কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কালামের গ্রেফতারের খবর গুজব
কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম গ্রেফতার হন নি। সামাজিক যোগােযাগ মাধ্যম ফেসবুকে পাপুলকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তাকে গ্রেপ্তারের যে যেসব খবর ভাইরাল হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা, গুজব ও অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন কুয়েত দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কুটনৈতিকদের দায়মুক্তি বিধান রয়েছে। সে কারণে রাষ্ট্রদূত বা কুটনেতিকদের আইনের আওতায় নিতে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার। শুধুমাত্র বহিস্কারের ক্ষমতা রাখে।
ভিয়েনা কনভেনশনের ২২ ধারা অনুযায়ী মিশন প্রধানের অনুমতি ছাড়া দূতাবাসে প্রবেশ করা যায় না বরং দূতাবাসের ভবন রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আবার ২৪ ধারা অনুযায়ী দুতাবাসের দলিল পত্র, এমনকি দুতাবাসের বাহিরে সংরক্ষিত দলিলপত্রের সুরক্ষা প্রদান করতে হবে। তাছাড়া, ২৭ ধারা অনুযায়ী তাদের অবাধ যোগাযোগের নিশ্চয়তা প্রাদান করতে হবে। আবার ২৯ ধারা অনুযায়ী দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দের নিরাপত্তার ব্যাঘাত করা যায় না অর্থাৎ তাদের গ্রেফতার ও ডিটেনশন থেকে সুরক্ষা প্রদান করেছে।
আরও পড়তে পারেন : কূটনৈতিক দায়মুক্তি না থাকলে কুয়েতে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতও আটক হতেন
একই সাথে ৩১ ধারা অনুযায়ী তারা ফৌজদারী মোকদ্দমা, দেওয়ানী মোকদ্দমা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণ থেকে দায়মুক্তি পাওয়ার অধিকারী। পাশাপাশি ৩০ ধারা অনুযায়ী তাদের বাসস্থান, যোগাযোগ ও সম্পদের উপর আক্রমণ করা যায় না এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আচরণ ও ভ্রমণ অবাধ থাকবে। তাছাড়া, তারা কর মওকুফ পাওয়া, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় প্রতীক ব্যবহার করার অধিকারী।
কুয়েত দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা আরো বলেন, এতে করে সহজেই অনুমেয় যে, মান্যবর রাষ্ট্রদূত গ্রেফতার হননি।
এক্ষেত্রে একথাও তিনি যোগ করেন যে, যেকোনো দেশ, বিদেশী রাষ্ট্রদূতের কর্মে অসন্তুষ্ট হলে, হয়তো তাকে সেদেশ ত্যাগের ক্ষেত্রে একটি আল্টিমেটাম দিতে পারে। এর বেশি কিছু করা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।
প্রসঙ্গতঃ কুয়েতে অর্থ ও মানব পাচারের দায়ে এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল গ্রেফতার হওয়ার পর নানা আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালামের নাম ওঠে আসে। এরই মধ্যে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেখানে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মূলত : এস এম আবুল কালামের দায়িত্ব পালনের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে যায় আরও দু’মাস আগেই। কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে তিনি দু’মাস বেশি থেকেছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে তিনি দেশে ফিরে আসছেন।
আগের খবর : কুয়েতে এমপি পাপুলের আটকাদেশ দুই সপ্তাহ বাড়ল
পাপুলকাণ্ডের সঙ্গে এস এম আবুল কালামের সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, তার (এস এম আবুল কালাম) ছেলে পাপুলের কোম্পাানিতে চাকরি করত, এমন অভিযোগও এসেছে। তবে রাষ্ট্রদূত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য-প্রমাণও নেই। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যেগে এস এম আবুল কালামের বিষয়ে তদন্ত করতে আগ্রহী নয়, কারণ যেসব কারণে মন্ত্রণালয় একজন রাষ্ট্রদূতের বিষয়ে তদন্ত বা এ ধরনের পদক্ষেপ নেয় তার দায়িত্বপালনকালে সে ধরনের কারণ ঘটেনি, কিংবা অভিযোগও আসেনি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিংবা তথ্য-প্রমাণ আসলে সেটি অব্যশই নিয়ম অনুযায়ী খতিয়ে দেখা হবে।
এস এম আবুল কালাম পেশাদার কূটনীতিক নন। তিনি চট্টগ্রামের নামকরা ব্যবসায়ী এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ছিলেন। ২০১৬ সালে তাকে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে সরকার। তবে তিনি আলোচায় আসেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে কুয়েতের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশি এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে প্রকাশ হওয়া অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগের খবরকে ‘ফেক নিউজ’ উল্লেখ করে বার্তা পাঠিয়ে।
আরও পড়তে পারেন : কুয়েতের দুই এমপিকে ১৫ কোটি টাকা ঘুষ দেন পাপুল!
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালামকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সম্মেলনে পাপুলের বিরুদ্ধে খবরকে ‘ফেক নিউজ’ বলার পর থেকেই সমালোচকদের তোপের মুখে ছিলেন রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম। এরপর এমপি পাপুল গ্রেফতার হওয়ার থেকেই কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালামের সঙ্গে পাপুলের সখ্যতা নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ আসছিল কুয়েতে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের পক্ষ থেকে। অবশ্য এস এম আবুল কালাম সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং এক ভিডিও বার্তায় তার বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।
করোনাময় বিশ্ব : কেমন আছেন কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশিরা – (পর্ব ৩)
করোনাময় বিশ্ব : কেমন আছেন কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশিরা – (পর্ব ৩)১৫ জুলাই, বুধবার – কুয়েত সময় : সন্ধ্যা ৭.৩০ টা, বাংলাদেশ সময় : রাত ১০.৩০ টা সঞ্চলনায় : আ. হ জুবেদ, বিশেষ প্রতিনিধি-আকাশযাত্রা অতিথি :শরীফ মোহাম্মদ মিজান, প্রবাসী সাংবাদিক, কুয়েতমো. জালাল উদ্দিন, প্রবাসী সাংবাদিক, কুয়েতআল আমিন রানা, প্রবাসী সাংবাদিক, কুয়েতসাদেক রিপন, প্রবাসী সাংবাদিক, কুয়েত
Posted by AkashJatra on Wednesday, July 15, 2020