ধ হওয়ার কারণে, মৃতদেহ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে । ফলে এই প্রচেষ্টায় সাহায্য করতে নেমে পড়েছে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়। ২১ দিনে এই তারা সব মরদেহের ফলাফল দিতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া দুই যাত্রী বসেছিলেন 1C এবং 10C আসনে। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক জন ২৪ বছর বয়সি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, আর অন্যজন পঞ্জাব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট। পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ সাঈদ ঘানি তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।