করোনাভাইরাস: বিশ্বজুড়ে মাস্ক সংকট, রপ্তানি নিষিদ্ধ করল ভারত

ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে মরণঘাতী করোনাভাইরাস। চীনের বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। ২০টি দেশের শতাধিক মানুষের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

বিশ্ববাসীর জন্য নতুন আতঙ্ক এ ভাইরাসের এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। ফলে, মাস্ক পরে সংক্রামক ঠেকােনার চেষ্টা করছেন সারাবিশ্বের মানুষ।

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাপক হারে বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিশ্বজুড়ে মাস্ক সংকট তৈরি হয়েছে। ফার্মেসিগুলোতে মাস্ক কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসছেন অনেকে। সংকটটা বেশি দেখা দিয়েছে ১৫০ কোটি মানুষের দেশ চীনে। তবে অন্য দেশগুলোতে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংকট।

Travelion – Mobile

গাল্ফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পাশাপাশি ইতালি, কানাডা, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের অনেক ফার্মেসি সব মাস্ক বিক্রি হয়ে যাওয়ায় ‘স্টক আউট’বা সোল্ড আউট নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছে।

অনেক ফার্মেসি সব মাস্ক বিক্রি হয়ে যাওয়ায় ‘স্টক আউট’বা সোল্ড আউট নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছে
অনেক ফার্মেসি সব মাস্ক বিক্রি হয়ে যাওয়ায় ‘স্টক আউট’বা সোল্ড আউট নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছে

আমাজনসহ বিভিন্ন অনলাইন শপিং সাইটগুলোতেও মিলছে না মাস্ক। যাদের কাছে মাস্ক রয়েছে তারা এই সুযোগে বাড়তি দাম হাঁকাচ্ছেন। কেউ কেউ স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ থেকে পাঁচগুণ দাম বাড়িয়েছেন বলেও জানা গেছে।

এদিকে মাস্ক রপ্তানিতে ভারত সরকারের পক্ষে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড-এর পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা বলা হয়েছে, শুধু ‘রেসপিরেটরি মাস্ক’ই নয়, বায়ুবাহিত ধূলিকণা ঠেকাতে যেসব ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি হয়, তার কোনোটাই এখন রপ্তানি করা যাবে না। এমনকি পরবর্তী নির্দেশনা না-দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবত্‍‌ থাকবে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মাস্কের বাজারে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ফুটপাত থেকে শুরু করে ফার্মেসি ও সুপারশপগুলোতে মাস্ক বিক্রি বেড়েছে। অনেক ফার্মেসিতে সুলভ মূল্যে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানিরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর থেকেই মাস্কের চাহিদা বেড়েছে। একইসঙ্গে সরবরাহও কমেছে৷

করোনাভাইরাসের আক্রমণে চীন চলছে মৃত্যুর মিছিল। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এই ভাইরসাকে। এমন কঠিনপরিস্থিতিতে ভাইরাস আটকাতে মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক করা হলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। দৈনিক ২০ কোটির বেশি মাস্কের প্রয়োজন পড়ছে। যা উৎপাদন করছে হিমশিম খাচ্ছেন উৎপাদকেরা।

চীনের নানা প্রদেশের বাসিন্দারা মাস্কের বিকল্প সহজলভ্য যে কোনো জিনিস মুখের মধ্যে সেঁটে কাজ চালাচ্ছেন
চীনের নানা প্রদেশের বাসিন্দারা মাস্কের বিকল্প সহজলভ্য যে কোনো জিনিস মুখের মধ্যে সেঁটে কাজ চালাচ্ছেন

করোনা ভাইরাসের ভয়ে রাস্তাঘাটে মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে। মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে পর্যাপ্ত সংখ্যায় মাস্কের জোগান নেই। ফলে ভাইরাস থেকে বাঁচতে অভিনব পন্থা নিয়েছেন চীনের নাগরিকরা।

উহান, সাংহাই-সহ চীনের নানা প্রদেশের বাসিন্দারা সহজলভ্য যে কোনো জিনিস মুখের মধ্যে সেঁটে কাজ চালাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবিগুলি থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কেউ বাতাবি লেবুর খোসা পরিস্কার করে, কায়দা করে মাস্ত বানিয়ে মুখ ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার পানির বোতল, স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেছেন। মারাত্মক ভাইরাস থেকে বাঁচাতে মহিলাদের মাস্ক হিসেবে মুখে অন্তর্বাস পড়তেও দেখা গিয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক কতটা কার্যকর? বিশেষজ্ঞদের মতে, ফার্মেসিতে প্রচলিত যে সার্জিক্যাল মাস্ক পাওয়া যায়, এ ধরনের মাস্ক খুব একটা কার্যকরী নয়। কারণ বাতাসে ভেসে বেড়ানো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে ঢিলেঢালা সার্জিক্যাল মাস্ক খুব বেশি সুরক্ষা দিতে পারে না। তাই বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এন ৯৫ মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!