জর্ডানে মায়ের হাত ধরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর স্নাতকোত্তর অর্জন
জর্ডানের আবু নসর এলাকার অধিবাসী ইয়াহইয়া। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াবস্থায় দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে ইয়াহইয়া জাউনির। সপ্তম শ্রেণিতে এসে ১৫ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে যায়। অতঃপর মায়ের হাত ধরে পথ চলা শুরু। মায়ের সার্বিক সহায়তায় শিক্ষার সব ধাপ পেরিয়ে ইতিমধ্যে স্নাতকোত্তর পর্ব সম্পন্ন করেন ইয়াহইয়া।
ছোটবেলা থেকে মায়ের আদরে বেড়ে ওঠেন ইয়াহইয়া। তরুণ বয়সে এসেও মায়ের আঁচল ধরে চলেছেন তিনি। ইয়াহইয়ার ৬৪ বছর বয়সী মা পড়াশোনাসহ সব ক্ষেত্রে তাঁকে সহযোগিতা করেন। স্কুল, কলেজ পাড়ি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েও সঙ্গী হয়ে থাকত তাঁর মা। এমনকি মায়ের একান্ত প্রচেষ্টায় মুখে মুখে কোরআন পাঠ করে কয়েক বছরে পুরো কোরআন হেফজ সম্পন্ন করেন ইয়াহইয়া।
জর্ডানের সংবাদ সংস্থা পেট্রার প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চমাধ্যমিকে থাকাবস্থায় ক্লাসের সব পাঠ মুখস্থ করিয়ে দিত ইয়াহইয়ার মা। প্রায় ৪৮ সপ্তাহ বা চার বছরের বেশি সময় ধরে মা ইয়াহইয়াকে জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়িতে আনা নেওয়া করেন। ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্মের কোনো সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ থাকত না তাদের। পরীক্ষার সময় মা তাঁকে বই পড়িয়ে শুনাতেন। রেফারেন্স বই যোগাড় করে দিতেন। যেকোনো আলোচনা তাঁর জন্য রেকর্ড করে নিতেন।
প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে লাইব্রেরিতে থাকার সময়ও মা তাঁকে বই শুনিয়ে সাহায্য করত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে মা তাঁকে ক্লাসের সব পাঠ মুখস্ত করাতেন। ক্লাসের এসাইনমেন্ট, আলোচনা বা ক্লাসের সব কিছু প্রস্তুত করে দিত তাঁর মা। মাস্টার্সের থিসিস লেখার সময়ও মা তাঁকে সহায়তা করে।
জর্ডান সরকারের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে জর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে দাওয়া বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন ইয়াহইয়া। অতঃপর বৃত্তি নিয়ে সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদিস বিভাগে দ্বিতীয় বার স্নাতক সম্পন্ন করেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেক আত্মীয় তাঁকে বিদেশে যেতে নিষেধ করে। এ সময় ইয়াহইয়ার পিতাও মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু পবিত্রনগরী মদিনার টানে তিনি মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান।
এ ব্যাপারে ইয়াহইয়া বলেন, ‘মদিনাতে আমি জীবনের সবচেয়ে সুন্দর আনন্দঘন সময় কাটিয়েছি। সেখানে গিয়ে হাদিসের গ্রন্থগুলো মুখস্থ করেছি। শরিআহ বিষয়ে অনেক অধ্যয়ন করেছি। কোরআন নিয়ে গবেষণা করেছি। অনেক কষ্ট ও চ্যালেঞ্জ ছিল সেখানে, তবে সব সময় আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন।’
সংবাদ সংস্থা পেট্রাকে ইয়াহইয়ার মা বলেন, যেকোনো কিছু বপনের জন্য পরিচর্যার প্রয়োজন। একজন মা হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। আজ ইয়াহইয়া শিক্ষা জীবনের সর্বোচ্চ পর্ব কৃতিত্বে সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাঁর সাফল্যে জীবনের পরতে পরতে পাওয়া দুঃখ-কষ্টগুলো আজ আমরা ভুলে গিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ প্রদত্ত সবকিছুই সুন্দর। ইয়াহইয়া আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার। সে খুবই তীক্ষ্ম মেধার অধিকারী। তাই এতদূর পর্যন্ত সে আসতে পেরেছে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি তাঁর সেবায় থাকব যেন সে তাঁর সব উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে।
স্নতকোত্তরের থিসিস উপস্থাপনের সময় সুপারভাইরজার বলেন, এমন কীর্তিমান আত্মত্যাগী মাকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিআহ ফ্যাকাল্টির প্রধান ড. আদনান আসসাফ বলেন, ‘ইয়াহইয়ার এই সাফল্যের পেছনের কারিগর পিতা-মাতার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তাঁরা ইয়াহইয়ার জন্য অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রাম করেছেন। তাঁরাই সমাজের আদর্শ পিতা-মাতা। দ্বিন ও জাতির জন্য তাঁরা ফলবান বৃক্ষ রোপন করেছেন।’
করোনাময় বিশ্ব : কেমন আছেন কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশিরা – (পর্ব ৩)
করোনাময় বিশ্ব : কেমন আছেন কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশিরা – (পর্ব ৩)১৫ জুলাই, বুধবার – কুয়েত সময় : সন্ধ্যা ৭.৩০ টা, বাংলাদেশ সময় : রাত ১০.৩০ টা সঞ্চলনায় : আ. হ জুবেদ, বিশেষ প্রতিনিধি-আকাশযাত্রা অতিথি :শরীফ মোহাম্মদ মিজান, প্রবাসী সাংবাদিক, কুয়েতমো. জালাল উদ্দিন, প্রবাসী সাংবাদিক, কুয়েতআল আমিন রানা, প্রবাসী সাংবাদিক, কুয়েতসাদেক রিপন, প্রবাসী সাংবাদিক, কুয়েত
Posted by AkashJatra on Wednesday, July 15, 2020