ধারাবাহিকভাবে কমছে প্রবাসী আয়
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ধারাবাহিকভাবে কমছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ফলে টান পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। অথচ বছরের শুরুতে মহামারির চরম সময়ে অর্থনীতির সব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও একমাত্র রেমিট্যান্স প্রবাহে ছিল ঊর্ধ্বগতি। এখন করোনার প্রাদুর্ভাব কমলেও গত তিন মাস ধরে দেশে রেমিট্যান্সের ঘাটতি শুরু হয়েছে।
প্রবাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশে জনশক্তি পাঠানো কমে যাওয়া ও হুন্ডির লেনদেন বাড়ায় কমছে রেমিট্যান্স। অন্যদিকে ব্যাংকাররা বলছেন- আগামীতে রেমিট্যান্সের গতি ফের বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশে এক মাসে রেমিট্যান্স আসে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। ওই বছরের মার্চে বাংলাদেশে শুরু হয় করোনা লকডাউন। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাকালীন বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের গতি ছিল রেকর্ড ঊর্ধ্বমুখী।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া রেমিট্যান্সের সেই গতি অব্যাহত ছিল ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ সময় প্রতি মাসে গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার।
আগস্টের পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রবণতা শুরু হয়। গত তিন মাসে (আগস্ট-অক্টোবর) মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৫১৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে আগস্টে ১৮১ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ও অক্টোবরে এসেছে ১৬৪ কোটি ডলার। এভাবে প্রতি মাসেই কমছে রেমিট্যান্স।
দেশে রেমিট্যান্স আসার সবচেয়ে বড় দেশ সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আরব আমিরাত, কুয়েত ও মালয়েশিয়া থেকে প্রতি মাসে রেমিট্যান্স আসা ধারাবাহিকভাবে কমছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স আসার গতি তুলনামূলক স্বাভাবিক রয়েছে। মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই মূলত আশঙ্কাজনকভাবে কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
চলতি বছর জুলাই মাসে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স আসে ৪৬ কোটি ডলার। পরের মাস আগস্টে ৪৩ কোটি, সেপ্টেম্বরে ৪০ কোটি ও অক্টোবরে আরও কমে এসেছে ৩৯ কোটি ডলার। সবচেয়ে বেশি কমেছে মালয়েশিয়ায়। জুলাইয়ে মালয়েশিয়া থেকে ১১ কোটি ডলার, আগস্টে ৯ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ৮ কোটি ডলার ও অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ৮ কোটি ডলার।
প্রতি মাসেই এভাবে কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেখানে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, সেখানে অক্টোবরে তা ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। দুই মাসের ব্যবধানে ২ বিলিয়ন ডলার কমেছে রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাকালে প্রবাসীরা জমানো অর্থ পরিবার-পরিজনের কাছে পাঠিয়েছেন। ওই সময় রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসে। এখন কিছুটা কম থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে তা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানতে চাইলে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস উল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। তাছাড়া যারা এখন বিদেশে রয়েছেন তাদের আয় আগের চেয়ে কমেছে। ফলে আগের মতো দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন না প্রবাসীরা। আমাদের বড় উৎস দেশগুলোর প্রবাসীরা এখনো স্বাভাবিকভাবে কাজ শুরু করতে পারেননি।
এর মধ্যে সৌদি আরব বিদেশিদের ব্যবসার অনুমতি বন্ধ করে দিয়েছিল। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেকে তাদের জমানো অর্থ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন সৌদি আরব আবার অনুমতি দিয়েছে। তাই প্রবাসীরা সেখানে বিনিয়োগ করছেন।
এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় করোনার সমস্যা এখনো কাটেনি। প্রবাসীদের নতুন করে যাওয়ার সংখ্যাও কমছে। এসব কারণে রেমিট্যান্সে ধারাবাহিক গতি নেই। উল্টো কমেছে। তবে আশাবাদী। বিশ্বব্যাংকও বলছে আগামী বছর প্রবাসীরা তাদের সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন। তখন রেমিট্যান্সের গতি পাবে, বাড়বে।
প্রতিবেদন: আলী রিয়াজ, বাংলাদেশ প্রতিদিন