দক্ষিণ কোরিয়ার করোনা-কৌশল অনুসরণে জার্মানির সাফল্য

মরণঘাতি করোনাভাইরাসের থাবায় যখন বিপর্যস্ত ইতালি এবং স্পেন তখন প্রতিবেশি জার্মানি এই লড়াইয়ে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে । আর যার পেছনে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কৌশল অনুসরণ। এতে করোনা যুদ্ধে বড় ধরনের সাফল্য পাচ্ছে ইউরোপের দেশটি।

এ কথা এরই মধ্যে বিশ্বের জানা হয়ে গেছে কিছু দেশ যথাযথ ও সময়োপযোগী কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে ভাইরাসটির বিস্তৃতি রোধে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ কোরিয়া। শান্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে এই ভাইরাস মোকাবিলা করেছে কোরিয়া। শুধু তাই নয়,দেশটির ভাইরাস এপিসেন্টার হিসেবে খ্যাত দেগুও এখন নিয়ন্ত্রণে।

ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফল এই দেশটি প্রযুক্তির ব্যবহার ও টেস্ট করা ছাড়াও আরও কিছু প্রয়োজনীয় জন হিতকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভাইরাসটি মোকাবিলায়। তাদের থেকে শিক্ষণীয় কী কী আছে ঢাকার, ঢাকা কী এই পথে হাঁটতে পারে? কোরিয়া যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেগুলোর মধ্যে আছে-

Travelion – Mobile

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জার্মানি ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। সংক্রমণের চেইন ভাঙার জন্য দেশটি ব্যাপকভাবে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করেছে। জার্মানি এই কৌশলটি দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে নিয়েছে। এ কৌশল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ধীর করার ক্ষেত্রে সাফল্য আনছে বলে জানা গেছে।

করোনভাইরাস উপদ্রুত দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দেগুর একটি বাজারে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে
করোনভাইরাস উপদ্রুত দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দেগুর একটি বাজারে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে

জার্মানির কর্মকর্তারা বলছেন, জার্মানি অন্য যেকোনো ইউরোপীয় দেশের তুলনায় বেশি পরিমাণ করোনাভাইরাস পরীক্ষা চালাচ্ছে।

তারা বলেন, জার্মানি সপ্তাহে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ পরীক্ষা চালাচ্ছে।

কয়েকটি জার্মান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি অনুসারে, চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের সরকার লক্ষ্য স্থির করেছে যে একদিনে কমপক্ষে ২ লাখ পরীক্ষা করা হবে।

লক্ষ্যটি স্থির করা হয়ছে যে, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমন সন্দেহজনক সবার পরীক্ষা করা।

বর্তমান পরীক্ষার মানদণ্ড তাদের মধ্যে ফোকাস করা হয় যারা কভিড ১৯ উপসর্গগুলো দ্বারা অসুস্থ এবং যাদের মধ্যে একটি নিশ্চিত লক্ষণ রয়েছে।

এই লড়াইয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হলো কোনো রোগীর সাম্প্রতিক চলাফেরা শনাক্ত করতে স্মার্টফোনে লোকেশন ডেটা ব্যবহার করা।

সম্ভাব্যভাবে সংক্রামিত লোকদের আরো সঠিকভাবে অনুসন্ধান করা এবং পৃথক করা।

সরকারি কর্মকর্তারা এবং মহামারি বিশেষজ্ঞরা সেলফোন ট্র্যাকিংয়ের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে এটি একটি বিতর্কিত ধারণা। জার্মানির প্রস্তাবিত পরিকল্পনা হলো, ট্রেস, টেস্ট এবং ট্রিট।

এই কৌশলটির দক্ষিণ কোরিয়াকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করেছিল বলে মনে করা হয়। এতে সম্ভাব্য আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ব্যাপক স্ক্রিনিং এবং রোগীদের নিরীক্ষণের জন্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আগের খবর : হে বিশ্ব, কোরিয়া থেকে শেখো ‘করোনা যুদ্ধ’ জয়ের মন্ত্র

জার্মানির রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউটের (আরকেআই) প্রধান লোথার উইলার ফ্রাঙ্কফুর্টার অলজামেইনকে বলেন, যদিও জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়া দুটি আলাদা দেশ। তবে এশিয়ান দেশটির ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের কৌশল ‘উদাহরণ হতে পারে’।

লোথার উইলার বলেন, মূল বিষয় সেল ফোন ডেটা ট্রেস করা হয়।

জার্মানিতে ৫২,০০০ এরও বেশি লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মোট ৩৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। জার্মানিতে মৃত্যুর হার মাত্র দশমিক ৭ শতাংশ।

তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইতালি ১০ শতাংশ এবং স্পেন ৮ আট শতাংশ। দেশ দুটির তুলনায় জার্মানিতে মৃত্যু হার অনেক কম।

তবে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পেন সতর্ক করেছেন যে, সামনের সপ্তাহগুলিতে দেশটি নতুন করে আরো আক্রান্ত হতে পারে।

অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় এই পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৪৭৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১৪৪ জন এবং ৪১ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়েছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!