নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস পালিত

আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবসের ৭ম বার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়কে জেনোসাইডে নিহতদের স্মরণ এবং জেনোসাইড প্রতিরোধের প্রত্যয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে জেনোসাইড ’৭১ ফাউন্ডেশন।

৯ ডিসেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বাংলদেশ প্লাজা কনফারেন্স রুমে, আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল, বিশ্বে গণহত্যা নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, তথ্যচিত্র প্রদর্শন, সেমিনার ও আলোচনা সভা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ড প্রদীপ রঞ্জন করের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনস্যাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম।

Travelion – Mobile

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসের খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

আলোচক ছিলেন, বিশিস্ট সাংবাদিক ফজলুর রহহমান, অধ্যাপিকা হোসনে আরা, ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ আলী সিদ্দিকী, অ্যাড. মো. বকতিয়ার আলী, রমেশ চন্দ্র নাথ, কামরুল আলম হিরা, বদিউজ্ঞামান পান্না, জালালউদ্দিন জলিল, অধ্যাপিকা মমতাজ শাহনাজ, একে চৌধূরী, খ. জাহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, নুতন প্রজন্মের শুভ রহমান।

সভায় বিশেষজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিল-স্বাধীন বাংলা বেতার শিল্পী রথীন্দ্র নাথ রায়, ডা. মাসুদুল হাসান, কণ্ঠশিল্পী রেজা রহমান ও কণ্ঠশিল্পী জলি কর প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়,৫১ বছর পর বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে নৃশংস এ জেনোসাইড মার্কিন কংগ্রেসে স্বীকৃতি পেতে উপস্থাপিত হয়েছে। এটাকে ইতিবাচক বিবেচনায় নিয়ে সামনে এগুতে চাই। আমরা “The Genocide’71 Foundation, USA” দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে কাজ করে আসছি। আমরা দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যানের H.RES. 1430, ১১৭ তম কংগ্রেস, ২য় অধিবেশনে বিলটি উপস্থাপন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সংশোধন স্বপক্ষে মার্কিন কংগ্রেসে এই বিলটি পাসের জন্য এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সহযোগিতার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে ‘একাওুরের বাঙ্গালী জেনোসাইডের সারাংশ সম্বলিত একটি ডকুমেন্ট’ এর কপি ইউএস কংগ্রেসের ৪৩৫ জন সদস্য বরাবর পাঠিয়ে তাঁদের একাওুরের বাঙ্গালী জেনোসাইড সম্পর্কে সম্যক ধারনা দেওয়া প্রচেস্টা গ্রহণ। 

“এই ‘ডকুমেন্ট’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি অফ স্টেট ও অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর পাঠানো যাতে একাওুরের বাঙ্গালী জেনোসাইড স্বীকৃতি ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক থাকা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর খুনি সাজাপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরী ও সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আসারাফুজ্জামান খানকে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে”।

বক্তারা বলেন,মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাক্ষীদের বিশদ বর্ণনা অনেক আন্তর্জাতিক গবেষণা ও মিডিয়া প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এত সব মতামত ও প্রতিবেদনের পরও একাওুরের জেনোসাইড আজও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেনি।” 

তারা বলেন,’জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যে শক্তিশালী উদ্যোগ আমাদের নেওয়া দরকার ছিল। আমরা তা নিতে পারি নি। বিশ্ব সম্প্রদায়ও চরম অবহেলা দেখিছে বাংলাদেশের ক্ষেএে।’

“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই অনীহা ও ব্যর্থতার ফলে বিশ্বে একের পর এক জেনোসাইড অব্যাহত রয়েছে যার সর্বশেষ সংযোজন মিয়ানমারের সামরিকজান্তা কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর  ওপর চলমান নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণ যা জেনোসাইড এর শামিল”। 

সভাপতির বক্তব্যে ড. প্রদীপ রঞ্জন কর বলেন,’একাত্তরের ৯ মাসে বাংলাদেশে যে নিশৃংসতা ও বর্বরতা সংগঠিত হয়েছে তা যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন,  তা ‘জেনোসাইড’ হিসেবেই চিহ্নিত হবে। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই’।

‘১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশনে জেনোসাইড শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে স্বীকৃত হওয়ার পর ঘোষনায় বলা হয় …no more genocide…..!!! অথচ কনভেনশন প্রতিষ্ঠার ৭১ বছরে সারাবিশ্বে জেনোসাইড সংঘটিত হওয়ার ভয়ঙ্করভাবে দীর্ঘ’, তিনি যোগ করেন।

সংবাদ সম্মোলন
সংবাদ সম্মোলন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কনস্যাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ এবং ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর সাবজনীন মানবধীকার সনদ গৃহীত হওয়ার পাশাপাশি  জাতিসংঘ প্রনয়ন করে জেনোসাইড কনভেনশন। এই কনভেনশন জেনোসাইড সজ্ঞায়িত হয় এবং জেনোসাইড শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে স্বীকৃত হয়।

জেনোসাইড সজ্ঞায়িত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে স্বীকৃত হওয়ার ৬৭ বছর পর জাতিসংঘ ২০১৫ সনে ৬৯ তম সাধারন অধিবেশনে ৯ ডিসেম্বরকে স্বীকৃতি দিল আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস হিসেবে। গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধে ঘোষিত এই আন্তর্জাতিক দিবসটি এমনই এক দিনে ধার্য্য করা হয়েছে যে দিনটিতে ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘে গণহত্যা প্রতিরোধ এবং শাস্তি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশন গৃহীত হয়েছিল। তাই বিশেষ এই দিনটির এই দ্বৈত তাৎপর্য রয়েছে। 

তিনি আরো বলেন-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের চালানো জেনোসাইড বড় গণহত্যা। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই নিউইয়র্ক টাইমস শিরোনাম করেছিল, ‘রক্তই যদি কোনো জাতির স্বাধীনতা অর্জনের মূল্য বলে বিবেচিত হয়, তবে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই অনেক বেশি মূল্য দিয়ে দিয়েছে।’ কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আজ পর্যন্ত এদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া চরম নরকযজ্ঞের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হয়নি। এ জেনোসাইড স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কাজ চলছে।’ 

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসের খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

এ জেনোসাইডের একদিন স্বীকৃতি হবেই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি জানান-জেনোসাইড স্বীকৃতি অর্জনে বিশ্বে যে সব দেশে জেনোসাইড সংঘটিত হয়েছে সে সব দেশের কনস্যান জেনারেলদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে।

জেনোসাইড ’৭১ ফাউণ্ডেশন, ইউএসএ নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা, যারা দীঘদিন যাবৎ জেনোসাইড ভিকটিমদের স্মরণ, জেনোসাইড অপরাধ সম্পর্কে গণসচেতনতা তৈরী, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, একাওুরের বাঙ্গালী জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় এবং জেনোসাইড প্রতিরোধে কাজ করে আসছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!