কুয়েতে ‘সাধারণ ক্ষমা’ নেয়নি লাখেরও বেশি অবৈধ অভিবাসী

কুয়েতে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য করোনা পরিস্থিতিতে ঘােষিত মাসব্যাপী ‘সাধারণ ক্ষমা’ নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) শেষ হয়েছে। আগেই সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছিল সময়সীমা বাড়ানোর কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। কার্যত তাই হয়েছে, সাধারণ ক্ষমার সময়সীমা আর বাড়ানো হয়নি।

যদিও সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যায় সন্তুষ্ট নয় কুয়েত কর্তৃপক্ষ। সরকারি সংস্থাগুলোর মতে লাখেরও বেশি অবৈধ অভিবাসীর হদিস নেই, সুযোগ না নিয়ে তারা আত্মগোপনে রয়ে গেছে।

কুয়েত সরকার দেশটির অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল গেল ১ এপ্রিল। এ ক্ষমার আওতায় এক মাসের মধ্যে দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীরা কোনো প্রকার জেল অথবা জরিমানা প্রদান করা ছাড়া নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল।

Travelion – Mobile

আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়া সময়সীমার মধ্যে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার অবৈধ প্রবাসিদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ২৩ হাজার ৫০০ জন সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছেন। অর্থাৎ ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ এই সাধারণ ক্ষমার সুবিধা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বা আগ্রহী নয় এবং এখনো বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় লুকিয়ে আছে।

সাধারণ ক্ষমায় কার্যক্রমে নিয়োজিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধার ও আশ্রয় বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আবদিন আল-আবিদিন জানান যে, সাধারণ ক্ষমায় নিবন্ধিত এবং আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা ২৩,৫০০ জন অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে ২১ হাজারের যাত্রার তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। বাকি ২ হাজার ৫০০ জনের ভ্রমণ তারিখ ঠিক করা হয়েছে।

আবদিন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, সাধারণ ক্ষমার শেষ দিনে সকল প্রবাসী সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক অবৈধ অভিবাসীর উপস্থিতি ঘটেছিল এবং শেষ পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ জনকে গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, কুয়েতে অবৈধ হয়ে যাওয়া সাড়ে ৪ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছে। বর্তমানে তাদের সরকারের অধীনে একাধিক ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। ২০১৮ সালের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছিলেন ৮ হাজার বাংলাদেশি।

মঙ্গলবার দেশটির জাতীয় সংসদের স্পিকার মারজুক আল ঘানিম সমাজ বিষয়ক মন্ত্রী মারিয়াম আল আকিলের বরাত দিয়ে দাবী করেছেন, বর্তমানে কুয়েতে মোট অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা আনুমানিক ১ লাখ ৫৮ হাজার থেকে ৪ লাখ ৩৩ হাজার হতে পারে। স্পিকারের কার্যালয়ে সমাজ বিষয়ক মন্ত্রী,পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাংসদদের সাথে এক বৈঠকের পর এই দাবী করেন তিনি।

এর বাইরে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে দেশে ফিরতে নিবন্ধিত ভারতীয়, মিশরীয় ও ফিলিপাইনি অবৈধ অভিবাসীদেরও বিভিন্ন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। ভারত আগামী ৫ মে থেকে তাদের নাগরিক দেশে ফেরার জন্য বিমান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে কুয়েত সরকারকে।

আরব টাইমসকে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল-সালেহ জানান, তারা অ্যামনেস্টি সেন্টার থেকে পাওয়া একটি রিপোর্ট পর্যালোচনা করেছেন। সেখানে অবৈধ অভিবাসিদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোন নির্দিষ্ট তারিখ নিশ্চিত করা হয়নি, যার কারণে পুরো বিষয়টি নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে। আর বর্তমান সংকটের সময় এটির পেছনে বাড়তি প্রচেষ্টা আর সম্পদ নষ্ট করতে হচ্ছে কুয়েত সরকারকে।

কারফিউ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে আসা অবৈধ অভিবাসীরা
কারফিউ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে আসা অবৈধ অভিবাসীরা

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আরও অনেকগুলি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সমস্ত আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কারণ জরুরি পরিস্থিতিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলির প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যে দেশগুলি তাদের নাগরিকদের জন্য আকাশসীমা খুলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সে সব দেশের প্রত্যাবর্তনে ইচ্ছুকদের জন্য সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে।

এ দিকে আজ সময়সীমা শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় বেশ কিছু অবৈধ অভিবাসী নিবন্ধভুক্তদের সঙ্গে দেশে ফিরতে আটক হওয়ার আশায় কারফিউ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।

আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে বা তাদের দেশগুলির আকাশসীমা খোলার পরে একটি নতুন সময়সীমা জারির হতে পারে বরে আশ্বাস দিয়ে এইসব লঙ্ঘনকারীদের বাসায় ফিরে যেতে আহবান জানান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!