তুরস্ক থেকে আসলো রোহিঙ্গা ফিল্ড হাসপাতালের উপকরণ, জনবল
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে তুরস্কের ফিল্ড হাসপাতালের পুননির্মাণের জন্য উপকরণ ও জনবল নিয়ে আরও একটি সামরিক কার্গো উড়োজাহাজ বাংলাদেশ এসে পৌঁছেছে। গত ২২ মার্চভ য়াবহে আগুনে মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালসহ হাজার হাজার অস্থায়ী তাঁবু ধ্বংস হয়েছিল।
শুক্রবার (২ এপ্রিল) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ৪০০ এম মডেলের (সি ১৩০) সামরিক কার্গো উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম হজরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবতরণ করে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী আঙ্কারার এটাইমসগুট মিলিটারি বিমানবন্দরে থেকে পণ্য ও জনবল নিয়ে উড়োজাহাজটি রওনা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হয়।
হজরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান জানান, সামরিক কার্গো উড়োজাহাজটিতে ৫০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতালটির জন্য চিকিত্সা সরঞ্জাম, তাঁবু, সহায়তা সামগ্রী ছাড়াও দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৩ জন কর্মীও বাংলাদেশ এসে পৌঁছেছে।
এর আগে গত ২৭ মার্চ আসা প্রথম সামরিক কার্গো উড়োজাহাজে ফিল্ড হাসপাতালের সামগ্রী ও তাঁবুসহ ২০ টন পণ্যের সঙ্গে তুরস্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, এএফএডি এবং তুরস্কের আবাসন ও উন্নয়ন প্রশাসন বিভাগের মোট ২২ জন কর্মীও এই উড়োজাহাজে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান, বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাটির অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল সালেহ বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে প্রথম উড়োজাহাজটিকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল।
ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেসেপ তাইয়িপ এরদোগানের নির্দেশে তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনার কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) এবং স্বাস্থ্য ও মন্ত্রনালয়ের পাশাপাশি পরিবেশ ও নগরায়ণ মন্ত্রণালয় এই অঞ্চলে সহায়তা প্রদানের কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে ফিল্ড হাসপাতাল পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে ।
গত ২২ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের চারটি ক্যাম্পে আগুন লাগে। প্রায় সাত ঘণ্টার আগুনে মৃত্যু হয় ১১ জনের। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৯ হাজার ৩০০ ঘরবাড়ি, ১৩৬টি লার্নিং সেন্টার, দুটি বড় হাসপাতাল ও মূল্যবান জিনিসপত্র। এ ছাড়াও মসজিদ, দোকানপাট ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার ভবন পুড়ে যায়। সে দিনের আগুনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার অস্থায়ী তাঁবু পুড়ে যায়।
আগুনে ধবংস হওয়া তুরস্কের ফিল্ড হাসপাতালটি শরণার্থী শিবিরের বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলির একটি ছিল যা বিশ্বের বৃহত্তম বলা হয়, যার মাধ্যমে ২০১৭ সালের আগস্টে মায়ানমারে সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছিল। হাসপাতালটি প্রতিদিন এক হাজার রোগীকে চিকিত্সা সেবা দিয়ে আসছিল। এর মধ্যে ৭০% রোহিঙ্গা এবং ৩০% স্থানীয় অধিবাসী ছিলেন। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালটি মোট ৫ লাখ ১২ হাজার ১০১ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেসেপ তাইয়েপ এরদোগানের নির্দেশে তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনার কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) এবং স্বাস্থ্য ও মন্ত্রনালয় ও পরিবেশ ও নগরায়ণ মন্ত্রণালয় কক্সবাজার অঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা প্রদানের কাজ শুরু করে বলে বিমানবন্দরে সাংবদিকদের জানিয়েছেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান।