‘গৃহকর্মী হলেও নারীদের শিক্ষিত করে বিদেশে পাঠানো উচিত’

দক্ষ নারী কর্মীদের নিরাপদ অভিবাসন দেশের অর্থনীতির জন্য গেম চেঞ্জার হতে পারে বলে মনে করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘নারী অভিবাসীদের নিয়ে অনেক সম্ভাবনা আছে। জার্মানি, জাপানসহ অনেক দেশে দক্ষ নারী শ্রমিক পাঠানো প্রয়োজন। তাই আমাদের মেয়েদেরকে দক্ষ ও শিক্ষিত কর্মশক্তিতে রূপান্তরিত করে নিরাপদ অভিবাসনের পথে এগিয়ে নিতে পারলে তা হতে পারে অর্থনীতির আরেকটি গেম চেঞ্জার।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ভবনে বিজয় ’৭১ হলে নারী অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা ২২টি সংগঠনের জোটের ‘নারী অভিবাসীদের সম্মিলিত কণ্ঠ’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ‘নারী অভিবাসীদের সম্মিলিত কণ্ঠ’ লিখিত প্রস্তাবনা ও সনদ তুলে ধরেন জোটের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, জোটের চেয়ার ইশরাত আমীন, কো-চেয়ার ফওজিয়া খন্দকার, ড. রুবিনা ইয়াসমিন প্রমুখ।

Travelion – Mobile

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘গার্মেন্ট সেক্টরে নারীদের সম্পৃক্ততা দেশের জন্য একধরনের গেম চেঞ্জার বিষয়। বিদেশে কর্মী হিসেবে নারীদের অভিবাসন এই গার্মেন্ট থেকেও বড় গেম চেঞ্জিং রোল পেলে করতে পারে। আমরা এই সুযোগ খুব তাড়াতাড়ি মিস করে যাচ্ছি। কারণ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলে একটা কথা আছে। আমাদের জনসংখ্যায় কাজ করার মতো বয়স আছে। এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড আমাদের সঙ্গে অন্তত ২০ বছর থাকবে। এ সময়ে আমাদের নারীদের বেকার রাখলে ২০ বছর পর তারা কোনো কাজ করতে পারবে না। বিদেশ যাওয়া একজন নারীর একান্ত ব্যক্তিগত পছন্দ। এটাকে সহজ করতে হবে। ‘

গৃহকর্মী হিসেবে পাঠাতে হলেও নারীদের শিক্ষিত করে বিদেশে পাঠানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ নিরক্ষর নারীদের আমরা বিদেশ পাঠাই। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। অল্প শিক্ষা, অর্ধশিক্ষা কিংবা অষ্টম-নবম শ্রেণি পাস হলে তার সচেতনতা কিংবা বুঝতে পারার ক্ষমতা বাড়ে শতগুণ। আর এখান থেকেই শক্তি চলে আসে। তখন কিন্তু কেউ সুযোগ নিতে পারে না। আমি মনে করি, গৃহকর্মী হিসেবে পাঠাতে হলেও শিক্ষিত নারীদের পাঠানো উচিত। অন্তত অষ্টম-দশম শ্রেণি পাস দরকার। ‘

মন্ত্রী বলেন, নারীদের জন্য বিরাট একটি বাজার খুলে আছে সেবা খাতে―কেয়ার গিভার ও নার্সিং। এটা অনেক বড় খাত। আমি মনে করি, এই খাতের প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা টিটিসি হওয়া প্রয়োজন। ভাষা শিক্ষায় কিছুটা হলেও জোর দিতে হবে। কারণ ইউরোপের দেশগুলোতে মোটামুটি ইংরেজি জানা থাকলেও কাজ হয়।

অনুষ্ঠানে শাহীন আনাম বলেন, ‘দারিদ্র্য থেকে মুক্তি ও অধিক উপার্জনের পথ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ। তার পরও আমাদের মেয়েরা কর্মসংস্থানের জন্য বৈদেশিক অভিবাসনকে বেছে নিচ্ছেন, এটা খুশির খবর। ২০২১ সালে দেখা বাংলাদেশের মোট অভিবাসী কর্মশক্তির ১৩ শতাংশই ছিল নারী অভিবাসী। ‘

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই চাই না নারী অভিবাসন বন্ধ হোক। শুধু চাই নারীর এই অভিবাসন যেন তাকে আরো কঠিন কঠোর অবস্থার দিকে ঠেলে না দেয়। দুর্ভাগ্যবশত আমরা দেখছি অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের অভিবাসীদের নিরাপদ হচ্ছে না, যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, কপর্দকহীন হয়ে দেশে আসছেন, কম মজুরি পাচ্ছেন, দীর্ঘ সময় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আমরা এসব ইস্যু নিয়ে কাজ করছি এবং সরকারের সাথে আরো কাজ করতে চাই। ‘ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবার জন্য নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

YouTube video

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!