দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত ১২৬১, মারা গেছে ১২ জন

যৌথবাহিনীর এক মার্কিন সৈন্যও আক্রান্ত

চীনের পর কোভিড ১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ কোরিয়া। দিন যতই যাচ্ছে দেশটিতে মৃতের ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

দেশটির সরকার জানিয়েছে, বুধবার বিকেল পর্যন্ত এ ভাইরাসে মারা গেছে ১২ জন আর আক্রান্ত ১২৬১ জন। এদের মধ্যে থাইনাম নামের একটি হাসপাতাল এবং দায়েগুর ধর্মীয় এক গোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাসটির প্রকোপ ঠেকাতে যখন সরকার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তখন নতুন করে এই ভাইরাসে এক মার্কিন সৈন্যের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে বেড়েছে উদ্বেগ। এর আগে মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-কোরিয়া যৌথ বাহিনীর এক সদস্যের বিধবা স্ত্রীর ভাইরাসে আক্রান্তের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব মিডিয়ায়।

কোরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্র (কেসিডিসি) আজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটিতে বুধবার নতুন করে ১৬৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া মোট আক্রান্তের ৮১ শতাংশ বা ১০২৬ জনই দায়েগু এবং উত্তর গাইয়েংসাং প্রদেশের বলে জানিয়েছে তারা।

Travelion – Mobile

তাদের আশঙ্কা সামনের দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ২ লাখ ১০ হাজার জনের সকলকেই পরীক্ষার আওতায় আনা হলে এবং দায়েগুর বাইরেও নতুন নতুন আক্রান্তের আশংকা দেয়ায় উদ্ভুত পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।

দেশটির সংসদীয় অধিবেশনে বুধবার, স্বাস্থ্য ও কল্যাণমন্ত্রী পার্ক নেঙ-হু বলেন “চীন থেকে কোরিয়ায় প্রবেশ করা এক কোরিয়ান থেকেই করোভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ভিন্ন এক বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরীয় সরকার জানিয়েছে, দায়েগুর খ্রিস্টান সম্প্রদায় শিনচেওয়ানজি চার্চের ১২০০ জনের শরীরে ইতিমধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তাদের পরীক্ষা আগামী এক দিনের মধ্যেই শেষ করে আক্রান্তদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানায় তারা। তবে এই ধর্মীয় গোষ্ঠির ২ লাখ ১২ হাজার সদস্যের তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাস্থ্য উপমন্ত্রী কিম গাং লিপ। তিনি বলেন, “তাদের সকলকেই ভাইরাস পরীক্ষায় আওতায় আনা হবে যা আগামী দু ‘ সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করা হবে।

এদিকে সিউলে বুধবার একদিনেই এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ থেকে এক লাফে ৪৯ এ ঠেকেছে। সিউলের মিওংসুং চার্চের এক যাজক মঙ্গলবার আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর উদ্বেগ আরো বেড়েছে । স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে ঐই যাজকের সান্নিধ্যে আসা ৩৪৮ জনকে শনাক্ত করেছে। ইউনপিয়ং সেন্ট মেরিস হাসপাতালে আরও দু ‘ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যেখানে বর্তমানে ৫০২ জন রোগী এবং ২২২৯ জন –কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে। সবমিলিয়ে এ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত মোট সাতজন আক্রান্তের সংবাদ নিশ্চিত হওয়া গেলেও নতুন করে আরও আক্রান্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বুসান-এ বেশির ভাগ আক্রান্ত ব্যাক্তি ওনচিয়নের একট চার্চের বলে জানা গেছে। সেখানে উহান বসবাস করা এক ব্যাক্তির ১৯ বছর বয়সী এক ছেলে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত এই কিশোরের শরীরের ভাইরাস শনাক্তের আগে সে ১৫০ জনের একটি দলের সাথে দুই দিনের সফরে গিয়েছিল যা নিয়ে আরো আক্রান্ত সংখ্যা আশংকা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বুধবার তারা নিশ্চিত হয়েছে প্রথমবারের মত তাদের কোনো সদস্য এই ভাইরাসে আক্রান্ত। তারা জানায় যুক্তরাষ্ট্র-কোরিয়া যৌথবাহিনীতে কর্মরত আক্রান্ত সেনা সদস্যের বয়স ২৩ বছর যিনি দায়েগু থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ক্যাম্প ক্যারোলে নিয়োগপ্রাপ্ত। কিভাবে এই মার্কিন সেনার মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ল তা নিয়ে কোন নির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও তার ক্যাম্পটির কাছেই একটি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে। সেই কেন্দ্রতেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে বলে জানা গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৮ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা রয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-কোরিয়া যৌথ বাহিনীর এক সদস্যের বিধবা স্ত্রীও কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। তিনি দু-সপ্তাহ আগে দেশটির দায়েগু মিলিটারি বেস পরিদর্শন করেন। এরপর থেকেই তার শরীরে দেখা দিতে থাকে ভাইরাসের উপসর্গ। ৬১ বছর বয়স্কা এই মহিলা ইউনাইটেড স্টেটস ফোর্সের (ইউএসএফকে) কোরিয়ার সাথে সম্পর্কিত প্রথম কোন ব্যাক্তি হিসেবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন।

বাহিনীর মুখপাত্র জানান, দুই সপ্তাহ আগে দায়েগুর তিনটি মার্কিন সামরিক স্থাপনার একটি ক্যাম্প ওয়াকারে দু দফায় গিয়েছিলেন ঐই মহিলা। পরে তার শরীরে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষার পর তা নিশ্চিত হয়। তার শরীরে এই ভাইরাস নির্ণয়ের পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-কোরিয়া যৌথ বাহিনীতে কোভিড ১৯ এর ঝুঁকির মাত্রা সর্বোচ্চ ঘোষণা করা হয়। ঘাঁটিগুলির প্রবেশপথে তাপমাত্রা পরীক্ষা এবং নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।

দক্ষিণাঞ্চলের শহর দায়েগুর একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায় থেকে গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দক্ষিণ কোরিয়ার উপরে কড়া নজর রেখেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!