কোরিয়ার নিষেধাজ্ঞা সরাতে প্রয়োজন দ্রুত পদক্ষেপ

ইপিএস সিস্টেমে কোরিয়া যাওয়াটা বাংলাদেশিদের জন্য রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাড়িয়েছিলো গত কয়েকবছরে এমনিতেই! সেই সাথে করোনা যেনো ইপিএস’র কফিনে পেরেক হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য। কিন্তু এই করোনাকালীনও অন্যদেশ যেমন; শ্রীলংকা, নেপাল, কম্বোডিয়া, উজবেকিস্তান থেকে বিদেশিরা কোরিয়তে ফিরে আসছে। শুধু কঠীন সিদ্ধান্টা এসেছে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশ থেকে আগতরা কোরিয়ার জন্য নিরাপদ নয়, কোরিয়ান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ছোট্ট এই এক লাইনের কথাটা যে কতটা অপমানজনক, অবমাননাকর আর অবজ্ঞার সেটা বুঝার জন্য কোনো পিএইচডি ডিগ্রির প্রয়োজন পড়ে না নিশ্চয়ই!

এই কথাটা কোরিয়ান’রা কেন বলছে? কি কারনে বাংলাদেশি লোকজনের প্রতি তাদের এই বিরুপ মনোভাব তৈরি হয়েছে সেটা বিবেচনায় নিয়ে আগামীদিনের কর্মপন্থা নিরুপন করা এখন সময়ের দাবী।

Travelion – Mobile

বাংলাদেশি কর্মীদের এমনও স্বর্নযুগ কোরিয়াতে কেটেছে, যখন কোরিয়ানরা বিদেশি শ্রমিক বলতে বাংলাদেশি ছাড়া অন্যদের ভাবতে চাইতো না। তাহলে হঠাৎ করেই কেন তাদের পছন্দের এই তালিকা পরিবর্তন হয়ে গেলো? ইপিএস কিংবা বিদেশ মন্ত্রণালয় নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান’গুলি কি কখনো ভেবে দেখেছে?

দক্ষিন কোরিয়ার মতো লোভনীয় শ্রমবাজার কি বাংলাদেশ অন্য কোথাও আর তৈরি করতে পেরেছে? উত্তরে না বলা যায় নিঃসন্দেহে!

করোনা আগমনের আগে জাপানে কর্মী প্রেরন নিয়ে খুব আলোচনা হলো, কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতার মুখ দেখা যায় নি। এর আগে মালয়েশিয়ায় জি টু জি পদ্ধতিতে লোক পাঠানোর চুক্তি করে, সারাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষকে নিবন্ধিত করা হয়েছিলো, সেই প্রজেক্টও অনেক আগেই থেমে গেছে। দুবাই’তে তো আমাদের শ্রমিক রফতানী একরকম বন্ধই বলা যায়। দুবাই’র শ্রমবাজার পুরোটাই ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানের দখলে, সেখানে কি আমাদের মন্ত্রনালয়ের লোকজন উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পেরেছে?

নাহ,কোথাও কিছুই করতে পারিনি আমরা। বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট লোকজনের সমালোচিত কর্মকাণ্ড যতটা আমাদের নজরে আসে,তাদের পজেটিভ কার্যক্রম তার তুলনায় খুবই কম দেখি আমরা।

সবশেষ দক্ষিন কোরিয়ার লোভনীয় শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের ভিসা আপাতত স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই দেশের সরকার। পরপর দুইটা চার্টার্ড ফ্লাইটে বাংলাদেশি যাত্রীর শরীরে কোভিড-১৯ পজেটিভ হবার পরে সেই দেশের জনগন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনার ঝড় তুলে বাংলাদেশীদের নিয়ে এবং বহু কোরিয়ান নাগরিক সেই সমালোচনায় নেতিবাচক কমেন্টস এবং সেই কমেন্টসেও অনেক লাইক রিয়েক্ট পড়ে!

সর্বোপরি সারা কোরিয়ায় বাংলাদেশিদের নিয়ে একটা আতংক ছড়িয়ে পড়ে! অনেক ফ্যাক্টরিতে নিয়মিত কাজ করা বাংলাদেশিদের নিয়ে আলাদা ভাবে মিটিং করা হয়! তারা কে কোথায় কবে বাইরে গিয়েছিলো! অনেককে আবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আগামী দুইমাস ফ্যাক্টরি এবং ডরমেটরির বাইরে যেনো না যায়!

এখন প্রশ্ন এই দায় আসলে কার? বিশেষ বিমানের টিকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু ধাপ অতিক্রম করে, তারপর টিকেট পাওয়া যায়। যে কেউ চাইলেই বিশেষ বিমান বা চার্টার্ড ফ্লাইটের টিকেট নিতে পারেনা! অন্যান্য দেশের যাত্রীরা যেখানে সমস্ত ধাপ পার হয়ে কোরিয়ায় স্বাভাবিক সুস্থভাবে প্রবেশ করতে পারছে, সেখানে বাংলাদেশিরা একই কার্যক্রম বা পদক্ষেপ নেয়ার পরেও করোনা পজেটিভ কেন হচ্ছে?

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না বাংলাদেশকে। এরকমটাই ধারনা করছেন ইপিএস সংশ্লিষ্ট লোকজন।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে কোরিয়ার এই শ্রম লোভনীয় বাজার ধরে রাখার দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি। পররাষ্ট্র , প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, কোরিয়ায় বাংলদেশ দূতাবাসসহ সংশালিষ্ট সকলের কাছে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : কোরিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি

বিশ্বময় করোনা: বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা কোরিয়ায় কেমন আছ���ন

বিশ্বময় করোনা: বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা কোরিয়ায় কেমন আছেন১৬ জুন ২০২০, মঙ্গলবারবাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭:৩০ | কোরিয়া সময় রাত ১০.৩০

Posted by AkashJatra on Tuesday, June 16, 2020

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!