গ্রিসে যে প্রক্রিয়ায় বৈধ হতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা
আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়মিত বা বৈধকরণের কার্যক্রম শুরু হবে। দেশটিতে অবৈধ হয়ে থাকা ১৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি এই প্রক্রিয়ায় নিয়মিত হওয়ার সুযোগ পাবেন বলে প্রত্যাশা বাংলাদেশ দূতাবাসের। এছাড়া এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ-গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তি অধীনে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৪০০০ কর্মী চাকরির ভিসা নিয়ে গ্রিসে আসার সুযোগ পাবেন।
সম্প্রতি এথেন্সে দূতাবাসে আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশিদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কমিউনিটির কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন গ্রিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ। এসময় দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. খালেদ এবং প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিত কুমার পাল এ বিষয়ে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তারা জানান, শুধুমাত্র অনিয়মিত বাংলাদেশিদের জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করবে গ্রিক সরকার,যেখানে নিয়মিত হতে আগ্রহী বা ইচ্ছুক প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবেদনপত্র করতে হবে। সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আপলোড করতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবেই তারা বৈধ হয়ে যেতে পারবেন এবং বৈধভাবে চাকরির সুযোগ পাবেন। অনলাইনে আবেদন সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরপরই আবেদনকারীর ইমেইল এ তার অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট পাঠানো হবে।
বৈধ বা নিয়মিত হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হবে। আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার পর বাংলাদেশিদের সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি সহজ এবং সংক্ষিপ্ত এবং কোনো জটিলতা না থাকায় এজেন্ট বা উকিলের শরণাপন্ন হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কেউ প্রয়োজন মনে করলে অবশ্যই দূতাবাসের সহায়তা নিতে পারেন এবং বিশ্বস্ত উকিলের সহায়তা নিয়ে তাদের আবেদন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন।
প্রথম ধাপ
প্রথম ধাপে নিয়মিত হতে আগ্রহী বা ইচ্ছুক প্রবাসী বাংলাদেশিরা দূতাবাসে তাদের নাম নিবন্ধন করতে হবে এবং তাদের পাসপোর্টের একটি অনুলিপি সত্যায়িত করে নিতে হবে। দূতাবাসে আগ্রহীদের নাম নিবন্ধনের সময় নিচের কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
১. দুই বছরের বেশি মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট নিয়ে আসতে হবে।
২. ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ এর আগে গ্রিসে আগমন বা বসবাসের দলিল থাকতে হবে।
৩. নিজের একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস থাকতে হবে।
৪. নিজ নামে নিবন্ধিত একটি মোবাইল নম্বর থাকতে হবে।
মনে রাখতে হবে যে, দূতাবাসে নাম নিবন্ধন করা হলেই শুধুমাত্র গ্রিক সরকারের ঘোষিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত হওয়ার জন্য আবেদন করতে সক্ষম হবেন। নিবন্ধনকারীদের নাম দূতাবাস অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত করার মাধ্যমে তাদের আবেদনের প্রাথমিক ধাপটি সম্পন্ন করবে।
এরই মধ্যে প্রথম ধাপ নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে এথেন্স দূতাবাস। যারা এরই মধ্যে তাদের সম্ভাব্য চাকরিদাতা নিশ্চিত করতে পেরেছেন তারা শিগগিরই দূতাবাসে গিয়ে তাদের নাম নিবন্ধন করে এবং তাদের পাসপোর্টটি সত্যায়িত করে নিয়ে যেতে পারেন। এভাবে নিয়মিতকরণের প্রথম ধাপটি সম্পন্ন করতে পারবেন।
দ্বিতীয় ধাপ
গ্রিস সরকারের নিবন্ধন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত হলে দূতাবাসে নিবন্ধিতরা Gov.gr অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে তাদের ইমেইল অ্যাড্রেস এবং মোবাইল নম্বরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিতে হবে। এ সময় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন দূতাবাস হতে সত্যায়িত পাসপোর্টের ফটোকপি, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ এর পূর্বে গ্রিসে প্রবেশের বা এর পূর্ব হতে গ্রিসে বসবাসের প্রমাণ বা দলিল এবং একজন সম্ভাব্য চাকরিদাতা ট্যাক্সিসনেট ব্যবহার করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত চাকরির নিশ্চয়তাপত্র আপলোড করেই আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
আবেদন সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে, নিবন্ধনকারী ইমেইল অ্যাড্রেসে অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট বা বেভুচি দেওয়া হবে। বেভুচি প্রাপ্তির মাধ্যমে তার বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন হবে। এই কার্ড বা বেভুচি দিয়ে ইকা, আমকা, ও অন্যান্য রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা যাবে। সেই সাথে চাকরিদাতার সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে কাজে যোগ দিতে পারবেন। এই বেভুচি দিয়ে প্রবাসীরা বাংলাদেশে আসা যাওয়া করতে পারবেন।
তৃতীয় ধাপ
নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপে সংশ্লিষ্ট গ্রিক কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর জমা দেওয়া আবেদন ও কাগজপত্র পরীক্ষা করবে। তা গ্রহণযোগে হলে, অবৈধ বা অনিয়মিত থাকা আবেদনকারীকে ৫ বছরের রেসিডেন্স কার্ড দেবে। রেসিডেন্স কার্ড পাওয়ার পর নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং তিনি গ্রিসে বৈধভাবে বাসবাসের যোগ্যতা পাবেন। ওই বাংলাদেশি তার ইচ্ছা ও সুবিধা অনুযায়ী চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন। প্রতি ৫ বছরে এই কার্ড নবায়ন করা যাবে। এই ধাপে, আবেদনকারীকে তার চাকরির নিশ্চয়তা দানকারীর কাছে কর্মরত থাকা সুবিধাজনক। যাতে তার চাকুরির নিশ্চয়তাপত্র যাচাইয়ের সময় চাকরিদাতা তার সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেন।
ফি
আবেদনকারীরা অনলাইনে আবেদনের পূর্বে গ্রিস সরকারের নির্ধারিত ফি মোট ৯১ ইউরো (প্রসেসিং ফি ৭৫ ইউরো এবং রেসিডেন্স কার্ড ফি ১৬ ইউরো) অনলাইনে ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে দিয়ে তার কোড অনলাইন প্লাটফর্মে তার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। তার আগে দূতাবাসে নিবন্ধনের সময় ৪২ ইউরোর বিনিময়ে বাংলাদেশ সরকারের ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ এর সদস্যপদ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রবাসী নানা কল্যাণমূখী সুবিধা এবং দূতাবাসের কনস্যুলেট সেবা পাবেন।
পরামর্শ
শুধুমাত্র দুই বছরের বেশি মেয়াদর পাসপোর্টধারীরাই দূতাবাসে নাম নিবন্ধন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়মিতকরণ আবেদনের সুযোগ পাবেন। তাই পাসপোর্টের মেয়াদ দুই বছরের কম হলে যথাসম্ভব দ্রুত দূতাবাসে গিয়ে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে পাসপোর্ট সংগ্রহ করারও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া যারা ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ এর আগে দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন তাদের পাসপোর্টটি ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ এর আগে তাদের গ্রিসে অবস্থানের প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হবে। মনে রাখতে হবে,দূতাবাস থেকে সংগৃহীত সত্যায়িত পাসপোর্টের অনুলিপিটিও আবেদনকারীর কাছে একটি আসল বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার প্রমাণ।
যাদের ইমেইল আইডি নেই তারা দ্রুত ইমেল আইডি তৈরি করে -এর পাসওয়ার্ড সবসময় নিজের কাছে রাখতে। কারণ আবেদনের পরপরই এই ইমেইলে সাময়িক রেসিডেন্স পারমিটটি পাঠানো হবে। আর নিজের নামে যদি মোবাইল সিম নিবন্ধিত না থাকলে তাড়াতাড়ি পাসপোর্টের অধীনে একটি মোবাইল সিম নিবন্ধন করে নিতে হবে এবং মোবাইল নম্বরটিও নিজের কাছে রখতে হবে। দূতাবাসে নাম নিবন্ধনের সময় এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আবেদনের সময়ও এই ইমেইল অ্যাড্রেস এবং মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে গ্রিসের মন্ত্রিসভার চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর তা গেজেট প্রকাশের পরই প্রক্রিয়ার শর্তাবলী ও নিয়ম-কানুনগুলো পুরোপুরি জানা যাবে। তখন গ্রিক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ দূতাবাস একটি ফ্লোচার্টের মাধ্যমে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। আবেদনকারীরা তা অনুসরণ করে সহজেই তাদের নিয়মিতকরণের আবেদনটি অনলাইনে সম্পন্ন করতে পারবেন।
রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ প্রত্যাশা করছেন, সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখের আগেই গ্রিসের মন্ত্রিসভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।