করোনায় আক্রান্ত বিশ্ব এভিয়েশন, লোকসান গুনবে ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার!

কোভিড ১৯ ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় ২০২০ সালে বিমান সংস্থাগুলোকে ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের লোকসান গুণতে হতে পারে। এভিয়েশন খাতের আন্তর্জাতিক জোট ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) সম্প্রতি এমনই এক আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

এর আগে গেল ২০ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটি এভিয়েশন খাতের লোকসান নিয়ে একটি পূর্বাভাস দিয়েছিল যেটিতে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল মোটে ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। তবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তাদের পূর্বাভাস প্রায় চার গুণ বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছে যা বিশ্ব এভিয়েশনের জন্য আরো দুঃসংবাদ বয়ে নিয়ে এসেছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই প্রথমে চীনে ও পরে সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিমান সংস্থায় যাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকে। ফলে কমতে থাকে ফ্লাইটের সংখ্যা, পিছিয়ে যায় যাত্রার তারিখ।

Travelion – Mobile

বর্তমানে পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক হওয়ায় পুরো বছরের ক্ষতির পরিমাণ যাচাইয়ে আয়াটা (আইএটিএ) দুই ধরনের দৃশ্যপটকে মাথায় রেখে এগিয়েছে। তারা জানায়, করোনা ছড়িয়ে পড়ার ধরণ ও বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলতি বছর ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার থেকে ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতি গুনতে হতে পারে।

বিমানবন্দরে অলস পড়ে  থাকা উড়ােজাহাজের সারি
বিমানবন্দরে অলস পড়ে থাকা উড়ােজাহাজের সারি

এক্ষেত্রে প্রথমে ধরা হয়েছে এভিয়েশনের এমন সব বাজারে যেগুলোতে বর্তমানে ১০০ বা তার বেশি মানুষ করোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে । এই ধরনের বাজারগুলোতে শিগগিরি একটি পরিবর্তন আসবে এবং অনেকেই সুস্থতার দিকে ফিরে যাবে। অর্থাৎ এই বাজারগুলো আবারও ঘুরে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ভ্রমণের চাহিদা তৈরি করবে।

সাময়িকভাবে ধকলে পড়া এসব বাজার বিশ্বব্যাপী ১১% রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়তে পারে যার পরিমাণ হবে আনুমানিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। এতে চীনসহ এশিয়ার সাথে সম্পর্কিত বাজারগুলোতেই মোট লোকসানের পরিমাণ হবে ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

লোকসান যাচাইয়ে আরেক ধরনের দৃশ্যপট চিন্তা করেছে আয়াটা। এই দৃশ্যপটে এমন সব বাজারকে ধরা হয়েছে যেখানে ভীতি নতুন করে দানা বাঁধছে। এখানে যেসব দেশ বর্তমানে ১০ বা তার বেশি মানুষ কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে তাদের এভিয়েশন বাজারকে ধরা হয়েছে যেখানে ভ্রমণের চাহিদা সামনে আরো কমে যাবে।

ইউরোপের আকাশে উড়ছে ভুতুড়ে উড়োজাহাজ!
ইউরোপের আকাশে উড়ছে ভুতুড়ে উড়োজাহাজ!

এর ফলাফলে বিশ্বব্যাপী তাদের রাজস্বের ১৯% লোকসান দিতে হতে পারে যা পরিমাণে ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বা ১১৩ বিলিয়ন ডলার। এই ক্ষতি ২০০৮ সালের বিশ্ব আর্থিক মন্দার সময়কার এভিয়েশন খাতের ক্ষতির কাছাকাছি।

আইটিএ আরো জানায়, এভিয়েশন খাতের এই ক্ষতিতে তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এতে উড়োজাহাজের জ্বালানি রাজস্বেও ২৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি গুণতে হতে পারে বলে ধারণা তাদের।

এদিকে বিমান সংস্থাগুলোর এমন কঠিন সময়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে নানা ধরনের সহায়তা ও প্রনোদনার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আএইটিএ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাগুলোর সাথে সাথে লাভজনক অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলোর কার্যক্রমকেও পুনরায় চাঙ্গা করতে সরকারি সাহায্য সহায়তার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন আয়াটার কর্মকর্তারা।

করোনাভাইরাসের কারণে দৈনিক ২০ হাজার যাত্রী কমেছে সিঙ্গাপুরে
করোনাভাইরাসের কারণে দৈনিক ২০ হাজার যাত্রী কমেছে সিঙ্গাপুরে

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে আইএটিএ-র ডিরেক্টর জেনারেল ও সিইও অ্যালেক্সান্দার ডি জুনিয়াক বলেন,”এয়ারলাইন্সগুলো নিজেদের কার্যক্রমকে চালিয়ে নেওয়ার কঠিন চেষ্টায় রয়েছে যা বিশ্বের অর্থনীতিগুলোকে একে অপরের সাথে যুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখছে। এমন চ্যালেঞ্জিং সময়ে সরকারের উচিত এদের ট্যাক্স মওকুফ কিংবা স্লট বরাদ্দে কোন ধরনের চার্জ না নেওয়ার মত প্রনোদনা দেয়া।

এর আগে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের নেতৃত্ব দেয়া এই সংস্থাটি সাময়িকভাবে বিমানবন্দরের স্লট বিধিমালা স্থগিতের আহবান জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিল।

আয়াটার এই পূর্বাভাস ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলেও নতুন করে অনেক দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে এর যথার্থতা নিয়ে। কারণ কোভিড ১৯ চীনে সংক্রমিত হওয়ার মাত্রা কমে গেলেও, নতুন করে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে। এদের মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে কথা ধরা যায় যেগুলো আয়াটার বাজার যাচাইয়ে ধরা হয়নি। এখন যেহেতু ১০ জনের বেশি আক্রান্ত দেশের তালিকা আরো দীর্ঘ হচ্ছে সেহেতু পরবর্তী দুই সপ্তাহে লোকসানের পরিমাণ আবার কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!