গার্মেন্টস কর্মী থেকে ‘সিআইপি’ গ্রিসপ্রবাসী শেখ আল আমিন
ইউরোপের দেশ গ্রিস থেকে বৈধপথে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এবার বাংলাদেশ সরকারের এনআরবি সিআইপি (বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) নির্বাচিত হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও কমিউনিট সংগঠক শেখ আল-আমিন।
গ্রিস থেকে প্রধমবারের মতো শেখ আল-আমিনসহ দুইজন প্রবাসী ব্যবসায়ী এনআরবি সিআইপি মর্যাদা অর্জন করেছেন। গ্রিসের ২ জন মোট ৬৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে ২০২০ সালের জন্য সিআইপি নির্বাচিত করেছে সরকার।
গত ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
শেখ আল-আমিন তার মা আমেনা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে সিআইপি পদক গ্রহণ করেন এবং এই সম্মাননা মাকে উৎসর্গ করেন।
গ্রিসে গার্মেন্টসকর্মী থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম ও সততায় একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শেখ আল আমিন। বর্তমানে তার ৪টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ ৭টি প্রতিষ্ঠানে ২ শতাধীক বাংলাদেশি কাজ করছেন।
খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার মো. সাইদুর রহমান ও আমেনা বেগমের ছেলে শেখ আল-আমিন ১৯৯৯ সালে বন্ধুদের সাথে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইউরোপের দেশ গ্রিসে। সেসময় অনিয়মিত থাকায় কোন চাকুরীর ব্যবস্থা করতে পারেননি। প্রায় ১ বছর কেটেছে কর্মহীন অবস্থায়। এক পর্যায়ে একটি গামের্ন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী নেন। সেখানে ৫ থেকে ৬ বছর অকøান্ত পরিশ্রম ও সততায় চাকুরী করেন।
চাকুরীরত অবস্থায় দেখতেন অনেক মালিক কর্মচারীদের বেতন দেয়না ঠিক মতো। বাংলাদেশিদের বিভিন্নভাবে হয়রানী করে। তখন তিনি একটি গার্মেন্টস মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রতিনিয়ত স্বপ্ন তাড়া করে বেড়াত কীভাবে একজন সফল ব্যবসায়ী হতে পারেন। এবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে।
এই প্রতিবেদকের কাছে প্রবাস জীবন ও সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠার এমন গল্প তুলে ধরে শেখ আল-আমিন জানান,২০০৫ সালে সালে গার্মেন্টস ফ্যাক্টিরির মাধ্যমে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
বর্তমানে ৪টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছাড়াও রয়েছে খাবারের হোটেল, ট্রাভেল্স ও মানি ট্রান্সফার এজেন্সিসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২ শতাধিক বাংলাদেশির।
বাংলাদেশের রিজার্ভ এবং দেশের অর্থনীতি বাড়াতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথাও জানান এই রেমিট্যান্সযোদ্ধা।
এনআরবি-সিআইপি হিসেবে যে সব সুবিধা পাবেন
এনআরবি-সিআইপি হিসেবে শেখ আল-আমিন বাংলাদেশে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিষয়ক নীতিনির্ধারণী কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। দেশ-বিদেশে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অগ্রাধিকার পাবেন। বাংলাদেশ সচিবালয়ে পাশ ছাড়াই প্রবেশাধিকার সুযোগ পাবেন।
এ ছাড়া বিজয় দিবস, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, একুশে ফেব্রুয়ারি, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস উপলক্ষে বিদেশের বাংলাদেশ মিশনে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ পাবেন। দেশে উপস্থিত থাকলে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ এবং সিটি করপোরেশন আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা পাবেন ।
এ ছাড়া তিনি বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ এবং স্পেশাল হ্যান্ডলিং ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। সড়ক, বিমান, নদীপথে ভ্রমণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকিট পাবেন। হোটেল-রেস্তোরাঁয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা পাবেন। তার স্ত্রী, নির্ভরশীল পুত্র-কন্যা ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেবিন সুবিধা পাবেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন এবং তাদের বিনিয়োগ ‘ফরেন প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট (প্রমোশন অ্যান্ড প্রটেকশন) আইন অনুযায়ী সংরক্ষণ করা হবে ।
প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ