কোরিয়ানদের উদ্ধারে ক্রুদের সঙ্গে উড়ে যান বিমানসংস্থার প্রধান
চীনের উহানের সবাই যখন জীবন নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে বাঁচায় ব্যস্ত তখন সেখান থেকে দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে উদ্ধারকারি ফ্লাইটে চড়ে বসলেন কোরিয়ান এয়ারের কোরিয়ান এয়ারের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়াল্টার চো। তিনি জাতীয় বিমানসংস্থাটির প্রধানই শুধু নন, এর বৃহত্তম অংশীদার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার একজন ধনকুবেও।
গেল ৩১ জানুয়ারি উহানে আটকে পড়া কোরিয়ানদের আনতে যাওয়া প্রথম ফ্লাইটটিতে অন্যান্য ক্রুদের সাথে ছুটে যান ওয়াল্টার চো । জানা গেছে, জীবনের ঝুঁকি থাকলেও ক্রুদের উৎসাহ ও সাহস যোগাতে আর দেশের নাগরিকদের উদ্ধারের সাক্ষী হতে দিতেই এমন দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত তাঁর। উহানে উদ্ধার মিশনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের মধ্যে একমাত্র তিনিই এমন দৃষ্টান্ত রাখলেন।
বিমানের বহর, আকার, আন্তর্জাতিক গন্তব্য এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভিত্তিতে কোরিয়ান এয়ারকে ধরা হয় বৃহত্তম। বিশ্বের ৪৪ টি দেশের ১২৬ টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে এবং ১৩ টি গন্তব্যে অভ্যন্তরীণ চলাচল করে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থাটি। যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে এটি বিশ্বের শীর্ষ ২০ টি এয়ারলাইন্সের মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক কার্গো এয়ারলাইন্সের মধ্যে অন্যতম। ১৯৬৯ সালের ১ লা মার্চ যাত্রা শুরু করা কোরিয়ান এয়ারের বৃহত্তম এবং নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ারহোল্ডার ওয়াল্টার চো’র পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হানজিন গ্রুপ। পারিবারিক মালিকানার সূত্রে ওয়াল্টার চো ২০০৪ সালে কোরিয়ান এয়ারে যোগ দেন। তার নেতৃত্বের গুণাবলী ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা তাঁকে কোরিয়ানদের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় করেছে।
গেল শুক্রবার প্রথম দফায় ৩৬৮ কোরিয়ানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসে কোরিয়ান সরকার। উহান থেকে সকাল ৮টায় সিউলের গিম্পো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামে এয়ার কোরিয়ার বোয়িং ৭৪৭-৩০০ উড়োজাহাজটি। এসময় সেখানে প্রতিষ্ঠানটির সিইও ওয়াল্টার চো’কে দেখা যায়। তার সাথে ছিল উড়োজাহাজের আরো ১৫ কেবিন ক্রু।
চো’র উহান যাওয়ার বিষয়টি কোরিয়ান হেরাল্ড পত্রিকায় একদিন আগেই আলোচনায় আসে। যদিও তার উদ্ধারকারি ফ্লাইটে থাকার বিষয়টি উড্ডয়নের আগেই নিশ্চিত করা হবে বলে সংবাদে জানানো হয়। তবে শুক্রবার উহান থেকে ফ্লাইটটি সিউলে নামার পরপরই বিষয়টি নিয়ে সব অনিশ্চয়তা দূর হয়।
কোরিয়ান সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায় উহান থেকে কোরিয়ানদের উদ্ধার করতে যাওয়া ফ্লাইটগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গিয়েছেন ৩০ জন কেবিন ক্রু। এক্ষেত্রে তারা কোন অর্থ বা পারিশ্রমিকও নেননি। দেশের মানুষদের বিপদের কথা চিন্তা করে তারা জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তা দেওয়ার মহৎ ব্রতেই তারা ছুটে যান উহানে। তাদের প্রেরণা দিতেই সঙ্গী হয়েছিলেন ওয়াল্টার চো।
নিউজ রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, কোরিয়ান এয়ারের দশ হাজার ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট, যাদের মধ্যে অনেকেই সংস্থাটির শ্রমিক ইউনিয়নে এক্সিকিউটিভ পদে রয়েছেন, তারা জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তা দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করছেন। এদেরই মধ্যে ৩০ জন গিয়েছিলেন উদ্ধারকারী ফ্লাইটে।
এদিকে চো নেতৃত্বে আসা প্রথম ফ্লাইটটি যখন সিউল পৌছায় তখন যাত্রীদের মধ্যে ১৮ জনের শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার দেখা মিলেছিল। অবতরণের পরেই তাদের আরও পরীক্ষার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে কয়েকজনের মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এতে করে ধরে নেওয়া বড় ঝুঁকি নিয়েই ওয়াল্টার চো যাত্রী হয়েছিলেন উদ্ধারকারী ফ্লাইটটিতে।
ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ ধরনের হ্যজমেট স্যুট পড়ে ফ্লাইটে উঠেছিলেন চোসহ সকল ক্রু এবং চিকিৎসকসহ উদ্ধারকারি দলের সদস্যরা। এ কারণে তাদের উহান থেকে ফিরিয়ে আনা যাত্রীদের মতো দু’সপ্তাহ ব্যাপী পর্যবেক্ষেণ রাখার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উদ্ধারকারী ফ্লাইটের সাথে চো’র উহান যাওয়ার বিষয়টি বেশ আলোড়ন তুলেছে কোরিয়ানদের মাঝে । সামাজিক যোগোযাগ মাধ্যমে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। তবে অনেকে বাঁকা চোখেও দেখছেন । তাদের দাবি, মার্চ মাসে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের সভার আগে প্রচারের স্টান্টের জন্য তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার যাত্রার আগে কোরিয়ার ইনচিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাত্কালে ওয়াল্টার চো বলেছিলেন যে, তিনি উহানে অবরুদ্ধ কোরিয়ানদের উদ্ধারে অংশ নেওয়া তার সংস্থার স্বেচ্ছাসেবি কর্মীদের সাথে যোগ দেওয়া এবং পাশাপাশি তাদের সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব যাতে কারও (উড়োজাহাজের ভেতর) কোন ধরনের সমস্যা না হয়।” চো আরও জানান, যে কোনও সময় দেশের ডাকে তিনি সাড়া দেবেন বলে
দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্ক নিউং-হুকে বলেছেন।