কুয়েতে এমপি পাপুলের ১৩৮ কোটি টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

কুয়েতে মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের নিজের এবং কোম্পানির সকল ব্যাংক একাউন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দেশটির পাবলিক প্রসিকিউশন। এ লক্ষ্যে প্রসিকিউশন কুয়েতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আরব টাইমস জানায়, পাপুলের কোম্পানির আর্থিক স্থিতি প্রায় ৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার (বাংলাদেশি প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা), যার মধ্যে ৩ মিলিয়ন দিনার (বাংলাদেশি প্রায় প্রায় ৮৩ কােটি টাকা) সংস্থার মূলধন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত আছে।

প্রসিকিউশন অ্যাকাউন্টগুলি স্থগিত করার উদ্যোগ নিয়েছে যাতে সেখান থেকে টাকা ওঠাতে না পারে। পাপুলের একাউন্টগুলোর হিসাব সন্দেহজনকদেখা দেওয়ায় মামলার তদন্তের স্বার্থেই একাউন্টগুলো স্থগিত জরুরী হয়ে পড়ে।

Travelion – Mobile

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের কুয়েতে বার্ষিক আয় বা মুনাফা কত তা নিয়ে কৌতূহল কুয়েতের সংবাদমাধ্যমগুলোর। কুয়েতের দুই কর্মকর্তাকে ২১ লাখ কুয়েতি দিনার (প্রায় ৫৮ কোটি টাকা) ঘুষ দেওয়ার পরও পাপুলের বার্ষিক মুনাফা ছিল ২০ লাখ দিনার (প্রায় ৫৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা)। কুয়েতে পাপুলের অফিসের কর্মীরাই তদন্তকারীদের এ তথ্য জানিয়েছেন বলে আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মানবপাচার, মুদ্রাপাচার ও শ্রমিক নিপীড়নের অভিযোগে আগামী ৬ জুলাই এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ উত্থাপনের কথা রয়েছে। এর আগ পর্যন্ত পাপুলকে কারাগারেই থাকতে হবে। তাই খুব শিগগির তাঁর মুক্তির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলে কুয়েত থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে। অপরাধ প্রমাণ হলে পাপুলের পাঁচ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে। পাপুলের বিরুদ্ধে অন্তত ১১ জন বাংলাদেশি সাক্ষ্য দিয়েছেন।

পাপুলের অপকর্মের সহযোগী হিসেবে কুয়েতের জ্যেষ্ঠ তিন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক আন্ডার সেক্রেটারিকে গত ১৬ জুন তিন মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। সেদিনই বরখাস্ত হওয়া তিনজনকে আটক করা হয়েছে। পাপুল তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছেন, ওই কর্মকর্তা ঘুষের বিনিময়ে তাকে ব্যবসায়িক কাজে সুবিধা পেতে সাহায্য করেছেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের সূত্রে আরবী দৈনিক আল কাবাস ও আরব টাইমসের খবরে বলা হচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত একজন কর্ণেল, দুইজন সরকারের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের পরিচালক ও এক নারী ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রথম তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা কাজী পাপুলের দেওয়া ঘুষ পদস্থ একজন কর্মকর্তাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন। আর ওই পদস্থ কর্মকর্তা ঘুষ নেওয়ার মাধ্যমে পাপুলেরকে ভিসা বাণিজ্যে সহায়তা করতেন। কুয়েতের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক নানা রকম সুবিধার বিনিময়ে বাংলাদেশের সাংসদকে সহায়তা করতেন।

কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, ওই চার ব্যক্তি কাজী পাপুলর কাছ থেকে নানা রকম সুবিধা নিয়েছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাংসদের মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে।

অন্যদিকে পাপুলকে জিজ্ঞাসাবাদে নাম ওঠে আসায় কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের িএকজন পদস্থ কর্মকর্তা পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় । কিন্তু দেশটির মন্ত্রীসভার একজন সদস্যে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে স্বপদে বহাল থাকতে হবে বলে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস পাপুলের বিষয়ে জানতে চেয়ে কুয়েত সরকারকে চিঠি দিলেও কোনো জবাব আসেনি বলে জানা গেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!