গ্রিসে নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে বাংলাদেশিদের সীমাহীন দূর্ভোগ
অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো গ্রিসেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন সাধারণের সামর্থ্যের বাইরে। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে আয়ের তুলনায় প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। বেচা বিক্রি কমে গেছে বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ।
করোনা মহামারির ধাক্কা সামাল দেয়ার পর এবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দ্রব্যমূল্যের বাজারের বেসামাল পরিস্থিতি। প্রতিনিয়তই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নিম্ন আয়ের ও কর্মহীন মানুষের। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্বগতিরকারণে বেশি দূর্ভোগে পড়েছেন বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ার অধিবাসীরাই।
গ্রিস প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ
গত সপ্তাহে প্রকাশিত জেনারেল কনফেডারেশন অফ গ্রিক ওয়ার্কার্সের শ্রম ইনস্টিটিউটের নতুন অর্থনৈতিক উন্নয়ন বুলেটিনে, গ্রিসে শ্রমিকদের ক্রয় ক্ষমতা ৪০% হ্রাস পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পণ্যের দামের তীব্র বৃদ্ধি কর্মীদের ক্রয়ক্ষমতা এবং তাদের জীবনযাত্রার মানকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে। প্রধানত জ্বালানি ও খাদ্যের মতো মৌলিক জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে এমন পরিস্থির মুখোমুখি তারা।
বিশেষ করে যাদের মাসিক আয় ৭৫০ ইউরোর কম, তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে ৪০%। এছাড়াও, প্রতি মাসে ১১০০ ইউরো গড় আয়ের পরিবারের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে ৯% থেকে ১৪ % এর মধ্যে, প্রতিবেদনে বলা হয়।
ইউরোপের এই দেশটিতে বসবাস করেন প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি। এদের মধ্যে সিংহভাগই অনিয়মিত। নতুন যারা এসেছেন তাদের অনেকেরই কাগজপত্র নেই, তারা শহরে কোন কাজও করতে পারে না। এদের অবস্থাটাই বেশি নাজুক। এ ছাড়া যারা পরিবার নিয়ে আছেন তারও সংকটে পড়েছেন বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে যে, চালের বস্তার মুল্য ছিল ৪৫ ইউরো তা বর্তমানে ৫৫ ইউরো, গ্যাস ছিল ১৫ ইউরো তা এখন ১৯ থেকে ২০ ইউরো। ৫ লিটার তেলের মূল্য ছিল ৭ ইউরো এখন ১১ থেকে ১২ ইউরো।
বাংলাদেশ থেকে সুমুদ্রপথে আমদানি করা পণ্যের দামও বেড়েছে। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন আগে যে, কন্টেইনার খরচ হতো ২ থেকে ৩ হাজার ইউরো তা এখনো তিন থেকে চার গুন বেড়েছে।
ব্যবসায়ী রুবেল আহমদ বলেন- ‘বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল আর বাজার খরচ মিলিয়ে এখন ছোটখাটো ব্যবসা বা চাকরি করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ দুর্বিষহ ব্যাপার। বাচ্চাদের পড়া লেখার খরচসহ সব কিছুই ঊর্ধ্বগতি।’
দেশটিতে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছিল মূলত করোনাভাইরাস মহামারির সময়। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা সাভাবিক হলেও এবার চলতি বছর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তেল-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগেছে।
আরও পড়তে পারেন :
গ্রিসে স্বল্প বেতনের শ্রমিকদের ক্রয়ক্ষমতা ৪০% কমেছে
গ্রিসে ‘হিটিং ভাতা’ প্রদান শুরু হচ্ছে
স্পেনে বিক্রি হচ্ছে ‘পুরো গ্রাম’
ইউরোপে গরমে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু
বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সহ সভাপতি শাহনূর রিপন বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ভোজ্যতেল থেকে পশুখাদ্যসহ সবকিছুর দামই বাড়ছে। যারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আছেন তারা হয়তো এতোটা খারাপ পরিস্থিতিতে পরেননি। কিন্তু যারা নিম্ন আয়ের বা কর্মহীন তারা পড়েছেন বেকায়দায়’।
শ্রম ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্বল্প আয়ের উপর উচ্চ ব্যয়ের অসম প্রভাবের কারণে জীবনযাত্রার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ক্রয় ক্ষমতা হ্রাসের একটি অতিরিক্ত নেতিবাচক প্রভাব ভোগ এবং বৃদ্ধির গতিশীলতাকে উদ্বিগ্ন করেছে।