চীন থেকে বিশেষ ফ্লাইটে দেশের পথে বাংলাদেশিরা
চীন থেকে বাংলাদেশিদের নিয়ে রওয়ানা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ফ্লাইটটি। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় টায় ৩১৬ বাংলাদেশিকে নিয়ে উহানের তিয়ানহে বিমানবন্দর ছাড়ে বিশেষ এই উদ্ধারকারি উড়োজাহাজ। যাত্রীর মধ্যে ৩০১ জন প্রাপ্তবয়স্ক, ১২ জন শিশু এবং তিন জন নবজাতক রয়েছে।
টানা চার ঘন্টার এই ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় বাংলাদেশ সময় দুপুর ১১ টা ৫০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬.০৫ মিনিটে চীনের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় বিশেষ ফ্লাইটটি। এটি পরিচালনা করছেন ক্যাপ্টেন মাহতাব, ক্যাপ্টেন ইলিয়াস ও ক্যাপ্টেন মেহেদি। পাইলট ছাড়াও ১১ জন কেবিনক্রু, ৩ জন ককপিট ক্রু, ২ জন প্রকৌশলী এবং ডাক্তার-নার্সসহ ৪ সদস্যের বিশেষ মেডিকেল টিম ফ্লাইটটিতে রয়েছে। বিশেষ মেডিকেল টিমে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন জন চিকিৎসক। তারা হলেন মেজর ডা. মিনহাজ, মেজর ডা. ফাতেহা এবং ডা. মাহবুব।
উদ্ধারকারি ফ্লাইটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন জন চিকিৎসকসহ একটি বিশেষ মেডিকেল টিম রয়েছে” width=”700″ height=”400″ class=”size-full wp-image-20452″ /> এই উদ্ধারকারি ফ্লাইটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন জন চিকিৎসকসহ একটি বিশেষ মেডিকেল টিম রয়েছে[/caption]
উহান থেকে ফিরতে চাওয়া বাংলাদেশিদের নিয়ে খোলা উইচ্যাট গ্রুপ ( Group Name: I am in Wuhan now) থেকে জানা গেছে, চীনের স্থানীয় সময় রাত দুইটায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি, যাত্রীদের তথ্য যাচাই, ইমিগ্রেসনসহ নানা আনুষ্ঠানিকতায় কয়েক ঘন্টা বিলম্ব হয়েছে। তবে দেরিতে হলেও তেমন কোন বড় জটলিতা ছাড়া সবাইকে নিয়ে উহান ছেড়েছে বাংলাদেশ বিমানের বিজি ৭০০০ ফ্লাইটটি।
উইচ্যাটে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মাহমুদ জানান, “দেশে ফিরে যাওয়ার আগে সারা দিন অনেক ধকলের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। একদিকে বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি মিলতে যেমন দেরি হয়েছে তেমনি বাংলাদেশ থেকে বিমান আসা এবং চেকইনে অনেক সময় লেগেছে। প্রায় ১২ ঘন্টা বিমানবন্দরে নানারকম প্রক্রিয়া শেষ করে আমরা প্রিয় স্বদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিচ্ছি। এ নিয়ে কষ্টের মধ্যেও একদিকে যেমন আনন্দ হচ্ছে তেমনি উৎকন্ঠায় আছি আগামী ১৪ দিন ধরে পর্যবেক্ষণে থাকার বিষয়টি নিয়ে।”
সারাদিনের নানা অনিশ্চয়তা আর ধকলের পরেও উড্ডয়নের আগে ফ্লাইটটিতে থাকা বাংলাদেশিদের অনেকে উচ্ছাস আর সস্তি প্রকাশ করে উইচ্যাট গ্রুপে পোষ্ট দেয়।
এদের মধ্যে কথা হয় বাংলাদেশি উইচ্যাট গ্রুপটির সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল হাফিজের সাথে। উইচ্যাটে কথা হলে বলেন, “দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে পরিবার নিয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে বড় কোন দূর্যোগ থেকে বেঁচে ফিরছি প্রিয়জনদের নিয়ে। এতদিনের সব চাপা টেনশন আর আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেয়ে সত্যিই অনেক ভাল লাগছে। আশা করি দেশে আমাদের জন্য সরকার সব ধরনের প্রস্ততি সঠিকভাবে সম্পাদন করেছে”।
উইচ্যাট গ্রুপে অন্যান্য সদস্যদের পোস্ট করা কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ এই ফ্লাইটটিতে কেবিন ক্রু ও পাইলটদের সকলেই মাস্ক পরিহিত।
এদিকে উড্ডয়নের আগে ফ্লাইটের সামগ্রিক বিষয় ও প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তাদের আন্তরিক সহায়তা আর তদারকিকে সাধুবাদ জানিয়ে গ্রুপে পোস্ট দিতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আকাশযাত্রাকে জানান, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উড়োজাহাজ থেকে যাত্রীদের সরাসরি হজ ক্যাম্পে নেওয়া হবে। সেখানে তাঁদের ‘কোয়ারেন্টাইন’ করে রাখা হবে, কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। ‘কোয়ারেন্টাইন’ অবস্থায় সেনাবাহিনী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল টিম তাঁদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চিকিৎসাসহ সব ধরনের খরচ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। ক্যাম্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দেবে।
সরকারি কর্মকর্তারা অনুরোধ করেছেন, চীন ফেরত নাগরিকদের আত্মীয়স্বজন যেন ক্যাম্পে ভিড় না করেন। ক্যাম্পে অবস্থানরত নাগরিকদের পরিস্থিতি নিয়মিত জানানোর আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকবে। প্রয়োজনে তাঁরা এসব নম্বরে ফোন করে খবর জানতে পারবেন: ০১৯২৭৭১১৭৮৪; ০১৯২৭৭১১৭৮৫; ০১৯৩৭০০০০১১; ০১৯৩৭১১০০১১।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশে চীনা নাগরিক বা চীন ফেরত বাংলাদেশি নাগরিকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা।