করোনা রোধে জর্ডানে কারফিউ জারি

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জর্ডানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।

আগামীকাল শনিবার (২১ মার্চ) সকাল ৭ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের রাজধানী আম্মানসহ সারাদেশে কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার (২০ মার্চ) এক প্রেস ব্রিফিংয়ের দেশটির গণমাধ্যম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আমজাদ আদায়েলে প্রতিরক্ষা আদেশের ২ নম্বর ঘোষণা আলোকে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

Travelion – Mobile

তিনি বলেন, কারফিউ চলাকালীন সারাদেশের দোকানপাঠসহ সব কিছু বন্ধ থাকবে। জনগণের স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ থাকবে।

তবে,মানুষের জরুরী চাহিদা পাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল করার ব্যাপারে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) সরকার ঘোষণা করবে।

“এই আদেশের বিধান (কারফিউ ভঙ্গকারী) এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জারি করা আইন অমান্যকারী যে কোনও ব্যক্তিকে এক বছরের বেশি সময়কালের জন্য অবিলম্বে কারাদণ্ডের জন্য দায়ী করা হবে,” অ্যাডাইলি নিশ্চিত করেছেন।

জরুরী চিকিৎসার ক্ষেত্রে নাগরিকদের বিধি অনুসারে তাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জননিরাপত্তা অধিদফতর (পিএসডি) বা সিভিল ডিফেন্স ডিরেক্টরেটকে (সিডিডি) জানাতে করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দ্বারা অনুমোদিত লোকেরা তাদের কাজের প্রকৃতির ভিত্তিতে কারফিউয়ের আওতা থেকে বাদ থাকবেন।

কারফিউ জারি ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় ট্র্যাফিক বিভাগ (সিটিডি) হলুদ ট্যাক্সি,এবং রাইড হেলিং অ্যাপস চালকদের অবিলম্বে কাজ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে, অন্যথায় লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তাদের গাড়ি জব্দ করা হবে।

এদিকে জননিরাপত্তা অধিদফতর (পিএসডি) ঘোষণা করেছেন যে কাল সকালে কারফিউ কার্যকর হওয়ার পরে পুরো দেশজুড়ে সাইরেনগুলি বন্ধ হয়ে যাবে।

কারফিউ ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে রাজধানী আম্মানসহ সারাদেশে মানুষ খাদ্য সামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনতে বাজার ও মলে ভিড় জমায়।

দুদিন আগে জর্ডান সরকার করোনাভাইরাস বিস্তার রুখতে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। ১৭ মার্চ জর্ডানের বাাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ রাজকীয় ডিক্রি জারি করে এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যে কোন ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী ওমর রাজ্জাজকে ক্ষমতা প্রদান করেন। এর আগে বাদশাহ একটি জাতীয় প্রতিরক্ষা আইন অনুমোদন করেছেন যা করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সহায়তায জরুরি অবস্থা জারি করার জন্য সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়।

১৮ মার্চ জারি করা হয় জরুরী অবস্থা। সরকারের নির্দেশে দেশটির সশস্ত্রবাহিনী বাহিনী -আরব আর্মি (জেএএফ) জরুরি অবস্থা কার্যকর করতে মাঠে নামে। রাজধানী আম্মানের চারপাশে এবং প্রদেশগুলির মধ্যে মহাসড়কে সেনা মোতায়েন করা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে সকল প্রদেশের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয় সশস্ত্রবাহিনী ।

দেশের সকল স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ১০ জনের বা তারও বেশি লোকের ভিড় নিষিদ্ধ করা হয়, স্বাস্থ্য এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা ব্যতীত সরকারী-বেসরকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। নাগরিককে তাদের বাড়িতে থাকতে এবং প্রদেশগুলির মধ্যে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। খাবার ও ওষুধের দেকান বাদে শপিংমলের সকল দোকান বন্ধ করা হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, জর্ডানে এ পর্যন্ত ৬৯ টি করােনা আক্রান্ত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ জন জর্ডানি, ৬ জন ফরাসি, ৪ জন ইরাকি, ৩ জন ব্রিটিশ, ২ জন লেবানিজ, ২ জন আর্জেন্টিনার এবং ২ জন ফিলিপাইনের নাগরিক আছেন। সরকার রাজধানী আম্মানসহ বিভিন্ন প্রদেশে ৩৪ টিরও বেশি হোটেলকে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র রূপান্তরিত করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জর্ডানের নাগরিকরা করোনভাইরাসকে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের না নেওয়ায় এবং সরকারকে সহযোগিতা করছে না বলে জরুরি অবস্থা অবলম্বন করে কারফিউ জারি ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!