চাঁদের বুকে ভারত

ঐতিহাসিক মুর্হুতের অপেক্ষায় সারাবিশ্ব

ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে চলেছে ভারত। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে আজ শুক্রবার গভীর রাতে চাঁদের মাটি ছোঁবে ভারতের চন্দ্রযান-২ । চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে চলেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরোর এই মহাকাশ যান। এখন পর্যন্ত অনুকূলে আছে সবকিছু। অবতরণ সফল হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা, চিনের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কৃতিত্ব অর্জন করবে ভারত। তার চেয়ে বড় বিষয় চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি প্রথম পৌঁছনোর ইতিহাস গড়বে ভারত।

এ নিয়ে অধীর অপেক্ষায় ভারতসহ গোটা বিশ্ব । ইতিহাসের সাক্ষী থাকবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে তিনি ইসরোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে লাইভে দেখবেন এই অবতরণ। গত ২২ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করে চন্দ্রযান-২।

মোট তিনটি অংশে বিভক্ত চন্দ্রযান-২। একটি অর্বিটার, একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভার। ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’। সেটি চাঁদের মাটিতে নেমে পড়লে রোভার ছ’চাকাবিশিষ্ট ‘প্রজ্ঞান’কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে চাঁদের মাটিতে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে।

চাঁদের বুকে ভারতীয় আকাশযান চন্দ্রযান-২
চাঁদের বুকে ভারতীয় আকাশযান চন্দ্রযান-২। ছবি : ইসরো

Travelion – Mobile

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরোর সবশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই চাঁদে অবতরণকারী যান বিক্রম মূল মহাকাশ যান অর্বিটার থেকে নিজেকে পৃথক করে নিয়ে চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে। দু’দফায় চাঁদের ৩৫x১০১ কিলোমিটারের কক্ষপথে পৌঁছেছে বিক্রম। রাত একটা থেকে দুটোর মধ্যে চন্দ্রপৃষ্ঠের পথে নামা শুরু করবে বিক্রম। আশা, চাঁদের থেকে দূরত্ব কমিয়ে শুক্রবার রাত দেড়টা থেকে আড়াইটের মধ্যে বিক্রম চাঁদের মাটি ছুঁতে পারবে।

চাঁদের বুক
চাঁদের বুক

ইসরো আরো জানায়, বিজ্ঞানীদের যাবতীয় নজর থাকবে অবতরণের অন্তিম ১৫ মিনিটের দিকেই। যা ইসরোর চেয়ারম্যান ‘সবচেয়ে দুশ্চিন্তার মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন। ইসরোর অন্দরের খবর, ‘দুশ্চিন্তার মুহূর্ত’ শুরু হবে রাত ১টা ৪০ মিনিটে। সেক্ষেত্রে চাঁদের মাটিতে ভারতীয় বিক্রমের পা পড়বে দুটো বাজতে ঠিক পাঁচ মিনিট আগে। তার ১৫ মিনিট পর ওই অঞ্চলের প্রথম ছবি তুলে পাঠাবে বিক্রম সারাভাইয়ের নামাঙ্কিত ল্যান্ডার। এরপর মোটামুটি চার ঘণ্টার অপেক্ষা। ভোরের আলো ফুটলেই সৌরশক্তিতে বলীয়ান প্রজ্ঞান রোভার বেরিয়ে আসবে বিক্রমের পেট থেকে (সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ছ-টার মধ্যে) । বিক্রম, প্রজ্ঞানের গায়ে আঁকা তেরঙ্গা, অশোকচক্র চকচক করবে চাঁদের বুকে। পরবর্তী এক চন্দ্রদিবস অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে ১৪ দিন ধরে চলবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বরফকণার তল্লাশির পাশাপাশি ল্যান্ডার-রোভারের চোখ থাকবে চাঁদের খনিজেও।

শুধু ইসরো নয়, চন্দ্রযান-২ অভিযানের সাফল্যের দিকে তাকিয়ে চাঁদ নিয়ে গবেষণা করা সব দেশই। বেশিরভাগ সময় রোদের আড়ালে থাকা দক্ষিণ মেরুতে জলের অস্তিত্ব মিললে, ভবিষ্যতের অভিযান নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসবে তারা। যেমন, পাঁচ বছরের মধ্যে আবার চাঁদে মানুষ পাঠাতে চায় আমেরিকা। ভারতের চন্দ্রাভিযান সফল হলে দক্ষিণ মেরুর ওই তল্লাটকেই নিজেদের অবতরণের জন্য বেছে নেবে নাসা।

চন্দ্রযান-২ ভারতের এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও স্বপ্নের প্রকল্প। চাঁদের দক্ষিণ মেরু এখনও মানুষের কাছে অনেকটা অজানা। ইসরো এই মিশনকে বলছে তাদের অন্যতম জটিল মিশন। চাঁদকে পর্যবেক্ষণ করে ইসরো এমন তথ্য জানতে চায় যা থেকে কেবল ভারত নয়, মানব সভ্যতার উপকার হবে।
রাত ১.৫৫ মিনিটে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে সেটি। ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ চাঁদের মাটি স্পর্শ করার পর রোভার ‘প্রজ্ঞান’ সকাল ৫.৩০ থেকে ৬.৩০-এর মধ্যে বিক্রম থেকে বেরিয়ে আসবে।

বিক্রম ও প্রজ্ঞান‌ এক চন্দ্র দিন কার্যকর থাকবে। পৃথিবীর হিসেবে ১৪ দিন। অর্বিটার অবশ্য এক বছর কার্যকর থাকবে। চাঁদে জ‌লের অস্তিত্ব খোঁজা, চাঁদের মানচিত্র তৈরি করা এবং হাই-রেজলিউশন ছবি তোলা— এই কাজগুলি করবে চন্দ্রযান-২।

চাঁদের দক্ষিণ মেরু আজও গভীর রহস্যাবৃত। বিক্রম সেখানেই নামবে। চাঁদের ওই চির ছায়াচ্ছন্ন অঞ্চলে জলের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। চাঁদের এই মেরুতে যে ক্রেটার বা গহ্বরগুলি রয়েছে, সেখানে সব মিলিয়ে ১০০ মিলিয়ন টন জল থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের আগেও আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন চাঁদে গিয়েছে। কিন্তু চন্দ্রযান-২-এর বাজেট নাসার খরচের ১/২০ ভাগ। মাত্র ১,০০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প চন্দ্রযান-২।

তাছাড়া বিক্রম অবতরণ করবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। যা অত্যন্ত গুরুকত্বপূর্ণ। কেননা এখনও পর্যন্ত যত চন্দ্রাভিযান হয়েছে বেশির ভাগই চাঁদের উত্তর মেরু বা নিরক্ষীয় অঞ্চলে হয়েছে। ফলে চাঁদের দক্ষিণ মেরু এখনও পর্যন্ত অনাবিষ্কৃতই রয়ে গিয়েছে। সেই অঞ্চলের অজানা তথ্যই আবিষ্কার করবে বিক্রম।

২২ আগস্ট চন্দ্রযান-২ চাঁদের প্রথম ছবি তুলে পাঠিয়েছে। ইসরো সেই ছবি প্রকাশ করে। ২৬ আগস্ট আরও কিছু ছবি পাঠিয়েছে চন্দ্রযান-২। যা ২৩ আগস্ট তোলা হয়েছিল। এতে চাঁদের বহু ক্রেটার দেখা গিয়েছিল। যথা— সমারফিল্ড, কির্কউড, জ্যাকসন, মাচ, কোরোলেভ, মিত্র, প্লাস্কেট, রোজদেস্তভেনস্কি ও হার্মিট। পৃথিবী ছাড়ার ১১ দিন পর পৃথিবীর চমৎকার পাঁচটি ছবি তোলে চন্দ্রযান-২। ৪ আগস্ট ওই ছবিগুলি তোলা হয়। ল্যান্ডারে থাকা এল১৪ ক্যামেরা দিয়ে ওই ছবি তোলা হয়।
২০২২ সালে গগনযানে কক্ষপথে মানুষ পাঠাতে চায় ইসরো।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!