নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের ব্যতিক্রমী ঈদ পুনর্মিলনী
করোনার দমবন্ধ হওয়া গুমোট পরিস্থিতি থেকে কিছু সময়ের জন্য হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কপ্রবাসী বাংলাদেশিরা অনন্য সুন্দরপ্রকৃতির মাঝে ঈদ পুনর্মিলনে মেতে ওঠেছিলেন।
স্থানীয় সময় গত রবিবার নিউইয়র্ক শহরের লং আইল্যান্ডের সবুজেঘেরা প্রকৃতির মাঝে নয়নাভিরাম বেলমন্ট লেকস্টেট পার্কে দিনব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যতিক্রম এই ঈদ পুনর্মিলনের আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজক ছিল ফেসবুকভিত্তিক অরাজনৈতিক গ্রুপ ‘আমেরিকান বাংলাদেশি কমিউনিটি হেল্প’ বা সংক্ষেপে এবিসিএইচ (ABCH)।
রবিবার সকাল থেকেই নিউইয়র্কের পাঁচ বড় শহর কুইন্স, ব্রুকলিন, ব্রন্কস, ম্যানহাটান ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ড থেকে প্রবাসীরা পরিবার নিয়ে আসতে শুরু করেন। নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভ্যানিয়া, মিশিগান ও ফ্লোরিডা ইত্যাদি স্টেট থেকেও অনেকে এসেছেন।
শিশু-কিশোরসহ নানা বয়স পেশার সাড়ে চারশ’বেশির বাংলাদেশি এই বর্ণাঢ্য আনন্দ আয়োজনে অংশ নেন। এবিসিএইচ-এর আয়োজনে প্রথম এই ঈদ পুনর্মিলনীর ব্যতিক্রমটা ছিল অংশ নেওয়া প্রবাসীদের বেশিরভাগই কেউ কারোর সঙ্গে সরাসরি পরিচিত ছিল না, শুধুই গ্রুপভিত্তিক যোগাযোগ ছিল। কিন্ত চেনা শহরে অচেনা এসব মানুষ পুনর্মিলনীতে পরস্পরকে চিনে নিতে ও জেনে নিতে বেশি সময় নেননি।
সাধারণত সামার এলেই নিউইয়র্ক শহর ও উপকন্ঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বিভিন্ন পার্কে পুনর্মিলন বা আনন্দ আয়োজনে বাংলাদেশিদের ঢল নামে। বেশিরভাগই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাভিত্তিক সমিতি ও সংগঠন; বিভিন্ন পেশাজীবী, এলামনাই কিংবা সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে হয়ে থাকে। তবে এবিসিএইচ-এর মত শুধুমাত্র অনলাইন-ভিত্তিক কোনো গ্রুপের উদ্যোগে এতো বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির উপস্থিতি এমন আয়োজন এটাই প্রথম। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফেসবুক প্রচারণায় গ্রুপের সদস্য বাংলাদেশি সাড়া দেন।
পুনর্মিলনীর আনন্দ আয়োজনের বৈচিত্র্য আরো বাড়িয়ে দিতে কয়েকজন ক্ষুদ্র প্রবাসী শিল্পোদ্যোক্তাবিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছিলেন। পান-সুপারি ও চটপটি-ফুচকার স্টল নিয়েও হাজির ছিলেন দু’জন। শাড়ি, জামা-কাপড়, কানের দুল, চুড়ি, ইমিটেশন গয়নার স্টলও ছিল। মর্টগেজ, বাড়ি কেনা, ব্যাংক লোন ইত্যাদিসহ রিয়েলএস্টেট সংক্রান্ত যাবতীয় পরামর্শ বা সলিউশন দিতে এগিয়ে এসেছিলেন ফেয়ারওয়ে মর্টগেজ কর্পোরেশন। তথ্য প্রযুক্তির নানা দিক ও সম্ভাবনা জানাতে এসেছিল আইটি প্রতিষ্ঠান টেকসার্ভ৪ইউ। শিল্পী জাহেদ শরীফ নিয়ে এসেছিলেন তাঁর ডিজিটাল শেল্পিক কর্মের প্রতিষ্ঠান ‘সাইনারামা’ । রকমারি পণ্যের পসরা ছিলো নিউইয়র্কের জনপ্রিয় ফাইভ সিস্টার্সের স্টলে। এমব্লেম হেলথ এসেছিলো মেডিক্যাল ইনসুরেন্স সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে।
এ ছাড়াও গান বাজনা, নাচ ও খেলাধূলার আয়োজন। সুদূর ফ্লোরিডা থেকে এসেছিলেন শিল্পী আমিরুল ইসলাম বাবুল। ছিলেন নিউইয়র্কের বাঙালী শিল্পী মিথুল হক, ঝুলন সেন এবং সৌখিন শিল্পী খন্দকার রবি। তাঁদের সুললিত কন্ঠ সবাইকে মুগ্ধ করে।
দুপুরে পার্কের মাঠে মহিলাদের বালিশ প্রতিযোগিতা, বালক-বালিকাদের দৌঁড় প্রতিযোগিতা এবং তরুণদের নিয়ে ক্রিকেট ম্যাচও হয়। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্রতে ১৩ জন ব্যবসায়ীর স্পন্সরে স্বর্ণের চেইন, অ্যাপল ওয়াচ, স্যামসাং টিভি ওট্যাবলেট, মেসি’জ-এর ক্রোকারিজসহ নানা আকর্ষণীয় পুরস্কার ছিলো।
এবিসিএইচ-এর তিন উদ্যোক্তা ও এডমিন জাহিদ করিম, তরিকুল ইসলাম মিঠু ও হাসান ভূঁইঞা নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের ভলান্টিয়ার টিম পুরো আয়োজনের দেখভাল করেন।
গ্রুপ উদ্যোক্তারা জানান, এবিসিএইচ গ্রুপে পুরো আমেরিকাজুড়ে পনের হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি সদস্যের একটি শক্তশালী কমিউনিটি গড়ে তুলছেন। মানবিক কাজেও এবিসিএইচ এই গ্রুপের ভূমিকা রাখছে। আমেরিকার পাশাপাশি বাংলাদেশেও অসহায় দরিদ্র মানুষকে আর্থিকসহ নানাভাবে সাহায্য, সহযোগিতা করে আসছে।
তারা বলেন, “আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতির মনোভাব গড়ে তুলতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। রাজনৈতিক দলাদলি কিংবা ধর্মীয় সম্প্রীতি ক্ষুন্ন করার কোনো সুযোগ নেই বলে আমাদের সংগঠনটি ব্যতিক্রম” ।