করোনাভাইরাসেই প্রাণ গেল প্রথম সতর্ককারী ‘হিরো’ ডাক্তারের
গত বছরের ডিসেম্বরে তিনিই প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন,তাঁর হাসপাতালে ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ থাকা একগুচ্ছ রোগীর চিকিৎসা চলছে। এরপরই পুলিশের রোষে পড়েন তিনি। চীনের সেই চিকিৎসক, ৩৪ বছরের লি ওয়েনলিয়াং শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল উহানে ওই চিকিৎসক মারা যান বলে বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ১২ জানুয়ারি থেকে লি ওয়েনলিয়াং হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তার শরীরে করোনাভাইরাসের বিষয়টি ধরা পড়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি। রোগীর দেহ থেকে লির শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা যায়।
ভয়ংকর এ পরিস্থিতির মাত্র এক মাস আগেই ভাইরাসটির মহামারী নিয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার হুশিয়ারি দিয়েছিলেন লি ওয়েনলিয়াং। সেই হুশিয়ারি তখন পাত্তাই দেয়নি সরকার। উল্টো তাকে ভয় দেখিয়ে মুখবন্ধ করে দেয় উহান পুলিশ। সেই ডাক্তারকেই এখন ‘হিরো’র আসনে বসাচ্ছে পুরো চীন।
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর সংগ্রহ করা হচ্ছিল। করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং সহকর্মী ডাক্তারদের সতর্ক করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সে সময় তাকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি পুলিশ তাকে শাসিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। এক মাস পরে সেই চিকিৎসকই সবার কাছে হিরো হয়ে উঠেছেন।
হাসপাতালের বিছানা থেকে চিকিৎসক লি চীনের সোশ্যাল মিডিয়াতে ওয়েবোতে জানিয়েছেন সেসব কথা। ওয়েবোর পোস্টে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি লি ওয়েনলিয়াং। উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ।’ চিকিৎসক লি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে কাজ করছিলেন। সে সময় তিনি সাতজনের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখতে পান।
জানুয়ারির গোড়ায় এক মহিলার গ্লকোমার চিকিৎসা করেন লি। তিনি জানতেন না, ওই মহিলার দেহে থাবা বসিয়েছে ভাইরাস। সেই সংক্রমণই শেষ পর্যন্ত প্রাণ কেড়ে নিল তাঁর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপেক্ষাকৃত কম বয়সের জন্যই এত দিন রোগের সঙ্গে যুঝতে পেরেছিলেন লি।
এ চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর নিয়ে চীনা গণমাধ্যম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয় । বিবিসি বলছে, চীনের গ্লোবাল টাইমস প্রথমে লির মৃত্যুর খবর দেয়, পরে তা প্রত্যাহার করে বলে ওই চিকিৎসক সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। চীনের পিপলস ডেইলিও লির মৃত্যুর খবর জানিয়ে টুইট করেছিল।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারীতে নাজুক পরিস্থিতি চীনের। একদিকে শত শত মানুষের মৃত্যু, আরেকদিকে বিশ্বে আর্থ-সামাজিকভাবে প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে দেশটি।
বুধবার ৩০ ঘণ্টার শিশুর দেহেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। এত দিন যাঁদের দেহে করোনাভাইরাসে উপস্থিতি মিলেছে, তাঁদের গড় বয়স ৪৯ থেকে ৫৬ বছর। একটি-দু’টি শিশুর দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিললেও সদ্যোজাতের দেহে এই প্রথম।
প্রসবের আগেই বাচ্চাটির মায়ের রক্তে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। গর্ভেই সংক্রমণ হয়েছে, নাকি বাচ্চাটি জন্মানোর পর সংক্রমণের শিকার, তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা।