কুয়েতি কর্মকর্তাদের ঘুষের কথা স্বীকার এমপি পাপুলের, একজন বরখাস্ত
কুয়েতে মানব ও অর্থ পাচারের মামলায় গ্রেফতার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল কুয়েতি সরকারি কর্মকর্তা ও বন্ধুদের ঘুষ হিসেবে নগদ টাকা ও উপহার দেওয়ার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।
অন্যদিকে পাপুলে সাথে যোগসুত্র ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দেশটির সমাজ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে তিন মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে ।
এমপি কাজী পাপুলের অর্থ ও মানব পাচার মামলায় তদন্ত অব্যাহত রেখেছে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউসন। তার ব্যাপারে আরো তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে আটক রাখার আদেশ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান দেয়ার নামে প্রতারণা, আকামা আইন লঙ্ঘন, ঘুষ, মানব পাচার, অর্থ পাচার এবং জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরব টাইমস জানিয়েছে, কেবল ঘুষের অভিযোগ ছাড়া বাংলাদেশি সাংসদ কাজী পাপুল তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তিনি স্বীকার করেছেন যে, উপহার হিসেবে তিনি তার বন্ধুদের সাহায্য করেছেন যার বিনিময়ে তারা তাকে কোম্পানির তার লেনদেন সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছে।
সূত্র বলেছে যে, তদন্তে বেরিয়ে আসা ৩ জনকে তলব করবে পাবলিক প্রসিকিউশন । পাপুলের জবানবন্দি মতে, এই তিনজন তার কাছ থেকে উপহার গ্রহণ করত। এরমধ্যে একজন কুয়েতি বিশাল একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, দ্বিতীয়জন একটি কারখানা পরিচালনা করে এবং তৃতীয়জন একটি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তদন্ত চলাকালে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে সরকারি এই কর্মকর্তাকে ৩ মাসের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে এবং তার বেতনের ৫০ শতাংশ কেটে নেয়া হয়েছে।
সূত্র আরব টাইমসকে আরো জানিয়েছে, যে প্রসিকিউশন অভিযুক্ত সাংসদের মালিকানধীন একটি ফার্মের ২০ জন কর্মচারীকে তলব করেছে, যার মধ্যে একজন হিসাবরক্ষকও রয়েছে। তাদের কাছ থেকে কোম্পানির শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ ও সংশ্লিষ্ট নানা ব্যাপারে বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে যে অভিযুক্তের আরও তিনটি কোম্পানি রয়েছে।
সূত্রটি আরো বলেছে যে, প্রসিকিউশন এই ২০ জন বাদে এখনো মামলার সাথে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের তলব করা বাকি আছে। তবে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে অভিযুক্ত সাংসদের জবানবন্দিতে এখনো নির্দিষ্টভাবে কেবল ৩ জনের নাম উঠে এসেছে আর প্রসিকিউটর তাদের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তদন্তের জন্য তলব করবে।
আরব টাইমস আর বলছে, পাপুল তদন্তের সময় প্রসিকিউসন জানিযেছেন তিনি ১৯৮৪ সালে কুয়েতে এসেছিলেন এবং সবসময় দেশের আইনকে সম্মান করেছেন। বর্তমানে চারটি ক্লিনিং কোম্পানি চালান এবং ৩৪টি সরকারী প্রকল্পে কাজের চুক্তি আছে যেখানে তিনি ৯,০০০ কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন।
বিবাদী আরো বলেন যে, যখন কুয়েতে করোনা মহামারির কারণে স্থানীয় কোম্পানিগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে অক্ষম ছিল, তখন তিনি মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে তার কর্মীদের বেতন পরিশোধ করেছেন এবং ৪২টি ভবন ভাড়া করে তাদের বাসস্থানের সুবিধা প্রদান করেছেন।
কাজী পাপুল ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কয়েকজন কুয়েতিদের সাথে বন্ধুত্ব করেছেন, কিন্তু কোন সন্দেহজনক কার্যকলাপে তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেননি।
সম্প্রতি কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন পাপুলের কোম্পানিতে কাজ করা কিছু শ্রমিক। তারা বাংলাদেশের প্রথম সারির ইংরেজিদৈনিক ডেইলি স্টারকে জানায়, কুয়েত ছাড়ার আগে তাদের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। অথচ তারা এখন পর্যন্ত মোটে ১৫০ কুয়েতি দিনার পেয়েছে।
এদের মধ্যে একজন আবদেল আলিম জব্বার জানান, কুয়েতে আসার আগে তাকে বলা হয়েছিল যে তিনি দিনে আট ঘন্টা কাজ করবেন এবং তার বেতন হবে প্রতি মাসে ১৪০ দিনার, কিন্তু যখন তিনি আসেন, তিনি আবিষ্কার করেন যে তাকে ১৬ ঘন্টার শিফটে কাজ করতে হবে এবং মাসিক বেতন ১০০ দিনার হবে। তিনি বলেন, দুজন ব্যক্তি, যাদের মধ্যে একজন শুধুমাত্র আমান এবং অন্যজন মাহবুব হিসেবে চিহ্নিত, তারা কোম্পানির হয়ে রয়্যালটির টাকা সংগ্রহের সাথে জড়িত ছিল।