পর্যটন প্রসারে বাংলাদেশ-মেঘালয় ট্যুর অপারেটদের সমঝোতা
মূখ্যমন্ত্রী সাংমার উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর
বাংলাদেশ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ট্যুর অপারেটরদের মধ্যে পর্যটন সহযোগিতা বিনিময়ে সমঝোতা (মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং) চুক্তি হয়েছে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ মেঘালয় (টোয়াম) এর সাথে এই চুক্তি করেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এবং বাংলাদেশ ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডি ইনবাউন্ড)। চুক্তির আলোকে দুই দেশের পর্যটনশিল্পের প্রচার ও প্রসারে কাজ কাজ করবে সংস্থাগুলো ।
বৃহস্পতিবার ( ৭ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ সফররত ভারতের মেঘালয়ের মূখ্যমন্ত্রী কনরাড কনভ্যাল সাংমার উপস্থিতিতে প্রতিবেশী দুইদেশের ট্যুর অপারেটরদের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
টোয়াম সভাপতি ই, বি ব্লা এবং টোয়াব সভাপতি তৌফিক উদ্দিন আহমেদ ও বিডি ইনবাউন্ড সভাপতি রেজাউল একরাম নিজ নিজ সংস্থার পক্ষে চুক্তিতে থেকে স্বাক্ষর করেন।
এই পর্যটন চুক্তি বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা। চু্ক্তিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য মেঘালয় ও বাংলাদেশের মধ্যে পর্যটন শিল্পে সরকারী ও বেসরকারী খাতে সহযোগিতা বিনিময় জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি পর্যটন দুই দেশের মানুষকে আরো কাছাকাছি আনবে, যা পরবর্তীতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সমস্যা দুর করার ব্যাপারে আমরা উভয় দেশ কাজ করছি।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চুক্তির ফলে উভয় দেশের ট্যুর অপারেটররা আরো কাছাকাছি আসবেন এবং আরো ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে পারবেন। দুপক্ষ পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের উপায় বের করবে। মেঘালয় সরকার এক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী।’
তিনি বলেন, আপনারা মেঘালয়ে আসুন। কাছাকাছি এলে আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস আরো সুদৃঢ হবে। তখন সবকিছুই স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হবে। আমরা সড়ক, রেল এবং আকাশপথে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ আরো বাড়াতে আগ্রহী। বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার এখনই সুবর্ন সময়।’
অনুষ্ঠানে মেঘালয়ের মূখ্যসচিব ড. পি, শাকিল আহমেদ বলেন, ‘একমাত্র মেঘালয়ে আপনারা পবেন এসি (এয়ারকন্ডিশনার) ছাড়াই প্রাকৃতিক এসির পরিবেশ। এখানে পাহাড়, ঝর্ণা ও অসাধারন প্রকৃতি পর্যটকদেও মন কাড়বে। আমরা আপনাদের সেবা দেওয়ার ব্যাপরে খুবই আগ্রহী। আমরা ভবিষ্যতে ট্যুর অপারেটর ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের নিয়ে ফ্যাম ট্রিপসহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেব।’
টোয়াম সভাপতি ই, বি ব্লা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ২১ লাখ পর্যটক ভারত ভ্রমণ করেন। এসব পর্যটক কলকাতা, দিল্লী, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুর গেলেও মেঘালয়ে কম আসেন। তারপরও আমাদের মোট পর্যটকের ৯৫ শতাংশই বাংলাদেশি। তাই আমরা এই পর্যটক বৃদ্ধির পাশাপাশি মেঘালয় থেকেও বাংলাশে পর্যটক বৃদ্ধি করতে অবাকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আজকের এই সমঝোতা চুক্তি ও মতবিনিময় একটি ‘গোল্ডেন অপরচুনিটি’। মেঘালয়ের সরকারের সঙ্গে মিলে আমাদের সরাসরি কাজের সুযোগ রয়েছে। আমরা একে অপরের পর্যটকদের কাছে নিজেদের আকর্ষণীয় পর্যটন উপাদানগুলো তুলে ধরতে পারি।’
টোয়াব সভাপতি তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভারত থেকে আরও বেশি পর্যটক বাংলাদেশে আনতে সেখানকার বাংলাদেশ হাইকমিশনকে আরও গতিশীল হতে হবে। একইসঙ্গে ভারতের উচিত আমাদের এখানকার অপারেটরদের দুতিন বছরের মাল্টিপল এন্ট্রিভিসা সুবিধা দেওয়া। গ্রুপ ট্যুরের ক্ষেত্রে সবার পক্ষে একজনকে ভিসা সেন্টারে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ভারত ভিসার ব্যাপারে উদার হলেও এখনো সবগুলো এন্ট্রিপয়েন্ট উন্মুক্ত করেনি। ফলে নির্ধারিত কয়েকটি বর্ডার দিয়ে যাতায়াত করতে হয় পর্যটকদের।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মেঘালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের পর্যটনের অবকাঠামোগত নানা সমস্যা তুলে ধরেন বিডি ইনবাউন্ডের সভাপতি রেজাউল একরাম।
সমস্যা সমাধানের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,‘মেঘালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রসবর্ডার ট্যুারিজমের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও তা কানেকটিভিটি ও ভিসা সমস্যায় কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ভারত ভিসা সহজ করলেও মেঘালয়ের জন্য পৃথক এনডোর্সমেন্ট প্রয়োজন হয়। এছাড়া যাতায়াত সুবিধা অপ্রতুল। সপ্তাহে একদিন মাত্র বাস সার্ভিস। তামাবিল সীমান্তে ভালো কোনো যানবাহন ব্যবস্থা না থাকায় খেয়ালখুশি আদায় করে স্থানীয়রা। আর যাত্রীদের জন্য সীমান্তে কোন শেড কিংবা বিশ্রামাগার নেই।’
পর্যটক বাড়াতে হলে মেঘালয় থেকেও বাস, রেল এবং আকাশপথে যোগাযোগ জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশ এবং ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে, অভিমত বিডি ইনবাউন্ড সভাপতির।
টোয়াব পরিচালক তৌফিক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে কক্সবাজার, সুন্দরবনসহ বেশ কয়েকটি বিশ্বসেরা নিদর্শন আছে যা দেখতে মেঘালয়ের পর্যটকরা আসতে পারেন। এজন্য যৌথ গবেষণা, প্রডাক্ট আইডেন্টিফিকেশন এবং মার্কেটিং করা যেতে পারে। এছাড়া উভয় দেশের ট্যুর অপারেটন এক্সটেন্ডেড ট্যুরিজম করতে পারেন। যার ফলে উভয় দেশেই পর্যটক বাড়বে।’
টেয়াবের পরামর্শক সৈয়দ গোলাম কাদির বলেন, ‘বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার কারণে ভারতের সঙ্গে পর্যটন বিকাশের ব্যাপক সুযোগ আছে। এজন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সকল স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াত উন্মুক্ত করতে হবে। এছাড়া নৌ, আকাশপথে ওয়ানস্টপ সার্ভিস দিয়ে কানেকটিভিটি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।’
অনুষ্ঠানে মেঘালয়ের পর্যটনশিল্প নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন টোয়াম সহসভাপতি জন এম ওয়ানখার এবং বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিয়ে উপস্থাপনা দেন টোয়াবের উপদেষ্টা সৈয়দ গোলাম কাদির, টেয়াবের পরিচালক তৌফিক রহমান, পরিচালক (ট্রেড অ্যান্ড ফেয়ার) তসলিম আমিন শোভন।
ভারতীয় হাইকমিশনের চ্যান্সেরি প্রধান মিথুন টি. আরসহ দুই দশের পর্যটনখাত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।