পাইলট নিয়োগে অনিয়ম, দুদকে ফাঁসলেন বিমানের দুই এমডি

পাইলট নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪ কমকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এই মামলার আসামীর দুজনই রাষ্ট্রিয় সংস্থাটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। এরা হলেন. ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহম্মেদ ও ক্যাপ্টেন ফারহাদ হাসান জামিল।

ঘটনার সময়কালে ক্যাপ্টেন জামিল ছিলেন বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও)। পরবর্তীতে তিনি ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

Travelion – Mobile

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) বর্তমানে অধ্যক্ষ বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টার পার্থ কুমার পণ্ডিত ও ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) ফখরুল হোসেন চৌধুরী।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ২০১৮ সালে ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের দায়িত্বকালীন প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স নির্ধারণে বিমানের প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ করেননি।

নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যাখ্যা ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদের ভাতিজাসহ ৩০ জন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে নিজেরা লাভবান হয়েছেন।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের অপারেশন ম্যানুয়াল পার্ট অনুযায়ী নিয়োগের পদ্ধতি অনুসরণ না করে, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মানবণ্টন ম্যানুয়াল অনুযায়ী না করে মৌখিক পরীক্ষায় শতকরা ৫০ নম্বর রেখে বিশেষ প্রার্থীদের অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন আসামিরা।

লিখিত (এমসিকিউতে ২০ নম্বর ও বর্ণনামূলক ১০ নম্বর) পরীক্ষায় গ্রেস দেয়ার মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করে অবৈধভাবে বিমানের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসামিরা তাদের ওপর ন্যস্ত ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক অসদাচরণ করে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, বিমানের দুই দফায় পাইলট নিয়োগে মোসাদ্দিক আহম্মেদের সঙ্গে মূল ভূমিকায় ছিলেন পাইলট ফারহাত জামিল। দুটি নিয়োগের সময় মোসাদ্দিক আহম্মেদ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। ক্যাপ্টেন জামিল ছিলেন নিয়োগ কমিটির প্রধান। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও)। ডিএফও থাকার কারণে দুটি নিয়োগে জামিলকে কমিটির প্রধান করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, বিমানের বোর্ড সভায় ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহম্মেদকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অপরদিকে ক্যাপ্টেন ফারহাত আহম্মেদ জামিলকেও এমডি পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে লাইন পাইলট হিসেবে রাখা হয়। দুদক সূত্রে জানা গেছে, বিমানের আইন অনুযাযী মামলা দায়ের হওয়ায় এখন লাইন পাইলট থেকেও ক্যাপ্টেন জামিলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হবে।

দুদক সূত্র আরও জানায়, পাইলট নিয়োগে ক্যাপ্টেন জামিল আহম্মেদ সাবেক এমডি মোসাদ্দিক আহম্মেদের ভাতিজাসহ কমপক্ষে ৩০-৩২ জন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে তাদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে কমপক্ষে ৭ জন ছিলেন বিমান পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নেতা ও সদস্যদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের সদস্য। ২ প্রার্থী ছিলেন সাবেক পাইলটের ছেলে।

মোসাদ্দিক ও জামিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, পাইলটের আবেদন করা প্রার্থীদের কাগজপত্র চার সদস্যের কমিটির মাধ্যমে বাছাই করার কথা ছিল। কিন্তু তারা কাজটি করেছেন তিন সদস্যের কমিটির মাধ্যমে। কমিটির আহ্বায়ককে বিষয়টি জানানোই হয়নি। মৌখিক পরীক্ষার সময় কমিটির সদস্য চিফ অব ট্রেনিং উপস্থিত ছিলেন না। ডেপুটি চিফ অব ট্রেনিংকে দিয়ে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। চিফ অব ট্রেনিং এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

৩০ এপ্রিল রাতে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএম মোসাদ্দিক আহমেদকে তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সেই সময় ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে বিমানের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

১ মে থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্যাপ্টেন জামিল। গতমাসে মন্ত্রণালয়ের তদন্তে পাইলট নিয়োগ কেলেংকারির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) থেকেও সরিয়ে দেয়া হয় ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিলকে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!