করোনায় বেতন ছাড় দিয়েছেন বিমানসংস্থার যেসব প্রধান কর্তা
এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য সময়টা বেশ অস্থিতিশীল। নগদ না হারানোর আশঙ্কায় অনেকে সংস্থায় কর্মীদের ছাটাই করছে অনেকে কর্মীদের পাঠাচ্ছে অনাদায়ী ছুটিতে। তবে এসব সংস্থা কর্তারা কেমন আছেন সে খবর জানে না অনেকেই। কথায় আছে নেতৃত্ব তাকেই বলে যেটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। ত্যাগ, ধৈর্য আর বিশ্বাসে অটুট থেকে নেতা হাল ছাড়ে না দূর্যোগেও। তেমনি করোনাকালেও এভিয়েশন খাতের অনেক নির্বাহী কর্তা বিনা বেতনে খেটে প্রতিষ্ঠানের হাল ধরে রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। ফক্স বিজনেস নিউজের এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে এমনই সব প্রধান কর্তার কথা।
এই তালিকায় যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে বিশ্বের অনেক নামকরা বিমানসংস্থা থেকে শুরু করে ছোটখাট বিমানসংস্থার সিইও রয়েছেন। আসুন জেনে নেয়া যাক এই সংকটে এভিয়েশন খাতের এসব নেতাদের কিছু দৃষ্টান্তের কথা।
এয়ারএশিয়া সিইও টনি ফার্নান্ডেজ়: গত এপ্রিলে মালয়েশিয়ার লাে-কস্ট বিমানসংস্থা এয়ারএশিয়ার সিইও টনি ফার্নান্ডেজ় ঘোষণা দিয়েছিলেন এমন সংকটের সময়ে তিনি ও প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান কামারুদ্দিন মেরানুন কোন বেতন নিবেন না। সংস্থাটির অন্যান্য কর্মীরা সাময়িকভাবে বেতন কর্তনের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের চাকরির জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে ১৫ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অস্থায়ী বেতন হ্রাস করা হয়েছে।
এয়ারবাল্টিক সিইও মার্টিন গাউস: লাটভিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা এয়ারবাল্টিকের প্রধান কর্তা গাউস ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এই সংকটে তার মাসিক ১০ লাখ ৪২ হাজার ডলারের বেতন নিবেন না।
এয়ার কানাডা সিইও ক্যালইন রোভিনেস্কু: কানাডার রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা এয়ার কানাডার একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে রোভিনেস্কু এবং সংস্থার ডেপুটি সিইও মাইকেল রুসো তাদের বেতনের শতভাগই মাফ করে দিয়েছেন।
আলাস্কা এয়ারলাইন্স সিইও ব্র্যাড টিলডেন: যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ বিমানসংস্থা আলাস্কা এয়ারলাইন্সের সিইও ব্র্যাড তিলডেন ও বিমান সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট বেন মিনিসুক্কি উভয়েই তাদের নিট বেতনের শতাভাগই এই সংকটে ছেড়ে দিয়েছেন। ১৬ মার্চ থেকে তারা এই ঘোষণা দেন যদিও এটি কার্যকর হয়েছিল ৭ মার্চ থেকে।
ডেল্টা সিইও এড বাস্তিয়ান: মার্চ মাসের প্রথম দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ বিমানসংস্থা ডেল্টার সিইও তার সংস্থার কাছে লিখিতভাবে জানান, “আমি আমার বেতনের ১০০ শতাংশ এখন থেকে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত গ্রহণ করব না। ” সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বলেছেন যে ডেল্টার কর্মকর্তা পর্যায়ের যারা তারা তাদের বেতনের ৫০ শতাংশ নিচ্ছেন আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকরা নিচ্ছেন তাদের মূল বেতনের ২৫% কম।
এমিরেটস প্রেসিডেন্ট স্যার টিম ক্লার্ক: দুবাইভিত্তিক এই ক্যারিয়ারের প্রধান জানিয়েছেন, মার্চ মাসের শেষ থেকে পরবর্তী তিন মাসের জন্য তিনি তার বেতন ছেড়ে দিবেন।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ সিইও অ্যালেক্স ক্রুজ: গত মার্চ মাসের শুরু থেকে দুই মাসের জন্য নিজের বেতন পুরোপুরি না নেয়া ঘোষণা দেন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ প্রধান। অর্থাৎ এই মাসের শেষে তার সেই সিদ্ধান্তের মেয়াদ শেষ হবে। যদিও তিনি তার বেতন-ভাতা সামনের মাস থেকে আবার নিবেন কিনা তা নিয়ে নতুন কোন ঘোষণা দেননি এখনো।
জাজিরা এয়ারওয়েজ সিইও রোহিত রামচন্দ্রন: কুয়েতের লো-কস্ট বিমানসংস্থা জাজিরা এয়ারওয়েজের এই সিইও একেবারেই কোন বেতন নিচ্ছেন না, যদিও ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ের যারা তারা ফেব্রুয়ারি থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়ে বেতন নিয়েছেন।
কান্তাস এয়ারওয়েজ সিইও অ্যালান জয়েস: কানাডার রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা কান্তাস এয়ারওয়েজের সিইও অ্যালান জয়েস বছরের বাকি সময়ে তাঁর ১৫.৫ মিলিয়ন ডলারের বেতন ছুঁয়েও দেখবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি চেয়ারম্যান রিচার্ড গোয়েদার মত এভাবে বেতন না নিয়ে থাকছেন যদিও উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকেরা এবং বোর্ড সদস্যরা ৩০% ছাড়ে বেতন নিচ্ছেন।
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স সিইও স্কট কিরবি: মার্চের ১০ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে কোন বেতন নিচ্ছেন না কিরবি। এটি পুরো বছরজুড়ে বলবৎ থাকবে। তিনি মার্চের ১৬ থেকে সিইও হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেন। এদিকে সংস্থার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্রেট হাট তাঁর বেতনের ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছেন। যদিও মে মাসের ২০ তারিখ থেকে তিনি সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার কথা রয়েছে আর সেক্ষেত্রে তাঁর বেতনের শতভাগ ছাড় দিতে হবে।
আমেরিকান এয়ারলাইন্স সিইও ডগ পার্কার: এই ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ব্যাতিক্রম। এই এয়ারলাইন্সের সিইও ডগ পার্কার বেশ কয়েক বছর আগেই তাঁর বেতন না নেয়ার ঘোষণা দেন। এর পরিবর্তে তাঁকে দেয়া হয় ইকুইটি অ্যাওয়ার্ডস বা লভ্যাংশের পুরস্কার। এ জন্য তিনি বেতনের পরিবর্তে কোম্পানির সীমাবদ্ধ স্টক এবং কাজের দক্ষতা অনুযায়ী লভ্যাংস পান।
যেসব কর্মকর্তা তাদের বেতনের শতভাগ ছাড় দেননি
ওপরের তালিকায় অনেক বিমান সংস্থার কর্তাদের কথা আসেনি। কিছু ক্ষেত্রে অনেক কর্তা তাঁদের বেতনের একটা অংশ রাখবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ ছাড় দিচ্ছেন ১০ শতাংশ আবার কেউ দিচ্ছেন ৮০ শতাংশ। এই যেমন সাউথ ইস্ট এয়ারলাইন্সের গ্যারি কেলি ছাড় দিচ্ছেন তাঁর বেতনের ১০ শতাংশ আর নিউজিল্যান্ড এয়ারের গ্রেগ ফোরলান ছাড়ছেন বেতনের ১৫ শতাংশ। কেনিয়া এয়ারওয়েজের সিইও অ্যালান কিলাভুকা ছাড়ছেন তাঁর বেতনের ৮০ শতাংশ। ওয়স্টজেটের এড সিমমস এবং এক্সিকিউটিভ টিম এবং রাইয়ানএয়ারের মাইকেল ও লিয়ারি তাদের বেতনের ৫০ শতাংশ গ্রহণ করছেন।
যেসব বিমানসংস্থার কর্মকর্তারা তাদের বেতনের ২০ শতাংশ ছাড়ছেন তারা হলেন: এরোমেক্সিকোর আন্দ্রেজ কনেসা, আইএজি-র উইলি ওয়ালশ, জেটব্লুর রবিন হায়েস, কেএলএমের পিটার এলবার্স, ভার্জিন আটলান্টিকের শাই ওয়েইস
এদিকে লুফথানসার সিইও কারস্টেন স্পোর তার বেতন ছাড় দিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও সংস্থার উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন তারা তাদের ২০% ছাড়ে বেতন পাচ্ছেন।
এয়ার ফ্রান্স-কেএলএম প্রধান বেন স্মিথ, তার বেতনের ২৫% কম নিচ্ছেন যেখানে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের গোহ চোন ফুং এবং ক্যাথে প্যাসিফিকের অগস্ত্য তাং দুজনেই তাদের বেতনের ৩০% ছাড় দিচ্ছেন।
যারা এখনো বেতন নিচ্ছে তাদের সাথে এদের তুলনা করে বিষয়টি বিচার করা জটিল। যদিও যারা নিচ্ছেন না তাদেরও পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে হয়। যদিও এক্ষেত্রে এই কথা নিশ্চিত যে বিমানসংস্থার নীচের পর্যায়ে যাঁরা কর্মরত রয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই আর্থিক সংকটের কাছাকাছি থাকেন তাই তাদের বেতন পাওয়াটা অনেক জরুরি।