করোনা সতর্কতায় আইসোলেশনে থাকা ওমানপ্রবাসীর বার্তা

নৌশাদ। ওমানপ্রবাসী ভারতীয় নাগরিক। সঙ্গীদের একজন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বর্তমানে তিনি আইসোলেশনে ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। মাসকাট ডেইলিতে প্রকাশিত প্রবন্ধে তিনি আইসোলেশনে থাকার অভিজ্ঞতা এবং সে সঙ্গে করোনা নিয়ে প্রবাসীদের জন্য কিছু জরুরী পরামর্শ রেখেছেন। তা ওমানপ্রবাসীদের জন্য তুলে ধরা হল।

“আমি ওমানে কর্মরত একজন ভারতীয়। বর্তমানে আমি আইসোলেশনে আছি। তবে প্রিয় বন্ধু ও স্বজন, দয়া করে আমার জন্য চিন্তিত হবেন না। আমি এখন নিরাপদ ও সুস্থ আছি। তবে এখানে আমার আইসোলেশন জীবন নিয়ে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে যা আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।

করোনাভাইরাসের খবর যখন ছড়ালো তখন তা সারা ওমানে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরাও যারা এখানে কাজ করি তারা বিষয়টি নিয়ে জানবার পর ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পর্যাপ্ত সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কিন্তু আমাদের হতাশ হতে হল যখন আমরা জানতে পারলাম যে আমাদের কাছেরই একটি ফ্ল্যাটে একজন ব্যক্তির করোভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে তখন আমরা কিছুটা ভীত হয়ে পড়লাম।

আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা নিজেদেরও করোনা পরীক্ষা করাবো। যদিও আমরা আক্রান্ত ওই ব্যক্তির কোনও সংস্পর্শে আসিনি এবং আমাদের মধ্যে কোন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়নি তবুও আমাদের মধ্যে অনেকেই নিজ তাগিদে পরীক্ষা করাতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গেলাম। আমাদের মধ্যে দশজন পরীক্ষা করল এবং অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের একজনের পজিটিভ ফলাফল আসে। ফলত আমাদের বাকীদের সাথে সাথেই আইসোলেশনে চলে যেতে হয়।

Travelion – Mobile

বর্তমানে আমি এক সপ্তাহ ধরে আইসোলেশন ওয়ার্ডে আছি। তবে আশার ব্যাপার হল এখানে সবকিছুই খুব ভালো লাগছে। ঠিক সময়ে খাবার ও ওষুধ পাচ্ছি, আমাদের দেখভালের জন্য নিয়মতি লোকজন এসে খোঁজজখবর নিচ্ছেন। যত্ন আর সেবার কমতি নেই। সত্যি বলতে কি আমাদের বাড়ির তুলনায় এখানে অনেক নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি।

কথা আসতে পারে আমার তাহলে এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করার উদ্দেশ্য কি। আসলে বিষয়টা হল আমার এখানে থেকে উপলদ্ধি হয়েছে যে, এখানেই পৃথিবীর শেষ নয়। সবকিছু এখানেই থেমে যাবে না। এই অসুস্থতা এই সংকট কিছু সময়ের জন্য থাকবে তবে সকলের যৌথ প্রয়াসে আমাদের মুক্তি মিলবে। তাই সকলের সহযোগিতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমাদের অনেকেই মনে করেছেন যে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু করোনাভাইরাস তাদের এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। তাদের প্রতি আমার বার্তা হল, সতর্ক ও সাবধান না হলে যে কোনও সময়, যে কাউকে এই ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে।

আমরা যারা আইসোলেশনে আছি কিংবা যারা ঘরে আছি আমাদের কারও শরীরে যেন এর সংক্রমণ ঘটতে না পারে সেজন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে সরকার, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ। আমাদের উচিত তাদের আন্তরিকতা ও কঠোর কাজকে সম্মান জানানো এবং তাদেকে কৃতজ্ঞতা জানানো।

কোনও লক্ষণ থাকলে দয়া করে তা লুকিয়ে রাখবেন না। প্রয়োজনে নিজে পরীক্ষা করে নিন। আর পজিটিভ আসলেও পজেটিভ থাকবেন। দুঃশ্চিন্তা করলে কোন সমাধান আসবে না। চিকিৎসা নিন। ভয়ের কিছু নেই। বেশিরভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে ফিরছেন।

মনে রাখবেন এই রোগটি ছোঁয়াচে হলেও সঠিক সময়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা করা যাবে। অনেকেই মনে করছেন এই অসুস্থতা হওয়া মানেই চাকরি হারানো। এমন জিনিসের কান দিবেন না।

এই দেশ, এই দেশের শাসক, সরকার এবং দায়িত্বশীলদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। তাঁদের জন্য আপনারা প্রার্থনা করুন। আশা করছি সবাই আবার খুব শীঘ্রই সুস্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারব।”

আমি বাড়ি আছি, তুমি বাড়ি থেকাে : চিরকুট

আমি বাড়ি আছি, তুমি বাড়ি থেকােজয় আসবে আমাদের, বিশ্বাস বুকে রেখোইউএনডিপির প্রযোজনায় চিরকুটের করোনা সচেতনতা সংগীত

Posted by AkashJatra on Monday, April 6, 2020

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!