দিবসই প্রমাণ করে নারী এখনো সমতায় পৌঁছেনি

সফল কূটনীতিক আবিদা ইসলামের ভাবনা

নারীরা এখন শুধু রেঁধে কিংবা চুল বেঁধেই দিন কাটান না। এখন সবখানেই নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন মেধা, যোগ্যতা, বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তার আর দক্ষতা গুণে । রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে নারীর নিরবিচ্ছিন্ন বিচরণই শুধু নয় শীর্ষ ও দায়িত্বপূর্ণ পদে আসীনও হচ্ছেন, সফলতা দেখাচ্ছেন। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তেমনি একজন সফল নারীর ভাবনা তুলে ধরা হচ্ছে যিনি শৈশব থেকেই জীবন সারথী করেছেন চ্যালেঞ্জকে, হেঁটেছেন অনিন্দ্য সুন্দরের পথে, সত্যের পথে, বিমোহিত আলোকিত পথে। নিজেকে কল্পনার রঙতুলিতে শুধু আকেঁননি, প্রতিমুহূর্তে গড়েছেন প্রতিকূল স্রোতের বাধা ডিঙিয়ে। আকাশযাত্রার আন্তর্জাতিক সম্পাদক ওমর ফারুক হিমেলের নেয়া সাক্ষাতকারে বিস্তারিত।

চ্যালেঞ্জিং জীবন বেছে নেবেন, দশের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করবেন-সেই কাজের জন্য ঘুরে বেড়াবেন বর্ণিল থেকে অধিকতর বর্ণিল পথে, ছুটবেন দেশের জন্য নানান দেশে, নানান মহাদেশে। সেই ব্রত আর লক্ষ্য নিয়ে আশৈশব বেড়ে ওঠা এই কূটনীতিকের জীবনটা সতিই আজ দারুণ চ্যালেঞ্জিং, বর্ণময়-ছন্দময় ঠিক ঠিক যেমনটা তিনি চেয়েছিলেন; দেশকে, দেশের মানুষকে অহর্নিশ দিতে দিতে জীবনটাকে উপভোগ যেমন করছেন, তেমনি ভাঙছেন একে একে সাফল্যর সিঁড়ি। যে অনন্য সিঁড়িতে তিনি সমুন্নত রেখেছেন বাংলাদেশকে। বলছিলাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিনিধিত্ব করছেন বিশ্বের ১২তম অর্থনীতির দেশ, এশিয়ার অন্যতম ড্রাগন দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামের কথা।

দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারে আবিদা ইসলামের জন্ম। বাবা প্রয়াত নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সফলতা ও সুনামের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। মা সেলিনা ইসলাম ছিলেন উন্নয়নকর্মী ।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট’র শহীদ আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি, রাজধানীর হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন আবিদা ইসলাম। এরপর অস্ট্রেলিয়ার মনাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে  রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১৫ তম ব্যাচের মেধাবী এ সদস্য ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা, দূরপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আমেরিকা-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও জঙ্গিবাদ এবং প্রশাসন। তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ মিশন, কলম্বো এবং ব্রাসেলসে মিশনে কর্মরত ছিলেন। তিনি কলকাতা মিশনে বাংলাদেশের প্রথম নারী ডেপুটি হাইকমিশনার (হেড অফ মিশন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।সর্বশেষ ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা উইংয়ে দেড়বছর কর্মরত থাকার পর ২০১৭ সালে ২১ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত হন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার এবং সামিটে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বরেণ্য এ কূটনীতিক। ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জননী পেশাদার এ কূটনীতিক আকাশযাত্রার সঙ্গে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কোরিয়ান ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর সেমিনার হলে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-কূটনৈতিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কোরিয়ান ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর সেমিনার হলে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-কূটনৈতিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

আকাশযাত্রা : ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আপনার কাছে নারী দিবস মানে কি?
আবিদা ইসলাম : নারী দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো নারী-বৈষম্য, নারী-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীদের জাগ্রত করা, প্রতিবাদ গড়ে তোলা । তাই আজো যখন নারীদের জন্য আলাদাভাবে একটি দিবস পালন করা হচ্ছে- তার অর্থই হচ্ছে সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার এখনো সম-অধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন সমাজে বর্তমানে নারীদের সুযোগ- সুবিধা বেড়েছে, তাদের অধিকার, সম্মান এবং মর্যাদা বেড়েছে। কিন্তু সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি অসমতা এবং অর্থনৈতিক বঞ্চনা এখনো রয়ে গেছে। যেমন কাজের ক্ষেত্রে সমান মজুরি নিশ্চিত করা, সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তাছাড়া, ঘরে-বাইরে নারীরা সহিংসতা, যৌন নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন-যা করোনা মহামারীর সময়ে আরো ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। ১৯১০ সালের ৮ই মার্চ প্রথম নারী দিবস পালিত হয়েছিল। ১১০ বছর পরেও আমরা নারী দিবস পালন করছি- হয়ত এমনিভাবে আরো অনেক বছরের প্রয়োজন হবে নারীদের সমতার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। তাই, ততদিন আমাদের এই দিবস পালন করে যেতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম শহীদ মিনারে প্রথমে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন
দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম শহীদ মিনারে প্রথমে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন

তবে, নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশে সরকার নারী শিক্ষার বিস্তারে, নারীর দারিদ্র্য-বিমোচনে, তাদের বাল্যবিবাহ রো্ধে, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে, নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীর প্রতি সবধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। নারীর অধিকার রক্ষায় সরকার বিভিন্ন আইনও প্রনয়ন করেছে যেমন- ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১’, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩, ডিএনএ আইন-২০১৪, যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮, ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ ও ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা-২০১৮’ । সেইসাথে, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে।
কোরিয়ার চুংবুক বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক প্যারাসাইট রিসোর্স ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম
কোরিয়ার চুংবুক বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক প্যারাসাইট রিসোর্স ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

আকাশযাত্রা : বর্তমান সময়ে নারীরা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে, এটাকে কীভাবে দেখেন?
আবিদা ইসলাম : প্রতিবন্ধকতা নারীদের জন্য নতুন কোন বিষয় নয়। আদিকাল থেকেই সব সময় বৈষম্যের শিকার হয়ে এসেছেন, বঞ্চনার শিকার হয়েছেন এবং এখনও হয়ে চলেছেন- হয়তো, তার মাত্রা এবং তার প্রকৃতি ভিন্ন। নানা ধরণের প্রতিকূলতা, নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা জয় করেই কিন্তু নারীরা এগিয়ে গেছেন এবং আজো এগিয়ে যাচ্ছেন।

আকাশযাত্রা : বর্তমান সময়ে নারীদের অবদানকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
আবিদা ইসলাম : সমাজ এবং সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে নারীরা সব সময় অবদান রেখে চলেছেন। তাদের অবদানের জন্যই মানব সভ্যতা এখনো টিকে রয়েছে। তবে এ যুগে নারীদের পরিবার ও কর্মস্থল- দুই দিকই একই সাথে সামলাতে হয়, সমান নজর দিতে হয়। আগে যখন গৃহস্থালী কাজের মধ্যে বন্দী ছিলেন, তখন নারীর দায়িত্ব এবং কর্তব্য সংসারের গন্ডীর মধ্যেই সীমা বদ্ধ ছিল। কর্মস্থলে এসে নারীর দায়িত্ব এবং কর্তব্য এখন দ্বিগুন হয়েছে। কারণ, কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি গৃহস্থালী কাজের দায়িত্বও তাকে পালন করতে হয়। তবুও নারীরা থেমে নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, কূটনীতি, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী, শান্তিরক্ষা মিশনসহ সর্বক্ষেত্রে নারীরা দক্ষতার সাথে, সফলভাবে কাজ করে চলেছে।

কোরিয়ান ভাষায় অনূদিত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণের পুস্তিকার মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম
কোরিয়ান ভাষায় অনূদিত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণের পুস্তিকার মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

আকাশযাত্রা : আপনি কূটনৈতিক পেশায় আছেন অনেক বছর। এই পেশায় নারীদের পদচারণা কেমন?
আবিদা ইসলাম : আমরা যখন এই পেশায় যোগ দেই, তখন নারী কূটনীতিক সংখ্যায় ছিল খুবই কম। পঁচিশ বছর আগে এই পেশায় যখন যোগদান করেছিলাম তখন আমরা গল্প শুনেছি যে আমাদের আগে অনেক নারীই এই পেশায় যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, পরিবার হয়তো তখন তাদের অনুকূলে ছিল না। ফলে, অত্যন্ত পরিবার ও কর্মস্থল সামলানো তাদের পক্ষে দুরুহ হয়ে পরেছিলো এবং তারা এই পেশা পরবর্তিতে পরিবর্তন করেছিলেন। তবে এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এই পেশায় নারীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং বাড়ছে। তারা বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এবং সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। নারীদের এই সাফল্যে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত।
 বিভিন্ন কর্মসূচিতে দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

বিভিন্ন কর্মসূচিতে দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

আকাশযাত্রা : আপনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কোরিয়ায় প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে আপনার অনুভূতি কি?
আবিদা ইসলাম : রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, তিনি নারী না পুরুষ সেভাবে আমি কখনো ভেবে দেখিনি। আমার মনে হয় সেভাবে কারো ভাবাও হয়তো সমুচীন নয়। আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশ সরকারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে ভেবেছি যাকে সরকার সুনির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে। তাই প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমার আলাদা করে কোন অনুভূতি নেই।
সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম ও জর্জ ম্যাশন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডিন ড. রবার্ট ম্যাটজ
সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম ও জর্জ ম্যাশন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডিন ড. রবার্ট ম্যাটজ

আকাশযাত্রা : বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
আবিদা ইসলাম : নারীর ক্ষমতায়নে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশের পুনর্গঠনে নারীদের সম্পৃক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে এবং রাষ্ট্রীয় নানা আইনের মাধ্যমে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি প্রয়োজ়নীয় ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। আর অর্ধেক এই জনগোষ্ঠিকে অর্থনীতির মূল ধারার বাইরে রেখে দেশের টেকসই উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি থেকে সরকার বিভিন্ন নারী-বান্ধব নীতি গ্রহণ করে। নারীর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি নারী-বান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কারণে, রাজনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সর্বক্ষেত্রে নারীরা এখন সদর্পে বিচরণ করছেন, যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন।
সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের অনলাইন বি.এ (পাস কোর্স) কার্যক্রম উদ্বোধন
সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের অনলাইন বি.এ (পাস কোর্স) কার্যক্রম উদ্বোধন

আকাশযাত্রা : বর্তমান কর্ম পরিবেশের সহকর্মীরা কতটুকু সহায়ক?
আবিদা ইসলাম : বর্তমান কর্মপরিবেশ অত্যন্ত অনুকূল। নারী হিসেবে আমি কোন বৈষম্যের স্বীকার হইনি। আমার যে সহকর্মীরা ছিলেন এবং এখন আছেন,তাদের আন্তরিকতা আর সম্মানেই আমার এতটুকু আসা, মসৃন হয়েছে এগিয়ে চলা। পরিবারের তরফ থেকেও সবসময়ই সহযোগিতা পেয়েছি। সুতরাং সেদিক থেকে আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবতী।

Travelion – Mobile

আকাশযাত্রা : পরিবার ও কর্মস্থলে পুরুষের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?
আবিদা ইসলাম :
পরিবার ও কর্মস্থলে এখনো পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়ে গেছে যা পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের পরিপূর্ণ একজন মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, এবং সেভাবে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। সেইসাথে, তাদের প্রতি যথাযথ মর্যাদা এবং সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তাছাড়া, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল সম্পদে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে, সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে। নারী এবং পুরুষের মধ্যে অধিকারের এই সমতা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জ্রুরুরী। অচিরে বাংলাদেশে সেই সুদিন আসবে-এই প্রত্যাশা করি।

বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানের দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম
বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানের দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

আকাশযাত্রা : আপনার ২৫ বছরে কূটনীতির এই বর্ণিল দুনিয়ায় পথে চলার কথা বলছিলেন। ব্যবহারের পরিক্রমায় আপনার কূটনীতিক জীবনের স্মরণীয় কিছু পাঠকদের জানাতে চাই।
আবিদা ইসলাম : আমার বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমার পদায়ন নিশ্চিত হলে বাবা বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত তার সহকর্মীদের জানান। তারা যখন জানলেন যে তাদের সহকর্মীর কন্যা এই মন্ত্রণালয়ে যোগদান করতে যাচ্ছে, তখন তারা আমার বাবাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে আমি যাতে এই চাকুরি বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু করি (স্কুল অথবা কলেজের শিক্ষকতা) অথবা সরকারের অন্য কোন ক্যাডারে যোগদান করি। কারণ পরিবার সামলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ করাটা আমার জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়বে। আমার মা অত্যন্ত মুক্ত মনের মানুষ ছিলেন এবং তিনি সেসময় আমার পাশে দাড়িয়েছিলেন। তিনি কাজে যোগ দিতে উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন, চেষ্টা করে দেখতে, সফল না হলে অন্য কিছু ভাবা যাবে। তখন পরিবারের এই সহযোগিতা না পেলে আমার জীবন হয়তো অন্য রকম হত।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!