‘টিকিটের টাকা নেই, দেশে ফিরবো কেমনে’

“পরিবারের পেট চালাইতে প্রবাসে আইসা এখন নিজের পেট চালাইতেই কষ্ট হইতাছে।দেড় বছর যাবত এখানে অনেক সমস্যা।দুই টাকার জিনিষ হইছে দশ টাকা।কাজ করলেও বেতন ডলারের পরিবর্তে লিরা দেয়। কাজ কইরা যে টাকা পাই, সেটি দিয়া নিজের খাবার খরচ ও ঘর ভাড়াই হয় না।দেশ থেকে কয়েকবার টাকা আনছি।এখন আর সম্ভব না। কত মাস ধইরা দেশে পরিবারে টাকা দিতে পারি না। বাবা-মা, বউ, সন্তান সবাই টাকা চায়, কিন্তু ডলার সমস্যার কারনে তাদের টাকা দিতে পারি না। সবাই এখন আমাকে ভুল বুঝে”।

নাম নিবন্ধন করতে না পেরে বৈরুতের ক্লাসিকো ষ্টেডিয়ামে এমনভাবেই আক্ষেপ করছিলেন লেবানন প্রবাসী বরিশালের আকরাম। সংসারে স্বচ্ছলতার আশায় ২০০৮ সালে ৫ লাখ টাকা খরচ করে ক্লিনিং কোম্পানীর ভিসায় লেবানন আসেন। বিগত কয়েক বছর যাবত কোম্পানী আকামা নবায়ন ও বেতন রীতিমত পরিশোধ না করার কারনে মালিক পক্ষের সাথে বাধে ঝামেলা।দেশে চেলে যেতে চাইলেও কোম্পানী থেকে শুরু হয় নির্যাতন।উপায়ন্তর না দেখে পরে কোম্পানী থেকে বের হয়ে বর্তমানে অর্থসংকটে দিন কাটছে আকরামের। দীর্ঘ দেড় বছর যাবত লেবাননে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দাসহ মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়ে বর্তমানে বাংলাদেশি আকরাম দেশটিতে দুঃসহ সময় পার করছে। আকরামের মতোই এমন করুন অবস্থা লেবাননে অবস্থানরত হাজারো বাংলাদেশির।

অবৈধ হয়ে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. সেলিম বলেন, “আগে যখন তাদের হাতে রীতিমত টাকা দিতে পারতাম, তখন আমি খুব ভাল ছিলাম। দেশের এই সমস্যাই পইড়া আমি এখন তাদের কাছে মূল্যহীন।চিন্তা করছিলাম দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে চইলা যামু। কিন্তু টিকেটের ৪ শত ডলার যোগাড় করতে পারি নাই, তাই দূতাবাসে নামও দিতে পারি নাই।ডলার এখন আমরার কাছে সোনার হরিণ। এই অবস্থায় না পারতেছি এই দেশে থাকতে, না পারতেছি দেশে যাইতে। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু চাইত, তাহলে আমরা দেশে যাইতে পারতাম”।

Travelion – Mobile

লেবাননে আনুমানিক দেড় লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে আনুমানিক ৪০ হাজার কাগজপত্রবিহীন (অবৈধ) রয়েছেন। দেশটি প্রায় দেড় বছর ধরে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার সীমাহীন দরপতন এবং সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে পড়ে বর্তমানে বৈধ বাংলাদেশিরা দুঃসহ সময় পার করছেন। সেখানে অবৈধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের অবস্থা আরও করুণ। দেশে পরিবারের জন্য টাকা পাঠানো তো দূরের কথা প্রবাসে নিজেদের পেট চালানোই দায় হয়েছে পড়ে এসব অসহায় বাংলাদেশিদের।

লেবাননে সরকারের দেওয়া সাধারণ ক্ষমার সুযোগে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় গত ২৫-২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে কাগজপত্রবিহীন (অবৈধ) বাংলাদেশিদের নাম নিবন্ধন চললেও ৪ দিনে মাত্র ৪ হাজার বাংলাদেশি বিমান টিকেটের ৪ শত ডলারের বিনিময়ে নাম নিবন্ধন করতে সক্ষম হন।

নিবন্ধনকৃতদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশ থেকে দেনা করে কিংবা ফসলী জমি বিক্রি করে টিকিটের টাকার বিনিময়ে নাম নিবন্ধন করেছেন। ধারনা করা হয়েছিল আনুমানিক ২০ হাজার অবৈধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাম নিবন্ধন করবেন। কিন্তু বিমান টিকেটের ৪ শত ডলার হাতে না থাকায় বা সংগ্রহ করতে না পারায় তারা নাম নিবন্ধন করতে পারেন নি।

এই বাস্তবতায়, মানবিক লেবাননে কাগজপত্রবিহীন বা অবৈধ হয়ে যাওয়া বাকি প্রবাসীদের বিশেষ ফ্লাইটে বিনামূল্য বা স্বল্পমূল্যে দেশে ফিরে আসার সুযোগ করে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা চেয়েছেন। ভুক্তভোগী বাংলাদেশিরা মনে করে, সরকারের এমন মহতী উদ্যোগে এসব অসহায় ও অভাবী প্রবাসী যেমন নতুন জীবন পাবেন তেমনি প্রবাসীদের মাঝে সরকারের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!