দেশের অর্থনীতির ওপর আস্থা হারাচ্ছেন লেবানিজ প্রবাসীরা
অধ্যাপক হাসান ডিয়াবের নেতৃত্বে নবগঠিত লেবানিজ সরকারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে আঞ্চলিক ও বিশ্ব মিডিয়ায় লেখালেখি কম হয়নি। এ নিয়ে আছে শিরোনামের ছড়াছড়ি।
রাষ্ট্র এবং ক্ষমতাশালী বহুজাতিক সংস্থার এসব কথা ভালোই এগুচ্ছে। তবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা লেবানিজ প্রবাসীদের সন্তুষ্ট করার কাজটি প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীসভার উপর দিয়েছেন। তবে মন্ত্রীসভা আদৌ গঠিত হয় কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাওয়ায় প্রবাসীদের বিষয়টি চরম উপেক্ষিত থেকে গেছে।
এটি সবারই জানা আছে, লেবাননের প্রবাসীরা প্রতি বছর দেশে কয়েক বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠায়। ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সের গার্বিস ইরানিয়ানের মতে, ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ৯.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌছুনোর পরে ধীরে ধীরে ২০১৮ সালে তা ৭.৭ বিলিয়ন ডলারে এসে নামে। তার আশঙ্কা, অর্থনীতির অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় পরের বছর রেমিট্যান্স কমে ৬.৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।
একদিকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লেবানিজ এখনও সুনির্দিষ্ট মন্ত্রিসভার ব্যাপারে ধোয়াশায় আছেন অন্যদিকে সরকারের এসব ব্যাপারে প্রবাসীদেরও কোন মত দেয়ার সুযোগ নেই।
প্রবাসীরা এক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায়। অন্যথায়, তাদের পাঠানো অর্থ আত্মীয়-স্বজনরা ঠিক মত পাবেন কিনা সে বিষয়ে তাদের সন্দেহ থেকেই যাবে। সাময়িকভাবে লেবাননের ব্যাংকগুলো তাদের সেবাগ্রহীতাদের সম্পূর্ণ রেমিট্যান্স তুলে নেয়ার অনুমতি দিয়েছে। তবে এই অবস্থা কত দিন চলবে তা কারও জানা নেই।
অনেক প্রবাসী লেবানিজ ব্যবসায়ী এবং মহিলা যারা দেশের বাইরে কাজ করছেন তাদেরকে উৎসাহি করতে ব্যাংকগুলো রেমিটেন্সে জমা করা অর্থে উচ্চ সুদ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
দু:সহ অর্থনৈতিক সংকট এবং কিছু ব্যাক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠানের মুলধন নিয়ন্ত্রণের কঠোর বিধিমালার কারণে এসব প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা এখন দেশের অর্থনীতির ওপর আস্থা হারিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি যে নিরাপদ এমন ধারণা তাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে আরও অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে।
কিছু রাজনীতিবিদ সরাসরি প্রবাসীদের স্বল্প পরিমাণে অর্থ দেশে পাঠানোর আহ্বান করলেও বাস্তব পরিস্থিতিতে এটি সম্ভব নয়। তাই রাজনৈতিক নেতার যেভাবে বিশ্বকে বোঝানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের ততটাই প্রচেষ্টা প্রবাসীদের পেছনে দেয়া উচিত।
প্রবাসীদের দেশে ফিরে না আসার অনেকগুলোর মধ্যে একটি প্রধান কারণ হল, দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র অকোজো হয়ে যাওয়া। তবে দেশে বেড়াতে এসে চরম দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা দেখে আশাহত হলেও এসব মানুষেরা এখানে অর্থ খরচ ও পাঠানোর ব্যাপারটি অব্যাহত রেখেছে।
কিন্তু দুখজনক হল এখন তাদের এই অর্থ পাঠানোর আর তেমন কোন কারণই বাকী নেই। যদি তারা পুরোপুরি রেমিটেন্স পাঠানো থামিয়ে দেয় তবে দেশটিতে বিদেশী বিনিয়োগের অবশিষ্ট উৎসটিও বিপর্যয়ে পড়বে।
রিপোর্ট : ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন থেকে ফায়সাল করিমের অনুবাদ