গ্রিসের হিমঘর থেকে দেশে ফিরছে হত্যার শিকার রুনার মরদেহ

রবাসে মৃত্যু। দেড়মাস ধরে মর্গে পড়ে আছে মরদেহ। খোঁজ নেই পরিবারের বিংবা মরদেহ দাবিদারের। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে,মরদেহ দেশে পাঠানো কিংবা প্রবাসে সৎকার। শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যমের প্রচারে জন্মভূমিতেই হচ্ছে হতভাগ্যে এ রেমিট্যান্সযোদ্ধা প্রবাসীর অন্তিম ঠিকানা। প্রবাসের মর্গ থেকে দেশে ফিরছে মরদেহ।

তিনি গ্রিসে নির্মম খুনের শিকার বাংলাদেশি নারী কর্মী রুনা আক্তার্। দেশে পরিবারের সন্ধান না পাওয়ায় ৩৬ বছর বয়সী রুনা আক্তারের মরদেহ প্রায় দেড়মাস পড়েছিল রাজধানী এথেন্সের একটি হাসপাতালের মর্গে।

অবশেষে খোঁজ পাওয়া যায় পরিবারেরর, তাদের আর্জিতে দেশে ফিরছে রুনা আক্তারের মরদেহ। আইনি প্রক্রিয়াসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে, আগামী ২২ অক্টোবর মরদেহ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

Travelion – Mobile

গত ২৮ আগস্ট এথেন্সের কিপসেলির তেনেদু স্ট্রিটে সহকর্মী আরেক বাংলাদেশির ছুরিকাঘাতে রুনা আক্তারকে হত্যা করে। স্থানীয় লোকজন রুনাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে গ্রিক পুলিশ। ইনসেটে রুনা আক্তার
হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে গ্রিক পুলিশ। ইনসেটে রুনা আক্তার

এ ঘটনায় ৪০ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে গ্রিস পুলিশ। তিনি পুলিশের কাছে রুনাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ নিয়ে গ্রিসের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাহ করে সংবাদ প্রচার হয়। সে সময় রুনা ঘাতকের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। পরে জানা যায়, তার নাম সেলিম আহমেদ, গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। বর্তমানে এ মামলায় গ্রিসের কারাগারে বন্দী আছেন।

ময়নাতদন্তের পর এথেন্সের হাসপাতালটির মর্গে মরদেহ রাখা হয়। কিন্তু ঘটনার দেড় মাস পরও রুনার পরিবারের পক্ষ থেকেও কেউ যোগাযোগ করেনি। ফলে মরদেহটি দেশে পাঠানোর উদ্যোগও নিতে পারেনি বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস।

অন্যদিকে হাসপাতালের মর্গের ফ্রিজ ভাড়া বেড়েই চলছিল। দেড় মাসে প্রায় ৩ হাজার ইউরো ফ্রিজ ভাড়া জমে। বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস। অন্যদিকে মরদেহ গ্রিসে দাফন করতে হলেও পরিবারের সম্মতি লাগবে এবং হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে হবে।

আরও পড়তে পারেন : ‘গ্রিসে বিএনপির পথভ্রষ্ট নেতাকর্মীরা আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত’

মরদেহ মর্গে পড়ে থাকা নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে নজরে আসে নিহত রুনা আক্তারের পরিবারের। পরে এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন গ্রিসের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ দেশে পাঠানোর আকুতি জানায় পরিবার। তখনই জানা যায়, নিহত রুনা বেগম নারায়ণগঞ্জ জেলার রিপন মিয়ার স্ত্রী। রুনা আক্তারের বাপের বাড়ি চাঁদপুর এলাকায়।

এ প্রসঙ্গে গ্রিসের বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সহ-সভাপতি অভিবাসন বিশ্লেষক শাহনূর রিপন বলেন, আমাদের কাছে একটি সূত্র ছিল শুধু রুনা আক্তারের পাসপোর্টের ফটোকপি। সেখানে দেওয়া নারায়ণগঞ্জের গ্রামের ঠিকানায় আমরা লোক পাঠাই। কিন্তু ওই ঠিকানায় এ নামের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি’।

আরও পড়তে পারেন : গ্রিস : অবশেষে ধরা পড়লো বিড়ালছানার নির্মম হত্যার অপরাধী

‘পরে এ নিয়ে বিভিন্ন খবর প্রচার হয় এবং তা আমাদের গ্রিসে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন পেজ-গ্রুপে শেয়ার করা হয়। এরপরই আপনার মাধ্যমেই (এ প্রতিবেদক) রুনা আক্তারের মা, মেয়ে, মেয়ের জামাইসহ বেশ কয়েকজন সঙ্গে যোগােযাগ হয় আমাদের’, তিনি যোগ করেন।

আরও পড়তে পারেন : গ্রিসে ৮০ জনকে বাঁচিয়ে রাতারাতি ‘বীর’ এক ক্রেন অপারেট

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, মরদেহটি দেশে পাঠানোর জন্য এরই মধ্যে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। কোনো সমস্যা না হলে আগামী ২২ অক্টোবর মরদেহটি দেশে যাবে।

আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে যোগ দিতে চাইলে এখানে ক্লিক করার অনুরোধ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!