দু’চোখ হারিয়ে দেশে ফিরলেন ওমানপ্রবাসী শহীদুল্লাহ

দু’চোখ হারিয়ে দেশে ফিরলেন ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশি এক রেমিটেন্সযোদ্ধা। দুর্ভাগা ওই প্রবাসীর নাম শহিদুল্লাহ (৫২)। তিনি লক্ষীপুর জেলার সদর থানার শেরপুর গ্রামের আমিনুল হকের ছেলে।

গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ) রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে একজন সহযোগীসহ রাজধানী মাসকাট থেকে দেশে ফিরে যান তিনি।

ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের মানবিক সহায়তায় দেশে ফিরতে পেরেছেন দৃষ্টিহীন মো. শহীদুল্লাহ। তাকে দেশে পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থা করে মাস্কাট দূতাবাস ।

Travelion – Mobile

জীবিকার তাগিদে নয় বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত হতে অবৈধ পথে ওমানে আসেন মো.শহিদুল্লাহ। রাজধানী মাস্কাটের বিভিন্ন জায়গায় তিনি কখনো গাড়ি পরিষ্কার কিংবা রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসাবে কাজ করতেন।

২০১৮ সালের দিকে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিচিত বাংলাদেশিরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। নিরাময়ের জন্য উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও তা সম্ভব হয় নি। কারণ ভিসাহীন অবৈধভাবে বসবাস করায় ওমানের ভালো কোন হাসপাতালেও নেওয়া যায়নি। একটা পর্যায়ে শহিদুল্লাহ দুই চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেন।

চরম দুর্ভিসহ জীবন পার করছিলেন প্রবাসের মাটিতে। কখনো কেউ কিছু খেতে দিলে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন পার করছিলেন।

মাসকাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দৃষ্টিহীন মো শহীদুল্লাহকে বিদায় জানান বাংলাদেশ দূতাবাসের আইন সহায়তাকারী  মাসুদ করিম
মাসকাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দৃষ্টিহীন মো শহীদুল্লাহকে বিদায় জানান বাংলাদেশ দূতাবাসের আইন সহায়তাকারী মাসুদ করিম

দেশে পরিবারের কাছে যাওয়ার ব্যকুলতা থাকলেও ভিসাহীন হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে মাস্কাটে বাংলাদেশে দূতাবাসের দারস্থ হলেন শহিদুল্লাহ।

দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর হুমায়ন কবিরের তত্বাধানে আইন সহায়তাকারী মাসুদ করিম শুরু করেন শহিদুল্লাহকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া ।

অবৈধভাবে বসবাস করাতে তার যাবতীয় কাগজপত্র তৈরিসহ, দেশে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া শেষ করে বিমানে উঠিয়ে দেয়া পর্যন্ত বন্দোবস্ত করেন মাসুদ করিম।

শরীফ নামে তার পরিচিত এক প্রবাসীসহ দেশের উদ্দ্যেশে পাড়ি দেন তিনি। মাসকাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান মাসুদ করিম।

বিদায়বেলায় বিমানবন্দরে শহিদুল্লাহ বলেন,”দু’চোখ হারিয়ে প্রায় এক বছর ধরে ওমানে মানবেতর জীবন পার করছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে দূতাবাস এগিয়ে এসেছে। তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।”

“বাড়ি যেতে পারছি তার আনন্দ থাকলেও মনের ভেতর প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে এটা ভেবে যে আমার একমাত্র ছেলে আর দুই মেয়ে,আমার পরিবার, প্রিয়জন, প্রিয় মাতৃভূমিকে যে আমি আর এই জীবনেও দু’চোখ ভরে দেখতে পাবো ন”-দৃষ্টিহীন দু’ চোখে পানি গড়িয়ে আসা জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া এই রেমিট্যান্সযােদ্ধার আর্তনাদ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!