চট্টগ্রামে অভিবাসী দিবসে সেরা প্রবাসীদের সম্মাননা

সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রবাসী ও প্রবাসীদের কল্যানে নিবেদিত সংস্থাকে সম্মাননা, বিমানবন্দরে প্রবাসীদেরকে আগমনি ও বিদায় সম্ভাষণ, ভার্চুয়াল আলোচনা, অভিবাসী তথ্য মেলা, প্রবাসীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির চেক বিতরণসহ নানা আয়োজনে চট্টগ্রামে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২০ পালন করা হয়েছে।

১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আয়োজিত মুল অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত প্রশাসক আ স ম জামশেদ খোন্দকার প্রধান অতিথি ও চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমরান আলী বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়েছিলে।

চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপ পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক ফরহাদ হোসেন খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক উফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাধবী বড়ুয়া, বিকেটিটিসি অধ্যক্ষ নওরিন সুলতানা, মহিলা টিটিসি অধ্যক্ষ আশরিফা তানজীম, বেসরকারি সংস্থা ইপসার প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবদুস সবুর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র চাকমা এবং বায়রা’র প্রতিনিধি এমদাদ উল্লাহ অংশ নেন।

Travelion – Mobile

‘কোভিড-১৯ মহামারী কালীন অভিবাসন প্রেক্ষাপট ও করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আ স ম জামশেদ খোন্দকার বলেন, করোনাকালীন দেশে-বিদেশে নানা সমস্যা রয়েছে। সরকার প্রবাসীদের পুনর্বাসনসহ বিদেশ গমনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসীদের ৭শত কোটি টাকা ব্যয়ে ৪% হারে ঋন দিচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রদানকারীদের ২% হারে প্রনোদনা দিচ্ছে। পিসিআর এর মাধ্যমে প্রবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার সারাদেশে ৩৮ জনকে সিআইপি নির্বাচন করা হয়েছে, যার মধ্যে চট্টগ্রামের ১৪ জন প্রবাসী রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে উপলক্ষে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে  প্রবাসীদেরকে সম্ভাষণ জানানো হয়
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে উপলক্ষে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদেরকে সম্ভাষণ জানানো হয়

অতিথি বক্তারা বলেন, কর্মদক্ষতার সনদপত্র ছাড়া বিদেশে গিয়ে কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। সরকার ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদেশের শ্রম বাজারে চাহিদা থাকলেও প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে অনেকের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটছে না। এজন্য প্রত্যেককে দক্ষ হতে হবে। দক্ষতা অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশকে সম্মানজনক পর্যায়ে পৌঁছানো যাবে।

সরকার বিদেশ গমোনেচ্ছুকদের দক্ষতার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে উপপরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে ৬ উপজেলায় টিটিসি নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল উপজেলায় টিটিসি নির্মাণ করা হবে। www.internationalemegrationday2020ctg.org.bd এ সাইটে লগইন করে অভিবাসন সংক্রান্ত সরকারি ও বেসরকারি সকল তথ্য সেবা পাওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, যারা বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে সনদপত্র অর্জনের মাধ্যমে বিদেশ যাচ্ছে তারাই চাহিদার দ্বিগুন বা তিনগুন পর্যন্ত বেতন পাচ্ছেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রমান করতে হলে অভিবাসী কর্মীদের কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। সকল কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবক-যুবতীদেরকে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের টেকসই ও উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়া সম্ভব হবে।

আলোচনা শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা) ভার্চুয়ালি অভিবাসী তথ্য মেলার উদ্বোধন করেন।

প্রবাসীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির  চেক বিতরণ করা হচ্ছে
প্রবাসীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির চেক বিতরণ করা হচ্ছে

‘স্বাস্থ্য বিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চট্টগ্রাম অফিসে অভিবাসী দিবসের মুল অনুষ্ঠানে সেরা রেমিট্যান্স প্রেরণকারীসহ ৪ জন প্রবাসী এবং প্রবাসীদের কল্যান ও ইমিগ্রেশনে সহায়তাকারী ৭ টি সংস্থাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্বাচিত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রদানকারী সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী আব্দুল কুদ্দুস ও রীনা আক্তার, কাতার প্রবাসী আবদুল কাদের এবং কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষতার সাথে দীর্ঘ ২৫ বছর কাজ করে শুনাম অর্জন করায় প্রবাসী মীর মাহাবুবুল আলমকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।অন্যদিকে ইমিগ্রেশনে সহায়তাকারী ও প্রবাসীদের কল্যানে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান ইপসা, বিলস, ব্র্যাক মাইগ্রেশন, বিটা, ঘাসফুল,কারিতাস ও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের প্রতিনিধিবৃন্দদের সম্মাননা জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রবাসীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির ৩৫ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে পিএসসির ১৪ হাজার জন, জেএসির ২১ হাজার, এসএসসির ২৭ হাজার ও এইচএসসি ৫৭৬ জন শিক্ষার্থী। এসময় উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভিবাসনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়ের উপর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, উপস্থিত সকলকে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের টি শাট, মগ ও ক্যাপ প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে উপলক্ষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আগমন ও বহির্গমনকালে প্রবাসীদেরকে সম্ভাষণ জানানো হয়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের তত্ত্বাবধানে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে উপজেলা পর্যায়েও আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উদযাপন করা হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!