জার্মানিতে এসপিডির ঐতিহাসিক বিজয়

জার্মানির সংসদ নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি। তিন দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টির মধ্য তুমুল লড়াই হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৪৭টি দল ৬ হাজার ২১১ জন প্রার্থী দিয়েছে৷

আঙ্গেলা ম্যার্কেলের হাত ধরে জার্মানিতে আধিপত্য গড়ে তুলেছিল মধ্য ডানপন্থী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (এসডিইউ)। দেড় যুগের সেই আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে দেশটির সবচেয়ে পুরাতন দল সোশ্যাল ডেমোক্রেট পার্টিকে (এসপিডি) সামনে নিয়ে এলেন ওলাফ শলৎস।

রোববারের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে ২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে এসপিডি। আর ম্যার্কেলের দল এসডিইউ পেয়েছে ২৪ শতাংশ ভোট। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এটি তাদের সর্বনিম্ন প্রাপ্ত ভোট।

Travelion – Mobile

আট কোটি মানুষের এই দেশে ৬ কোটি ৪০ লাখ ভোটারের ৭৩০টি আসনের মধ্যে এসপিডি পায় ২০৫টি আসন (২৫.৮% ভোট)। অন্যদিকে আরমিন লাশেটের নেতৃত্বাধীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিপিডি) ১৯৪টি আসন (২৪.১% ভোট), আনালেনা বেয়ারবকের নেতৃত্বাধীন পরিবেশবাদী দল গ্রিন পার্টি ১১৬টি আসন (১৪.৬% ভোট), ক্রিশ্চিয়ান লিনডানের নেতৃত্বাধীন দল এফডিপি ৯১টি আসন (১১.৫% ভোট), এএফডি ৮৪টি আসন (১০.৫% ভোট), ডি লিংকে ৩৯টি আসন (৪.৯% ভোট) ও অন্য দলগুলো পেয়েছে ১টি আসন (৮.৬% ভোট)।

নির্বাচনে এসপিডির এই সাফল্য নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক জার্মান যেটা অসম্ভব মনে করতেন, সেটাই বাস্তবে করে দেখিয়েছেন কয়েক বছর ধরে ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসা এসপিডি নেতা শলৎস।

তবে জোট করে সরকার গঠনের জন্য শলৎসকে এখনো দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। শলৎস ও এসডিইউ নেতা আর্মিন লাশেট দুজনই বলেছেন, ক্রিসমাসের আগেই সরকার গঠনের জন্য তাঁরা জোট গঠন করে ফেলবেন।

মহামারির সময় ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন ওলাফ শলৎস। সংকটের সময় নিজেকে অবিচলিত রাখার জন্য জার্মানিতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। জার্মানির পূর্বাঞ্চলে কিছুদিন আগেই ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। বন্যায় দুর্গতদের ত্রাণ ও জরুরি সাহায্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো বিতরণ হয়েছিল শলৎসের হাত দিয়েই। করোনার সময়ও একই কাজ করে গেছেন তিনি।

অনেকের মতে, টানা চার বার নির্বাচনে জিতে জার্মান চ্যান্সেলর ছিলেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল । তিনি জার্মানবাসীর মণিকোঠায়। তবে ফেডারেল পার্লামেন্ট নির্বাচনে মার্কেলের দল কম ভোট পাওয়ার পেয়েছে নানা কারণ রয়েছে।

ইউরোপ ও জার্মানির নানা সংকটের পাশাপাশি শরণার্থী সংকট, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ইত্যাদি নানা সংকটেও জার্মানিকে সাফল্যের সঙ্গে শক্ত অবস্থানে ধরে রেখেছিলেন মার্কেল । সমকামী বিয়ের আইন পাস, পরমাণু বিদ্যুৎ থেকে সরে আসা ইত্যাদি নানা বিতর্কিত ইস্যুতে অনেকের বিপক্ষে গিয়েও শক্ত ভূমিকা রেখেছেন ম্যার্কেল।পাশাপাশি রাশিয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান না নিয়ে মধ্যপন্থি অবস্থান নেয়ায় তার সমালোচনাও করেন অনেকে। একই সাথে আফগান,সিরিয়া শরণার্থীদের জায়গা করে দেয়ায় অনেক জার্মান বিরক্ত।

জার্মান রাজনীতিতে ম্যার্কেলের লিগ্যাসি অনেক দিন থাকবে এটা যেমন সত্য। হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড,অষ্ট্রিয়াসহ ইউরোপের অনেক দেশে উগ্র চরম ডানপন্থার উত্থান। জার্মানিতেও নব্যনাৎসিরা প্রকাশ্যে আসার সাহস,একই তাদের আগের চেয়ে রেকর্ড সংখ্যক আসন বিশ্বকে নতুন করে ভাবাচ্ছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!