নিউইয়র্কে আরেকটি ‘লিটল বাংলাদেশ’

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডে আরেকটি রাস্তার নামকরণ করা হলো ‘লিটল বাংলাদেশ’। এর মধ্য দিয়ে বাঙালিদের এগিয়ে চলার অধ্যায়ে আরেকটি ইতিহাসের সংযোজন ঘটলো। এর আগে এবছরের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জ্যামাইকায় হিলসাইড অ্যাভিনিউর বড় একটি অংশের নামকরণ করা হয়েছিল ‘লিটল বাংলাদেশ’।

রোববার ব্রুকলিনে চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড ইন্টারসেকশনে রাস্তার নতুন নামফলক উম্মোচন করেন নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ। নির্বাচিত হবার ১০ মাসের মধ্যে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাকে ‘লিটল বাংলাদেশ’-এ পরিণত করেন শাহানা হানিফ। তিনি ‘লিটল বাংলাদেশ’ বিলটি সিটি কাউন্সিলে উত্থাপনের পরই তা পাশ হয়।

নিউইয়র্কের কেনসিংটনে বড় হয়েছেন শাহানা হানিফ। তার বাবা-মা বাংলাদেশি অভিবাসী। তিনি নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম নারী।

Travelion – Mobile

ম্যাকডোনাল্ড ও চার্চ অ্যাভিনিউয়ের যে জায়গাটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে সেখানে প্রচুর বাংলাদেশি ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট আছে।এশিয়ান-আমেরিকান ফেডারেশনের ২০১৯ সালের জরিপ অনুসারে নিউইয়র্ক শহরের বাংলাদেশি জনসংখ্যার প্রায় ১৬ শতাংশের বসবাস ব্রুকলিনে। শহরের তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্কে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সংখ্যা ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে।

নামকরণের অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিশিষ্টজনসহ নানা শ্রেণী-পেশার অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন।

‘লিটল বাংলাদেশ’ নামফলক উম্মোচন করেন নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ।
‘লিটল বাংলাদেশ’ নামফলক উম্মোচন করেন নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ।

অনুষ্ঠানে কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ বলেন, ‘এটি আনন্দের এবং ঐতিহাসিক একটা দিন। আমাদের যে সংগ্রাম অনেক বছর ধরে চলছিল, এখানে মাথা উঁচু করে থাকা, গড়ে উঠা, তার বাস্তবায়ন ঘটলো’।

‘আমার পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে, এই লিটল বাংলাদেশ ঘিরে আমাদের শিক্ষা, ন্যায্য মজুরি এবং গৃহায়নের যে ফাইট চলছে, তাকে শক্তিশালি করতে হবে এই নামকরণের আনন্দের মধ্য দিয়ে’, তিনি আরও বলেন।

প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

লিটল বাংলাদেশ’র স্বপ্নদ্রষ্টাদের অন্যতম কাউন্সিলওম্যান শাহানার বাবা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং উত্তর আমেরিকা চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন অনেক বেশি আবেগাপ্লুত।

তিনি বলেন, সেই ১৯৯৫ সালে আমরা কজন এই এলাকায় একটি অনুষ্ঠান থেকে ‘লিটল বাংলাদেশ’ রচনার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলাম। স্বপ্নের পরিপূরক হিসেবে একই বছরে এখানে ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট চালু করি। তারপর চলে গেছে ২৬টি বছর’।

‘লিটল বাংলাদেশ’ নামফলক উম্মোচনের প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতি।
‘লিটল বাংলাদেশ’ নামফলক উম্মোচনের প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতি।

‘আমার সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটলো আমারই কন্যা শাহানার হাত ধরে। আমি কত যে খুশী আর আনন্দিত-তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমি তার জন্যে গর্ববোধ করছি’, হানিফ চৌধুরী যোগ করেন।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম বলেন,’আমরা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছি। এরফলে ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামকরণের এ উদ্যোগ নতুন মাত্রা পেয়েছে এবং নতুন বৈচিত্র্য আনবে নিঃসন্দেহে’।

ড. মনিরুল ইসলাম সর্বস্তরের প্রবাসীগণকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে আরো বলেন, তারা তাদের মেধা-মনন-সৃষ্টিশীলতা দিয়ে, কর্মদক্ষতা দিয়ে ভালো অবস্থান তৈরী করেছেন, সেজন্যে আমি মনে করি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো গভীর করার বিষয়ে আপনারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

এ এলাকার কাউন্সিলম্যান থেকে সদ্য সিটি কম্পট্রোলার হিসেবে বিজয়ী ব্র্যাড লেন্ডার বলেন, আমি বেশ কয়েক টার্ম বাঙালিব কমিউনিটির সান্নিধ্যে থেকেও এই এলাকার নামকরণ ‘লিটল বাংলাদেশ’ করতে পারিনি। উত্তরসুরী শাহানার দিপ্ত প্রত্যয়ে বাংলাদেশিদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন শেষ পর্যন্তপুরণ হল।

‘লিটল বাংলাদেশ’ নামফলক নিয়ে  কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ।
‘লিটল বাংলাদেশ’ নামফলক নিয়ে কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ।

ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, আমরা প্রথম জেনারেশনের সদস্য হিসেবে যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি, তবে বলতে দ্বিধা নেই যে, আমাদের সন্তানেরা অনেক ভাল করছেন বহুজাতিক এ সমাজে বাংলাদেশ আর বাঙালি কালচার উজ্জীবিত রাখতে।
নতুন প্রজন্মের এই আনন্দানুভূতিকে স্বাগত জানিয়ে ডেমক্র্যাটিক পার্টির ন্যাশনাল কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান খোরশেদ খন্দকার ।

নামফলক উম্মোচনের সময় বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও ছিলেন আবুল হাশেম, রেফায়েত চৌধুরী, কাজী নয়ন, ড. প্রদীপ কর, মাসুদুল হাসান, চন্দন দত্ত, রব মিয়া, জাহিদ মিন্টু, এ্যানি ফেরদৌস, খালেদা খানম, শাসসুদ্দিন আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক. কাজী আজম, ফিরোজ আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ হায়দার, মনির আহমেদ, আবু তাহের।

প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!