কোরিয়াপ্রবাসীরা সতর্ক ও নিরাপদে, নেপথ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস

দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শনিবার রাত পর্যন্ত সবশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে এই ভাইরাসে ৭ হাজার ৪১ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৪৭ জন মারা গেছেন।

আক্রান্তদের মধ্যে ৬ হাজার ১৩৩ জন দেগু এবং উত্তর গিয়ংসাং প্রদেশের, যা দক্ষিণ কোরিয়ার করোনা আক্রান্ত মোট রোগীর ৯০.৬ শতাংশ। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কোরিয়া সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে।

এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দেশটিতে বসবাসরত ২০ হাজার বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির দিন কাটচ্ছে আতংক ও উৎকন্ঠার মধ্যে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি এই মরণঘাতি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে কোন খবর পাওয়া যায়নি।

Travelion – Mobile

আতংকিত হলেও বাংলাদেশিরা কিন্তু সর্বোচ্চ সতর্ক ও নিরাপদ বলয়েই রয়েছেন। মাস্ক ব্যবহার এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে তারা চলাফেরা করছেন। সমাবেশ এড়িয়ে চলছেন। মেনে চলছেন বিধি-নিষেধগুলো।

আর এক্ষেত্রে তাদের সহায়তা ও শক্তি যোগাচ্ছে সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাস। সংকট মুহুর্তে দূতাবাসকে পাশে পেয়ে বাংলাদেশিদের মনোবল অনেক চাঙ্গা রয়েছে। সতর্ক ও সচেতনথেকে প্রতিরোধ করছেন মারণঘাতি।

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম করােনাভাইরাস আক্রান্তের দিন থেকেই বাংলাদেশে দূতাবাস এই ভাইরাস থেকে বাংলাদেশিদের মুক্ত রাখতে প্রচার-প্রচারণাসহ নানা পদক্ষেপ চালিয়ে আসেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ প্রবাসীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছে দূতাবাস।

এইসব কার্যক্রমের শধ্যে রয়েছে; দূতাবাসের কার্ষক্রম ২৪ ঘন্টা সচল রাখা, জরুরী হট লাইন চালু, সামাজিক যোগাযােগ মাধ্যম এবং ভিডিওবার্তার মাধ্যমে সচেতনতা ও প্রতিরোধকমূলক প্রচারণা, এবং সব কিছু ছাপিয়ে আবিদা ইসলামের করোনা-সতর্কতা ভিডিও বার্তা বেশ সাড়া ফেলে প্রবাসীদের মাঝে।

 দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম
দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

এ ছাড়া নিয়মিত ব্রিফিং, কোরিয়ান সরকার থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বা তথ্যগুলোকে সহজে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে দ্রুত সময়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা, করোনার প্রাদুর্ভাব সময়ে কনস্যুলেট সেবার জন্য প্রবাসীদের সরাসরি না এসে ডাকযোগে সম্পূর্ন করার ব্যবস্থা করা, কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রবাসীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগ।

এইসব পদক্ষেপে উদ্যােগ আর সার্বিক তত্ত্ববধানে আন্তরিকভাবে সম্পৃক্ত থেকে প্রবাসীদের মন জয় করে নিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। করোনা প্রাদূর্ভাবের চরম সময়ে তার দেওয়া করণীয় ও বর্জনীয় নিয়ে ভিডিও বার্তা প্রবাসীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ থেকে রক্ষায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা আর মানবিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতের প্রশংসা পঞ্চমূখ নানা শ্রেণীর পেশার কোরিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা। আকাশযাত্রার কাছে অনুভূতি জানাতে গিয়ে তেমনটাই ওঠে আসে।

বাংলাদেশ ফোরাম ইন কোরিয়ার নেতা সোহরাব হোসেন বলেন,”করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে দক্ষিন কোরিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিরা যখন চরম আতংকে দিশেহারা ঠিক তখনি বাংলাদেশ দূতাবাস বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের সবার হ্রদয় জয় করে নিয়েছেন । বিশেষ করে মান্যবর রাষ্ট্রদূতের আন্তরিকতা নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।”

মেট্রো রেল স্টেশন মাস্ক পরিহিত প্রবাসীরা বাংলাদেশিরা
মেট্রো রেল স্টেশন মাস্ক পরিহিত প্রবাসীরা বাংলাদেশিরা

বৃহত্তর নোয়াখালী এসোসিয়েশন ইন কোরিয়া নেতা মনির পাটোয়ারী বলেন,”করোনা প্রাদূর্ভাব থেকে রক্ষা করতে দূতাবাসের তৎপরতায় এখানকার প্রবাসীরা অনেক সচেতন আছেন, যার ফলে এখনও্র কোন বাংলাদেশি এই মারণঘাতির শিকার হন নি।”

ইকেবিসির সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান মাসুম বলেন,”দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ও রাষ্ট্রদূত কোরিয়াতে আমাদের অভিভাবক। করোনা রোগ সংক্রান্ত দূতাবাসের কার্যক্রমে আমি প্রবাসী হিসেবে গর্বিত, পাশাপাশি আশা করব ফেসবুক পেইজটি যেন আরো সক্রিয়তার সাথে পরিচালিত হয়, এতে প্রবাসীরা আরো উপকৃত হবেন।”

চট্রগ্রাম এসোসিয়েশন অব সাউথ কোরিয়ার সভাপতি মেক্সিন চৌধুরী বলেন,”করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মান্যবর রাষ্ট্রদূতের ভিডিও বার্তা প্রবাসীদের সচেতনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া প্রায় প্রতিদিন সবশেষ তথ্যের নোটিশ প্রদান করায় আমরা পেশাদারিত্ত্বের দৃষ্টান্ত দেখছি।”

জি এম ই-এর হেড অব মার্কেটিং সজীব দাস বলেন,”করোনাভাইরাসে দ্রুত বিস্তার নিয়ে কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানা ধরনের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মাঝে সিউল দূতাবাসের তৎপরতা লক্ষণীয়। নানা ধরনের সচেতনতামূলক বার্তাসহ সরাসরি সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড সত্যিই আমাদের শক্তি যোগাচ্ছে।”

ছুটির দিনে মাস্ক পড়ে বেড়াতে বেরিয়েছেন  প্রবাসী পরিবার
ছুটির দিনে মাস্ক পড়ে বেড়াতে বেরিয়েছেন প্রবাসী পরিবার

ইয়ংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হাসি রাণী বাড়ৈ বলেন,”আমাদের দেশের প্রবাসীদের মধ্যে আশার আলো ও ভরসার পথ এই দূতাবাস। করোনাভাইরাস নিয়ে দূতাবাসের সচেতনতা, সহযোগিতা ও নজরদারিতে আমরা প্রবাসীর সন্তুষ্ঠ।

দেগু বসবাসরত বি. বাড়িয়া কমিউনিটির সেক্রেটারি আব্দুল আলীম করোনা সর্তকতায় দূতাবাসের কার্যক্রম ও রাষ্ট্রদূতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কমিউনিটি ব্যক্তিত্ত্ব রবিউল ইসলাম বুলবুল জানান,”বাংলাদেশ দূতাবাস বিশেষ করে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সচেতনতায় প্রবাসীরা উচ্চসিত। কোরিয়াপ্রবাসীদের সচেতন করার জন্য দূতাবাস কর্তৃপক্ষের দেওয়া ভাইরাস সংক্রান্ত ফেসবুকে পোস্টে আমরা দারুণ উপকৃত হচ্ছি।”

জেজুতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রিয়াদুল আলম জানান,”দূতাবাসের এই কার্যক্রমে পেশাদারিত্ব এর পরিচয়। আমরা রাজধানী থেকে অনেক দূরের দ্বীপে থাকলেও দূতাবাসের করোনাভাইরাসের আপডেটগুলো পাচ্ছি এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলছি।”

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ রাষ্ট্রদূতের
দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ রাষ্ট্রদূতের

রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বলেন,”প্রবাসীদের কল্যাণই শুধু সংকটে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মহান দায়িত্ব। সেই বোধ থেকেই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মারণঘাতি ভাইরাস থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদে রাখতে।”

তিনি আরও বলেন, প্রবাসীর আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সতর্ক হয়েছেন,নিজেকে নিরাপদ রাখছেন জেনে পরিশ্রমের সার্থকতা খুঁজে পাই। এ জন্য থাদেরও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সে সঙ্গে সংকট শেষ না হএয়া পযর্ন্ত নিজেকে নিরাপদ বলয়ের মধ্যে রাখার জন্য প্রত্যক প্রবাসীর প্রতি আবারও অনুরোধ জানাচ্ছি।”

“মরণাঘাতি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ যুদ্ধে” সিউলের পদক্ষেপের প্রশংসাও করে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী সিউল দূতাবাস দৃঢ়ভাবে এই কঠোর পরিস্থিতিতে নিষ্ঠাবান কোরীয় নেতৃত্ব এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষকে সমর্থন করে।”

ভিডিও বার্তা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!