গ্রিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ৬০ জন অনিয়মিত বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বুধবার ইউরোপীয় বর্ডার অ্যান্ড কোস্ট গার্ড এজেন্সি ফ্রন্টেক্সের একটি চার্টার ফ্লাইটে তাদের ঢাকায় পাঠানো হয় ।
এ তথ্য নি্চিত করে এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, অভিবাসীদের মধ্যে ২০ জনকে গ্রিস থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকিরা অন্য দেশে ছিলেন।
জার্মানভিত্তিক অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিস, স্পেন, মাল্টা, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে থাকা অন্তত ৬০ জন অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসী নিয়ে চার্টার ফ্লাইটটি বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮:৪০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করে।
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইলভা জোহানসনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছিল, বুধবার ৬৮ জন অনিয়মিত অভিবাসী নিয়ে একটি ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণের কথা রয়েছে।
গ্রিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ইইউর জয়েন্ট রিটার্ন অপারেশনের আওতায় সংশ্লিষ্ট অনিয়মিত অভিবাসীদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে ২০ জনকে গ্রিস থেকে পাঠানো হয়েছে বলে বুধবার সকালে আমাদের নিশ্চিত করেছে গ্রিক কর্তৃপক্ষ। তাদের সবার কাছেই নিজেদের পাসপোর্ট ছিল। ফলে তাদেরকে ফেরত পাঠাতে দূতাবাসের পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন পড়েনি।’
ঢাকায় ফেরত যাওয়া অভিবাসীদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে গ্রিসে ছিলেন বাংলাদেশি অভিবাসী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমি ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে এথেন্সের মেনিদি ক্যাম্পে আটক ছিলাম। বৈধতার জন্য আবেদন করেছিলাম। দূতাবাসের তালিকায় ৪৫৪৮ নং সিরিয়ালে আমার নাম রয়েছে। আমার আইনজীবী ক্যাম্প থেকে বের হওয়ার আইনি বিষয়গুলো দেখছিলেন। কিন্তু আমাদেরকে কোন তথ্য না দিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়।
“মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় ২৬ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে ফ্লাইটটি এথেন্স থেকে যাত্রা করে। পথে সাইপ্রাসে ট্রানজিটের সময় ইতালি, চেক প্রজাতন্ত, মাল্টা, স্পেন, সুইডেন, রোমানিয়াসহ অন্য ইইউ দেশে থেকে আসা বাংলাদেশিরা আমাদের সাথে যোগ দেয়। আমাদের প্রহরায় ২জন পুলিশ ছিল ফ্লাইটে”, তাজুল যোগ করেন।
৬ বছর ধরে গ্রিসে থাকা বাংলাদেশি অভিবাসী হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামের মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, গাড়িতে তোলার ৫ মিনিটের মধ্যে আমাদের সবার মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়া হয়। আমরা উকিলের সঙ্গে আর যোগােযাগ করতে পারিনি। ঢাকায় আসার পর আমাদের সবার ফোন ফেরত দেয়া হয়।
অপরদিকে বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্স ২০ জনের সংখ্যা জানালেও অভিবাসীরা দাবি করেছেন মোট ২৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রিস থেকে ‘ডিপোর্ট’ করা হয়েছে। এসব অভিবাসীদের মধ্যে ৪ জন ইতিমধ্যে বাংলাদেশ-গ্রিস বৈধতা চুক্তির আওতায় বৈধতার জন্য আবেদন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে ছিলেন।
মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, “আমি গত বছরের জুলাই মাসে আটক হয়ে মেনেদি ক্যাম্পে বন্দী ছিলাম। সেখান থেকে উকিলের মাধ্যমে বৈধতার জন্য আবেদন করে গতকাল অনলাইনে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেয়েছিলাম। কিন্তু তারপরেও আমাকে জোরপূর্বক ‘ডিপোর্ট’ করা হয়েছে।
দেশে ফেরার পর এথেন্সে আইনজীবীর সঙ্গে ফোন যোগাযোগ হলে তাজুল ইসলামও জানতে পারেন, তার বৈধতার আবেদন গ্রহণ করা হয়েছিল’।
ঢাকায় ফেরত যাওয়া ৩০ বছর বয়সি বাংলাদেশি মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘মেনেদি ক্যাম্প থেকে আমাদের মোট ৩০ জনকে বিমানবন্দরে নেয়া হলেও বাকি চারজনকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়। সম্ভবত তাদের আইনজীবীরা দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছিল।
তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ জুবায়েরসহ অন্য বাংলাদেশিরা তাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে এ অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দূতাবাসের মিনিস্টারর মোহাম্মদ খালেদ বলেন, যদি ‘ডিপোর্ট’ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ বৈধতার জন্য আবেদন করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তাদের যৌক্তিক অধিকারের জন্য আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
