কুয়েতে করোনা রোধে কারফিউ আরও কঠোর হচ্ছে!

কুয়েতে করোনাভাইরাস রোধে জারি করা কারফিউ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে দেশটির মন্ত্রিসভা। কারফিউয়ের সময়সীমা বাড়ানো কিংবা বিকল্প কোন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিসভার সদস্যরা।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতকর্তমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গত ২২ মার্চ থেকে দেশব্যাপী বিকেল ৫ টা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টার কারফিউ বলবৎ করা হয়।

অন্যদিকে,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ বুলেটিন অনুসারে কুয়েত সোমবার সকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ১১ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। মোট আক্রান্তের মধ্যে তিন বাংলাদেশি রয়েছেন, যা রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বুলেটিনে নিশ্চিত করা হয়।

Travelion – Mobile

রবিবার (২৯ মার্চ) দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল-সালেহের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কারফিউ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের প্রস্তাব তোলা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী খালেদ আল-রউধন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. শেখ আহমদ আল-নাসের, তেলমন্ত্রী খালেদ আল-ফাদিল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. শেখ বাসিল আল-সাবাহ, নির্মাণমন্ত্রী ড. রানা আল-ফারিস এবং তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জাবরী আল-সিফ করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় করোনভাইরাস সংকটের বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। যাতে স্পষ্ট ওঠে আসে, কারফিউ কার্যকরে ত্রুটি ও সংক্ষিপ্ত সময়সীমার কারণে নাগরিক ও প্রবাসীরা শিথিল সময়ে জরুরী ​​প্রয়োজন না হওয়া সত্ত্বেও ঘর ছেড়ে বাইরে আসছেন। তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং কেনাকাটা করছে।

এই বাস্তবতায় সুপারিশ অনুসারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে বা অন্যান্য বিকল্পের সন্ধানের জন্য, যে ব্যবস্থা মানুষকে ঘর থাকতে বাধ্য করা হবে এবং জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি বের হতে পারবে না।

এ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিসংখ্যানে কুয়েতে গত রবিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৫ দিনের মধ্যে কারফিউ লঙ্ঘন করে আইন শৃংখলাবাহিনীর হাতে ১১৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে ৫১ জন কুয়েতি বাকি ৬৫ জন উপসাগরীয় দেশগুলোর নাগরিক এবং বিভিন্ন জাতীয়তার প্রবাসী ও বেদুইন রয়েছে।

নিরপত্তাবাহিনীর উধ্বৃতি দিয়ে দেশটির দৈনিক আল-কাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারফিউ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে এমন নাগরিক এবং উপসাগরীয় নাগরিকদের সংখ্যা ৭৩ জন, বিপরীতে প্রবাসী ৩৫ জন এবং বেদূইন ৭ জন।

পরিসংখ্যান এও দেখায় যে, কারফিউ লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ ৫৫ জন হাওল্লি প্রদেশ রয়েছে। এরপরে রাজধানীর ৩২ জন, আহমদী প্রদেশের ২১ জন, ফারওয়ানিয়া ১৩ জন, জহরা ১১ জন এবং মুবারক আল-কাবীর মাত্র একজন লঙ্ঘনকারী রয়েছেন। গত মঙ্গলবার কারফিউ লঙ্ঘনের সর্বোচ্চ হার ছিল। আটক ৪৫ জনের মধ্যে ৮ জন কুয়েতি এবং ৩৭ জন গাল্ফ নাগরিক ও প্রবাসী।

এ দিকে শনিবার কুয়েত পৌরসভার মহাপরিচালক আহমেদ আল-মানফৌহি কুয়েতের যে কোনও জায়গায় ক্যাফে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞা মার্কেট, শপিংমল, পেট্রাল পাম্প এবং মহাসড়কের রেস্ট স্টেশনগুললোর ক্যাফেগুলির প্রযোজ্য হবে। তবে, প্রতিদিন কারফিউ শিথিলকালীন শুধু সরবরাহ করার রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, জানাজা বিষয়ক মহাপরিচালক ডা. ফয়সাল আল-আউধী কবরস্থানে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে করোনা ছড়িয়ে যাওয়া রোধে মরদেহ দাফনের সময় কেবল মৃত ব্যক্তির আত্মীয়ই উপস্থিত থাকতে দেওয়া হবে। তা ছাড়া, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩ টার মধ্য সমাধিস্থল নির্ধারণ করে মরদেহ দ্রুত দাফন করতে হবে।

সোমবার দিনের শুরুতে, কুয়েতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. শেখ বাসেল আল-সাবাহ করোনভাইরাস থেকে এ পর্যন্ত ৭২ জন সুস্থ হয়েছেন বলে ঘোষণা দেন। এছাড়াও, ১৯৪ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী প্রয়োজনীয় চিকিত্সা গ্রহণ করছেন এবং অন্য ১৩ জন নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে রয়েছেন; যার মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশংখাজনক বলে মন্ত্রী জানান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!