ধর্ষণের সাজা : কোন দেশে কী
প্রতিটি দেশ, সমাজ, এমনকি প্রতিটি সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ষণকে সব থেকে বড় এবং ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। একই সঙ্গে ধর্ষণের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধানও সেভাবে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কিছু কিছু দেশে ধর্ষণের সাজা মারাত্মক না হওয়ায় ধর্ষণ এমন রূপ লাভ করে যে তা নিয়ে পুরো সমাজে অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই করোনা মহামারির মধ্যেও আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ অনেকটা যেন মহামারি আকার ধারণ করতে চলেছে। মনে হচ্ছে, নীতি আর নৈতিকতা হারিয়ে গেছে যেন এই পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে। তারপরও এই নৈতিকতার অবক্ষয় রুখতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
গুগল দেখে নিতে পারি কোন দেশে ধর্ষণের সাজা কী রকম।
চীন: সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী চীনে ধর্ষণের সাজা শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ডই। ধর্ষণ প্রমাণ হলেই আর কোন সাজা নয়, সরাসরি মৃত্যুদণ্ড। আর তা কার্যকর করা হয় অত্যন্ত দ্রুত। তবে এই শাস্তি নিয়ে বিরোধিতাও রয়েছে। কারণ, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর অভিযুক্ত নির্দোষ ছিল এমনও দেখা গেছে। আরেকটি শাস্তি রয়েছে পুরুষাঙ্গচ্ছেদ।
ইরান: ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ফাঁসি অথবা প্রকাশ্যে পাথর মেরে কার্যকর করা হয়।
আফগানিস্তান: দেশটি ধর্ষণের হার অত্যন্ত কম। তবে, সেখানে ধর্ষণ করে কেউ ধরা পড়লে সোজা মাথায় গুলি করে মারা হয়।
সৌদি আরব: ধর্ষণের সাজা ভয়ঙ্কর। এখানে ধর্ষককে প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হয়।। তবে তার আগে দোষীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে দেওয়া হয়।
গ্রিস: কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার একমাত্র শাস্তি আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড।
ইন্দোনেশিয়া: মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় শিশু ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ইন্দোনেশিয়ায় শিশু ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে দেশটির আইনে সংশোধন করেছে। তবে ২০১৬ সালের এক আইনে ইন্দোনেশিয়ায় যৌন নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে নপুংসক করা হবে বলে ডিক্রি জারি করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত: যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের সাজা সরাসরি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড। এক্ষেত্রে কোনো ক্ষমা নেই, ধর্ষণ করলেই অপরাধ প্রমাণের ৭ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পেতে হবে।
ফ্রান্স: নির্যাতিতার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ধর্ষকের সাজা ঠিক করা হয়। তবে, ধরা পড়ার পর এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে কমপক্ষে ১৫ বছরের কারাদণ্ড। অপরাধ গুরুতর হলে তা বেড়ে হতে পারে ৩০ বছরও।
বাংলাদেশ: বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন।
মিশর: ধর্ষককে বরাবরই যে কোনো জনাকীর্ণ এলাকায় জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
উত্তর কোরিয়া: ধর্ষণের সাজা শুধুই মৃত্যুদণ্ড। উত্তর কোরিয়া ধর্ষণের বিচার বা শাস্তির জন্য বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করে না। সেখানে ধর্ষককে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে মাথায় গুলি করে তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিমকে ন্যায়বিচার দেয়া হয়।
ইউক্রেন: কেউ ধর্ষণ করলে সেই ধর্ষককে শাস্তি হিসেবে নপুংসক করে দেওয়া হবে। দোষীদের যৌন সক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়ার আইন পাস করা হয়েছে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট।
নেদারল্যান্ডস: যে কোনো ধরনের যৌন নিপীড়ন, এমনকি অনুমতি ছাড়া জোর করে চুম্বন করাও নেদারল্যান্ডসে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। এর শাস্তি হিসেবে অপরাধীকে বয়সের ওপর ভিত্তি করে ৪ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্র: দুই ধরনের আইন প্রচলিত – অঙ্গরাজ্য আইন এবং ফেডারেল আইন। ধর্ষণ মামলাটি ফেডারেল আইনের অধীনে পড়লে ধর্ষককে অর্থদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়ে থাকে। তবে অঙ্গরাজ্য আইনের অধীনে পড়লে সাজার প্রকৃতি নিশ্চিত নয়। কেননা দেশটির একেক অঙ্গরাজ্যে ধর্ষণের শাস্তি একেক রকম। যেমন আলাবামা অঙ্গরাজ্যে শিশু ধর্ষণ রুখতে নতুন এক আইন পাস করা হয়েছে। ওই আইনে, ১৩ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে ধর্ষণ করলে ধর্ষকের শরীরে রাসায়নিক ইনজেকশন প্রবেশ করিয়ে নপুংসক করা হয়।
রাশিয়া: ধর্ষণের শাস্তি কমপক্ষে ৩ বছরের কারাদণ্ড। ভিকটিমের ক্ষতি কতটা গুরুতর, তার ওপর নির্ভর করে ধর্ষকের সাজা বাড়িয়ে ৩০ বছর পর্যন্ত করা হতে পারে।
নরওয়ে: ধর্ষকের সাজা ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির ক্ষতির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ৪ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড। সম্মতি ছাড়া যে কোনো যৌনতা ধর্ষণের মধ্যে পড়ে।
ইসরায়েল: দোষ প্রমাণ হলে ১৬ বছরের কারাদণ্ড। সে দেশে ধর্ষণের সংজ্ঞা কিছুটা বর্ধিত। অন্য যৌন নির্যাতনও এর অন্তর্ভুক্ত।
মঙ্গোলিয়া: ধর্ষিতার পরিবারের হাত দিয়ে ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় দেশটিতে।