করোনা, এই বৃদ্ধের কোনো ক্ষতি করো না : একজন ডিসির মিনতি

প্রবীণ ব্যক্তিদের কানে ধরিয়ে এসি ল্যান্ডের শাস্তি দেওয়া ঘটনায় দেশ যখন তোলপাড়, তখন আবার এক অসহায় বৃদ্ধের প্রতি একজন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবেগ দেখে আপ্লুত দেশবাসী। আর এই ঘটনা রাজশাহীর তানোর উপজেলায়।

রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকলেও পেটের টানে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা কাগজ কুড়াচ্ছিলেন ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ। তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) হামিদুল হক। হঠাৎ ওই বৃদ্ধের দিকে এগিয়ে যান ডিসি। বিষয়টি দেখে ভয় পেয়ে যান বৃদ্ধ।

ভয় পেয়ে হাতজোড় করে ডিসিকে বৃদ্ধ বলেন, ‘বাবা আমার যদি কোনও ভুল হয়, মাফ করে দেন, আমি আর বাজারে আসব না।’

Travelion – Mobile

বৃদ্ধের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে আবেগাপ্লুত হন ডিসি ও তার সাথে থাকা সবাই। তাৎক্ষণিকভাবে ওই বৃদ্ধকে সহায়তা করেন ডিসি। সেখান থেকে ফিরে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ডিসি হামিদুল হক।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হকের ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো- জীবিকার প্রয়োজন ও করোনা:

করোনা পরিস্থিতিতে লোকজনের বাড়িতে অবস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিদর্শনে যাই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মেয়র তানোর পৌরসভা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) তানোর বাজার পরিদর্শন, অকারণে যেসব লোকজন বাজারে ছিলেন তাদের বাজার থেকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপজেলার দিকে যাওয়া।

এ সময় হঠাৎ ষাটোর্ধ একজন বৃদ্ধ মানুষকে রাস্তার ধারে কিছু পুরনো, ছেঁড়া কাগজ নড়াচড়া করতে দেখে কাছে যাই। আমরা কাছে যেতেই এবং সাথে পুলিশ দেখে তিনি কিছুটা ভয় পেয়ে হাত জোর করে দাড়িয়ে বলেন, ‘বাবা আমার যদি কোনও ভুল হয়, মাফ করে দাও, আমি আর বাজারে আসবো না।’

আমি সাথে সাথে বৃদ্ধকে বললাম কোনও ভুল না। ভীষণ মায়া লাগলো বৃদ্ধকে দেখে। এ বয়সে তার ঘরে থাকার কথা। নাতিপুতিদের সাথে খেলা করার কথা। কিন্তু হায় দরিদ্র্যতা তুমি তাকে এই চৈত্রের প্রখর রৌদ্রে ক’টি টাকার জন্য, সামান্য চাল কেনার অর্থের জন্য কিছু ছেঁড়া কাগজ কুড়াতে বাধ্য করেছো। তার উপর বিশ্ব কাঁপানো করোনা।

কিন্তু এই বৃদ্ধের দরিদ্র্যতাকে করোনা পরাজিত করতে পারেনি। তাকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি ঘরের কোণে। বৃদ্ধকে সামান্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে বললাম, আপনি কিছু চাল ডাল কিনে বাড়ি চলে যান। কিছুদিন আর বাজারে আাসবেন না। তিনি বললেন, বাবা আর আসবো না। মনটি খারাপ হয়ে গেলো। জানি না তার বাড়িটি কেমন, তার বাড়িতে কে কে আছেন? উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিতে বললাম।

হায় করোনা, তুমি সকলকে একটু করুণা করো। অন্তত নাম না জানা এই বৃদ্ধের কোনো ক্ষতি করো না। এই মিনতি করি। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ভালো রাখুন। সারা বিশ্ব হোক করোনা ও করুণা মুক্ত। ভালো থেকো বৃদ্ধ বাবা। আমি তোমার খবর রাখবো নিশ্চয়।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!