কুয়েতে আড়াই লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়েছে

একেবারে নিচু পর্যায়ের শ্রমিকরা অনেকটা টাইম বোমার মত। যখন তখন তাদের চাকরি যেন বোমার মত উড়ে যেতে পারে। কুয়েতেও চলমান সংকটে এই সত্য আরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়ায় আর শ্রমবাজারের কার্যক্রম সীমিত করতে সরকারি নানা সিদ্ধান্তের কারণে অনেক স্বল্প মজুরিভোগী শ্রমিক হারিয়েছে তাদের রুটি রুজির উপায়।

কুয়েতের আল কাবাস ডেইলি জানায় এ পর্যন্ত চাকরি হারানো প্রবাস শ্রমিকের সংখ্যা আড়াই লাখেরও বেশি।

Travelion – Mobile

পত্রিকাটি জানিয়েছে, প্রতিদিন প্রায় হাজার সংখ্যাক স্বল্প মজুরির শ্রমিক ছাটাই করা হচ্ছে যাদের অধিকাংশেরই বেতন খুবই কম। অর্থাৎ তারা দারিদ্রসীমার নীচে রয়েছে এবং তাদের দৈনন্দিন খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ইতিমধ্যে রেসিডেন্সি আইন অমান্য করে বেকার হওয়া ১ লাখ ৬৭ হাজার শ্রমিকের সাথে যোগ হয়ে দেশটিতে প্রবাসি বেকারত্বের আকারকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। গত কয়েক মাস ধরে প্রায় দেড় লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক কুয়েত ছেড়েছে।

কূয়েত টাইমস জানিয়েছে, চলামান করোনা সঙ্কট জাতীয় অর্থনীতির উপর ব্যাপক নেতিবাচক ছায়া ফেলেছে এবং অর্থনীতিতে বিশাল বোঝা তৈরি করেছে। এই অবস্থা যেহেতু এই পুরো বছরজুড়েই থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে সেহেতু অর্থনীতিতে অচলাবস্থা আরো বাড়বে, ফলে কয়েকশো কোম্পানি বন্ধ হবে, চাকরি হারাবে আরো হাজার হাজার শ্রমিক।

কুয়েতে প্রবাসীদের করােনাভাইরাস পরীক্ষা
কুয়েতে প্রবাসীদের করােনাভাইরাস পরীক্ষা

ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে বহু সেলুন ব্যবসা, পোশাক ও খুচরা দোকান, গাড়ির গ্যারাজ ও খুচরা যন্ত্রাংশের দোকান, ক্যাফে, বিনোদন সেবা, ব্যক্তিগত সেবা, পাইকারি বাণিজ্য, পরিবহন ও স্টোরেজ ব্যবসা। এই সংকটে স্বল্প আয়ের শ্রম ও বেসরকারি খাত এমনভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে তা কেউ এভাবে কল্পনাও করেনি।

এই সময় মোট ১৪ ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনিতেই অনেক শ্রমিককে পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগের বাইরে গিয়ে কাজ করার কারণে অনেক আইনগত জটিলতায় পড়তে হয়েছে। আর এখন এই কর্মীদের একটি বড় অংশ বেকার হয়ে পড়েছে যখন করোনা সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়েছে।

এই অবস্থায় নানা প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এসব শ্রমিকেরা বাঁচবেন কী ভাবে? কী ভাবে তাঁদের পরিবারের অভাব মেটানোর ব্যবস্থা করা হবে? এই সঙ্কট শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা জীবন চালাবেন কীভাবে? আর যেভাবে এসব শ্রমিকের প্রতি বিদ্বেষ আর বর্ণবাদী আচরণ বেড়েছে তাতে পরিস্থিতি আরো নাজুক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এইসব পরিস্থিতি অনেক শ্রমিককে দরিদ্র সেবার নিচে নিয়ে যাবে যা সমাজে তৈরি করবে অনিরাপত্তা আর অনিশ্চয়তা।

সাধারণ ক্ষমতায় আওতায় স্বদেশ ফেরার প্রক্রিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা
সাধারণ ক্ষমতায় আওতায় স্বদেশ ফেরার প্রক্রিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা

এনিয়ে কুয়েতের একটি দৈনিক করোনার আগে ও পরের পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু নতুন বিষয় তুলে এনেছে। এরমধ্যে হাজার হাজার প্রবাসীদের ভিসা ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ার পাশপাশি আরো নানা বিষয় উঠে এসেছে। যদিও কুয়েতি সরকার সব সময় ঘোষণা দিয়ে আসছে যে তারা মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং নিজেদের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক কাঠামো সংশোধনের চেষ্টা করছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ভিসা ব্যবসায়ীর কারণে কুয়েতের সমাজ কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আল কাবাস ডেইলি সূত্রে জানা গেছে, ভিসা ব্যবসায়ীরা অবৈধ ও নামকাওয়াস্তে কাজ দিয়ে শ্রমিকদের থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে প্রায় আড়াই লাখ কর্মী তারা এভাবে এনে অবৈধভাবে তাদের কোন মতে কাজে ঢুকিয়েছে, যার মাধ্যমে তারা প্রায় ৩৭৬ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার আয় করেছে। এছাড়াও তারা ভিসা নবায়ন ও হস্তান্তরের জন্যেও আরো লক্ষাধিক কুয়েতি ডিনার হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!