দুর্বল হয়েও ওমানজুড়ে প্রবল বৃষ্টি ঝরাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় কিয়ার
দুর্বল হয়ে যাওয়ায় বুধবার ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় কিয়ারকে ক্যাটাগরী ৪ থেকে ক্যাটাগরী ১ নামিয়ে আনা হয়। এটি ওমানে সরাসরি প্রভাব ফেলবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ন্যাশনাল মাল্টি হ্যাজার্ড আর্লি ওয়ার্নিং সেন্টার (এনএমএইচইউইউসি) এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী কিয়ার ওমান পার হওয়ার কোনও আশংখা নেই। তবে এর পরোক্ষ প্রভাব কয়েকদিন ধরে থাকবে।
কিয়ার প্রভাবে দক্ষিণ ওমান জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে রাজধানী মাসকাট, উত্তর ও দক্ষিণ বাটিনাহ প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এনএমএইচইউইচসির আবহাওয়া বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, ৩০ অক্টোবর কায়ার আরবীয় সাগরের পশ্চিম মধ্যভাগে দ্রাঘিমাংশে .২২.২ ডিগ্রি ই এবং অক্ষাংশ ১৯.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে অবস্থান করে। কেন্দ্রের চারপাশে বাতাসের গতিবেগ আনুমানিক ৪৮ থেকে ৮২ মাইল এর মধ্যে ছিল।
ঘূর্ণিঝড়টি ওমানের উপকূলে (রাস মাদ্রাকা) বরাবর নিকটতম স্থান থেকে প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এতে আরও বলা হয়েছে আগামি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আরো দক্ষিন-পশ্চিমে সরে গিয়ে ওমানের সমান্তরালে বয়ে যাবে।
‘রাস মাদ্রাকা থেকে এর কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ১২০-২৫০ কিলোমিটার হতে পারে তবে তা সুলতানাতের উপকূল অতিক্রম করার কোন সম্ভাবনা নেই। এই ঝড়টি আরও দূর্বল হয়ে রবিবার ওমান এবং ইয়েমেনের দক্ষিণে সোকোত্রা পেরোনোর সম্ভাবনা রয়েছে।
এ সময় দক্ষিণ শরকিয়াহ, আল ওস্তা এবং ধোফারের উপকূল বরাবর সমুদ্র উত্তাল থাকবে এবং জোয়ারের উচ্চতা ৬-৮ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ওমানের অবশিষ্ট উপকূলজুড়ে সমুদ্র মাঝারি থেকে উত্তাল থাকবে এবং জোয়ারের উচ্চতা ৩ মিটারের পর্যন্ত বৃদ্ধি বেড়ে উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করার আশঙ্কা রয়েছে
ওমানের উপকূলীয় অঞ্চলের সেই অংশে ঘূর্ণিঝড় কিয়ার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এমন শত শত মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রয়েল ওমান পুলিশ (আরওপি)-এর এক কর্মকর্তা বলেছেন,” সিভিল ডিফেন্স ও অ্যাম্বুলেন্সের উপ-কমিটি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে ওমানে সকল প্রদেশ জুড়ে আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করছে ।”
এক বিবৃতিতে ওমানের পাবলিক অথরিটি ফর সিভিল এভিয়েশন (পিএসিএ) বলেছে, “ওমান সাগর ও আরব সাগরের উপকূলগুলি দুর্ভোগের সংস্পর্শে আসে এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র এবং উচ্চতর তরঙ্গ এবং সমুদ্রের জল আরও ভেতের চলে আসতে পারে।
জেলেদের মাছ ধরার নৌকার সুরক্ষা সকল নাগরিককে বাচ্চাদের চোখে চোখে রাখতে এবং বিপদ এড়াতে বিদ্যুতের খুঁটি এবং সড়কবাতি স্পর্শ না করাসহ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছে পিএসিএ।
একমাত্র বাটিনাহ প্রদেশে ১৭০ টিরও বেশি পরিবার উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যারা কিয়ারের প্রভাবের মুখোমুখি হবে বলে আশংখা করা হচ্ছে এবং তাদের আরও ভেতের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ভারী বৃষ্টিপাতে প্লাবিত নিম্নাঞ্চলগুলোর স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। পানিতে ডুবে থাকায় অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ (বলিদিয়া), ওমান রয়েল পুলিশ (আরওপি)সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা জনগণের দূর্ভোগ কমাতে সব ধরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আরওপি জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ সড়ক-মহাসড়কের উপর পড়ে থাকা পাথর সরানোর কাজ করছে। সকলকে মহাসড়কে চলাচলে সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ জানানাে হচ্ছে।
এদিকে, আরব সাগরে মালদ্বীপের নিকটে ইতিমধ্যে আরও একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে যা পরের কয়েক দিনের মধ্যে একটি গভীর নিম্নচাপ ও পরে একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিরাজমান এই ঝড়ের বিষয়ে মেট ওমান বলেছে, দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগরে গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। ওমানের উপকূলে এটি ২,৫০০ কিলোমিটার দূরে এবং আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে কোনও প্রভাব পড়বে না বলে আশা করা হচ্ছে।