করোনা টিকা : যে ঝুঁকি নিয়ে সফল সেরাম
করোনার এই কালে বিশ্বের কাছে এখন অন্যতম পরিচিত নাম সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই)। এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানি সেরাম, করোনার এই সময়ে ব্যাপক ঝুঁকি নিয়ে তারা নিজেদের নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্যই উঠে এসেছে।
সেরামের প্রধান নির্বাহী আদর পুনেওয়ালা বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা বিরাট ঝুঁকি নিয়েছি। ২০২০ সালে এমন কিছু টিকার জন্য বিনিয়োগ করেছি, যেগুলো তখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পায়নি। তবে একদম চোখ বন্ধ করে ঝুঁকি নিইনি আমরা। কারণ, ম্যালেরিয়ার টিকা নিয়ে আগে একসঙ্গে কাজ করায় অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের সক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল।
ভারতের পুনে শহরে অবস্থিত ভ্যাকসিন ও ইমিউনোবায়োলজিক ঔষধ প্রস্তুতকারক সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া ১৯৬৬ সালে ডা. সাইরাস পুনাওয়ালা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতিবছর ১৫০ কোটি ডোজ বিভিন্ন ধরনের টিকা উৎপাদন করে কোম্পানিটি ।ডোজ উৎপাদনের সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম। এর উৎপাদিত টিকার মাঝে যক্ষ্মার জন্য টিউবারভ্যাক টিকা(বিসিজি), পোলিও এর জন্য পোলিওভ্যাক টিকাসহ নানা টিকা রয়েছে।
২০০৯-এ, সেরাম একটি ইন্ট্রেনসাল সোয়াইন ফ্লু ভ্যাকসিন তৈরি করছিল। ২০১৬ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল স্কুল ইউনিভার্সিটি এর ম্যাস বায়োলজিক্সের সহায়তায়, এটি একটি দ্রুত-কার্যক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টি- রেবিজ এজেন্ট, রেবিজ হিউম্যান মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি (আরএমএবি) আবিষ্কার করেছে, যা রেবিশিল্ড নামে পরিচিত। ২০১২ সালে কোম্পানিটি নেদারল্যান্ডের বিথোভেন বায়লোজিক্যালকে কেনার মাধ্যমে প্রথম আন্তর্জাতিক অধিগ্রহণ শুরু করে।
বর্তমানে এটি ওষুধ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার লাইসেন্সের অধীনে কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করছে। সেরাম ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। তাই আদর পুনেওয়ালা এবং তাঁর বিজ্ঞানীরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে করোনার টিকা তৈরির জন্য শুরুতে অর্থায়নের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়ে সেরাম। করোনা টিকার জন্য সংস্থাটি প্রায় ২৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে। বাকিটা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটসসহ বেশ কিছু দেশ থেকে অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করে তারা। একাধিক কোভিড ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ২০২০ সালের মে মাসের মধ্যেই ৮০ কোটি ডলার সুরক্ষিত করেছিল সেরাম।
২০২০ সালের এপ্রিলেই আদর পুনেওয়ালা গুছিয়ে ফেলেন তাঁর কী করতে হবে। তিনি বলেন, আগে থেকেই ৬০ কোটি টিকার ডোজের ভিয়ালস সংগ্রহ করেন তিনি। সেগুলো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গুদামজাত করে রাখা হয়।
আদর পুনেওয়ালা বলেন, ‘এ বছরের জানুয়ারির মধ্যে আমরা ৭ থেকে ৮ কোটি ডোজ তৈরিতে সক্ষম হয়েছি তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো আমরা ঝুঁকি নিয়ে আগস্টেই উৎপাদন শুরু করেছিলাম। আমি আশা করেছিলাম আরও অনেক কোম্পানিই এই ঝুঁকি নেবে, কারণ সারা বিশ্বে আরও অনেক অনেক বেশি ডোজ টিকার প্রয়োজন।’
উৎপাদনের দেরির জন্য পুনেওয়ালা বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা জটিলতার সমালোচনা করেন। তিনি মনে করেন, টিকার জন্য যুক্তরাজ্যের মেডিসিন ও হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ), ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) ও ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (এফডিএ) বড় বড় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি মানে সম্মত হতে পারত।
পুনেওয়ালা মনে করেন, টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের দ্বিধার অন্যতম কারণ নেতিবাচক প্রচার। সেলিব্রিটি বা বিশেষজ্ঞ নন এমন অনেক মানুষ বলেছেন যে ভ্যাকসিন নিরাপদ নয়, যা মানুষের মধ্যে দ্বিধা তৈরি করেছে। পুনেওয়ালা বলেন, সেলিব্রিটি বা বিশেষজ্ঞ নন তবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে প্রভাব ফেলেন এমন মানুষদের এ ক্ষেত্রে অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাদের উচিত কোনো মন্তব্য করার আগে বিষয়টি সম্পর্কে জেনে করা। তথ্য পড়ার অনুরোধ করি তাদের।