দেহব্যবসায় বাধ্য করায় সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পীর মামলা
বিচারের মুখোমুখি ভারতীয় দম্পতি
সিঙ্গাপুরে ক্লাব ড্যান্সারের পেশার এক বাংলাদেশি তরুণীকে জোর করে দেহব্যবসায় নামানোর অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় এক দম্পতির বিরুদ্ধে। ওই ভারতীয় দম্পতির একটি ক্লাবে ড্যান্সার হিসেবে কাজ করতেন বাংলাদেশি তরুণী। কিন্তু পরে তাকে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয় বলে দেশটির আদালতে মামলা করেন ঔ তরুণী।
প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য রাজেশ (৩১) এবং তার স্বামী মালকার সাভলারাম আনান্ত (৫১) নামে ভারতীয় এই দম্পতির বিরুদ্ধে দেহ ব্যবসার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া মানবপাচার আইনেও তাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়।
আদালতের অভিযোগে বলা হয়, প্রিয়াঙ্কা এবং তার স্বামী মালকার তিন বাংলাদেশি নারীকে তাদের ক্লাবে ড্যান্সার হিসেবে নিয়োগ দেন। এর মধ্যে একজনকে দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য করেন।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) এই মামলার রায় হওয়ার কথা থাকলেও জেলা জজ শফিউদ্দিন সারুওয়ান তদন্ত করে আরো প্রমাণ দাখিলের আদেশ দিয়েছেন। এবং চুড়ান্ত রায়ের তারিখ আগামী ১৫ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন।
তরণীটির পক্ষে উপ সরকারি আইনজীবি জেমস চিউ এবং রিমপ্লেজিত কৌর আদালতকে জানান, মালকার (৫১) শহর এলকার একটি হিন্দি বিনোদন ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সে নিজেই ক্লাবটির প্রতিদিনের কাজ দেখাশোনা করে। এবং বাংলাদেশ ও ভারত থেকে স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে নারীদের নিয়ে আসেন। মালকার আরেকটি হিন্দি বিনোদন ক্লাবও চালায়। আর তার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা তাকে তার কাজে সহায়তা করেন।
বাংলাদেশি ওই নৃত্যশিল্পী ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে সিঙ্গাপুর আসেন ওই দম্পতির একটি ক্লাবে নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। অপর দুই বাংলাদেশি নারী ওই ভারতীয় দম্পতির অন্য ক্লাবটিতে নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করেন।
এই তিন বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পীকেই মাসে ৬০ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়ার কথা ছিলো। তবে ওই নৃত্যশিল্পীরা নাচার পর খদ্দেরদের কাছ থেকে যে বখশিশ পেতেন তা তাদেরকে না দিয়ে ওই ক্লাব মালিক দম্পতি নিয়ে নিতেন।
ওই তিন বাংলাদেশি নারীকে প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ক্লাবে গিয়ে নাচতে হতো। কিন্তু তাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়া হতো না। এছাড়া ওই দম্পতির সঙ্গেই একটি ফ্ল্যাটে থাকতে হতো তাদের। যাতে তারা পালিয়ে যেতে না পারে।
যৌনকর্মীর কাজ করানোর অভিযোগ তােলা নৃত্যশিল্পী আরও জানান, সিঙ্গাপুরে আসার একমাস পরই ক্লাব মালিকের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা তাকে বলেন, মাসে অন্তত ১০ হাজার ডলার বখশিশ আদায় করতে হবে কাস্টমারদের কাছ থেকে। আর নয়তো তাকে তার পুরো বেতন (৬০ হাজার টাকা) দেওয়া হবে না। এছাড়া তাকে খদ্দেরদের সঙ্গে ক্লাবের বাইরে যেতে হবে। অর্থাৎ, যৌনকর্মীর কাজ করতে হবে।
একথা শুনে ওই বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পী দেশে ফিরে আসতে চাইলে প্রিয়াঙ্কা তাকে বলেন, ৪ লাখ টাকা দিলেই শুধু তাকে দেশে ফিরে আসতে দেওয়া হবে।
এছাড়া ওই বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পীকে লোভ দেখানো হয়, সে যদি যৌনকর্মীর কাজ করে তাহলে তাকে সেই আয়ের অর্ধেক টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু চারজন খদ্দেরের সঙ্গে যৌনকর্ম করার পরও তাকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। ফলে ২০১৬ সালের মে মাসের শেষদিকে ওই বাংলাদেশি নারী ক্লাবের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান এবং আদালতে মামলা করেন।
সিঙ্গাপুরের দৈনিক স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, ওই ভারতীয় দম্পতিকে মানব পাচার আইনে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং ১ লাখ ডলার জরিমানা এবং ছয়টি বেতের বাড়ির শাস্তি দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে তারা ৪০ হাজার ডলারের বিনিময়ে জামিনে আছেন।
নিরাপত্তার স্বার্থে ওই বাংলাদেশি নারী এবং তার কর্মক্ষেত্রের কথা গোপন রাখা হয়েছে আদালতের নির্দেশে।